Type Here to Get Search Results !

মানুষ হয়ে ওঠার ১২ তত্ত্ব, তবে সবই ভুল!


প্রায় ৬০ লাখ বছর আগে নিকট আত্মীয় গ্রেট এপ বা মহান বানর (শিম্পাঞ্জি) থেকে আলাদা হয়ে মানব বা হোমো জেনাসের সূচনা। এরপর লাখ লাখ বছরের বিবর্তনের ধারায় আমাদের আধুনিক প্রজাতির মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্সদের উদ্ভব এবং পুরো পৃথিবীর নেতৃত্ব গ্রহণ  ঠিক কোন কোন গুণাবলী স্যাপিয়েন্সকে সমস্ত প্রাণীজগতের মধ্যে অনন্য বা আমাদের পূর্বপুরুষদের মানুষ করে তোলেকখনকিভাবে এবং নির্দিষ্ট কি কি অর্জন করেছিল তারা?
গত শতকজুড়ে মানুষের এ বিবর্তন সম্পর্কে ১২টি তত্ত্ব দেওয়া হয়যেগুলোকে এখন ভুল বলেও উল্লেখ করছেন বিজ্ঞানীরা। বানরশিম্পাঞ্জি ও ওরাংওটাং বা বনমানুষসহ প্রাইমেট প্রজাতিগুলোর মধ্যেও সেসব গুণাবলী আংশিক হলেও দেখতে পেয়ে সেসব তত্ত্ব বাতিল করা হয়
মানুষ হয়ে ওঠার প্রথম তত্ত্ব হচ্ছেপাথরের অস্ত্র আবিষ্কার ও তার ব্যবহার। হোমো হ্যাবিলিস প্রজাতি ২৮ লাখ বছর আগে প্রথমবারের মতো এ অর্জন করেযাকে নৃতত্ত্ববিদ কেনেথ ওয়েকলি ১৯৪৪ সালে ও ১৯৬০ সালে লুই লিকি মানুষের অনন্য আবিষ্কার বলে উল্লেখ করেছিলেন।  কিন্তু লাঠি ও বিশেষ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য পাথরের রুপায়ণ মানুষের প্রথম তৎপরতা ছিল না বলে জানান জেন গুডঅলসহ অন্য গবেষকরা। তাদের মতেশিম্পাঞ্জিরাও লাঠি ব্যবহার করে ভূ-গর্ভস্থ পোকা-মাকড় ও মাছ খুঁজেএমনকি কাক মেরে খেতে শেখে আগে থেকেইযা তাদের হাতের অভাব মেটায়
নৃ-তত্ত্ববিদ রেমন্ড ডার্ট বলেছিলেনআমাদের পূর্ববর্তী বনমানুষরা মাংসাশীশিকারি ও খুনি প্রাণীতে পরিণত হওয়ায় মানুষ তাদের চেয়ে ভিন্ন বলে বিবেচিত হয়। শিকার করা প্রাণীদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন ও ভেঙে খাওয়া এবং তাজা রক্ত দিয়ে তৃষ্ণা মেটানো উল্লুকদের হটিয়ে বুদ্ধিমত্তাই তাদেরকে নেতৃত্বে বসায়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পর ডার্টের এ হত্যাকারী উল্লুক তত্ত্ব পরিত্যক্ত হয়।   


১৯৬০ সালে নৃ-তত্ত্ববিদ গিলিন ইসহাক বলেনশিকার করা মাংস পুরো কমিউনিটির সঙ্গে ভাগ করা এবং সামাজিক আচরণ উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষ নেতৃত্বে চলে যায়। কিন্তু অনেক প্রাণীই এ কাজ করে। আবারটিভি তথ্যচিত্র লেখক ইলেইন মরগ্যান দাবি করেনআমাদের পূর্বপুরুষরা ভিন্ন পরিবেশ বা পানির কাছাকাছি প্রসূত হওয়ায় অন্যান্য প্রাইমেটদের থেকে ভিন্ন হয়। শরীরের চুল কমে যাওয়া তাদেরকে দ্রুত সাঁতারু হিসেবে তৈরি করেযখন দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে শেখে তারা। জলজ বনমানুষ নামের এ হাইপোথিসিসও প্রত্যাখ্যান করেন বিজ্ঞানীরা
প্রত্নতত্ত্ববিদ রিড ফেরিংয়ের বিশ্বাসআমাদের পূর্বপুরুষরা মানুষে পরিণত হয়যখন তারা উচ্চবেগে পাথর নিক্ষেপের ক্ষমতা অর্জন করে। কিন্তু জর্জিয়ার ১৮ লাখ বছর বয়সী হোমিনিন সাইটে শিকারি হোমো ইরেক্টাসদের জীবাশ্ম পরীক্ষা করে দেখা গেছে যেতারা সিংহের আক্রমণে নিহত হয়। কিন্তু প্রাণীগুলোকে তাড়িয়ে দেওয়ার লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। সুতরাংপাথর নিক্ষেপের ক্ষমতাও মানুষকে রক্ষা করতে পারেনি। নৃ-বিজ্ঞানী শেরউড ওয়াশবার্ন ও সি এস ল্যানচেস্টার ১৯৬৮ সালে যুক্তি দেনবাস্তব অর্থে আমাদের বুদ্ধিস্বার্থআবেগমৌলিক সামাজিক জীবনশিকার,অভিযোজন- সব সাফল্যের মূলে ছিল বিবর্তনীয় বড় মস্তিস্ক। এটি সেক্স ছাড়াও নারীদেরকে শ্রম বিভাজন ঘটিয়ে নেতৃত্বে আসীন করেছে মানুষকে। এ তত্ত্ব প্রশ্ন উত্থাপন করেতাহলে নারীদেরও বড় মস্তিস্ক কেন আছে?


আধুনিক বিজ্ঞানীরা এসব তত্ত্বের বিরোধিতায় বলেনআমাদের পূর্বপুরুষেরা এসব গুণাবলী নতুন করে অর্জন করেনি। তারা শুধু আমাদের প্রথম আদি প্রজাতি হোমো অস্ট্রালোপিথেকাস থেকে শুরু করে সরাসরি পূর্বপুরুষ হোমো ইরেক্টাস হিসেবেই বেঁচে ছিল। আর কোনো একক বৈশিষ্ট্য তারা অর্জন করেনিযা মানুষ হয়ে ওঠার একটি টার্নিং পয়েন্ট ছিল। কারণসেখানে কিছু পরিণতি অনিবার্য ছিল। অস্ত্র তৈরিপাথর ছোড়ামাংস ও আলুখাদকসমবায় ভিত্তিক অভিযোজনবড় মস্তিষ্ক ও হত্যাকারী উল্লুক বৈশিষ্ট্য আমাদেরও আছে এবং এখনও পরিবর্তিত হয়ে চলেছে


সৌজন্যেঃ  প্রভাস চৌধুরী,বাংলাদেশ 
           

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.