Type Here to Get Search Results !

ট্যুর ডায়েরী"...বাংলাদেশ ভ্রমণের অসাধারণ অনুভূতি নিয়ে রীণা দাসের প্রতিবেদন

বাংলাদেশ...31/07/18.(চতুর্থ অংশ)

সকাল 6.45 মিনিট ।হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে রাস্তায়।রিক্সা সাড়ি সাড়ি বেঁধে দাঁড়ানো।লোভ সামলাতে পারলাম না।উদ্দেশ্যবিহীন চেপে বসলাম একটায়।দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন।ছোটবেলা থেকেই শুনতাম  ঢাকা শহর  নাকি রিক্সার শহর।ঢাকার মাটিতে পা দিয়ে জানতে পারলাম গিনিস রেকর্ড বুকে জায়গা করে নেওয়া ঢাকা শহরের রিক্সার সংখ্যা পাঁচ লক্ষ এবং শহরের 40% লোক এই বাহনে যাতায়াত করেন।পঁয়ত্রিশ বছর ধরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এমন একজনের রিক্সায় সওয়ারী হলাম সাত সকাল বেলায়।

অনুভবের কাছে সবকিছু হার মানতে বাধ্য।মনে হল দীর্ঘদিনের পোষা শখ এবার পূর্ণতা পেল।সাজানো গোছানো ,এর বর্ণিল চিত্র সত্যিই মনোমুগ্ধকর।ইচ্ছেকে চাপতে নেই,এই ভেবে গন্তব্যহীন চড়া শেষ করে নেমে পড়লাম কমলাপুর রেল ষ্টেশন চত্বরে।গন্তব্য কক্সবাজার। 
"সোনার বাংলা" এক্সপ্রেস।উঠেই নজরে এলো ট্রেনের সিটে সাঁটানো কভার,যাতে লেখা "শেকড় থেকে শিখরে"।মনে একটা অনুরণন সৃষ্টি হলো।ছুঁয়ে গেল হৃদয়।পাশে বসা যাত্রীদের কাছ থেকে জানতে পারলাম এই শব্দ কয়টির নিগূঢ়তা।মুক্তিযুদ্ধের স্বর্ণালী ইতিহাস ধরে রাখার জন্য শহীদদের স্মৃতি ভাস্কর্য তৈরী হয়েছে পাবনার বেড়ায় "শেকড় থেকে শিকড়ে"।বাংলা ভাষার এই মাধুর্য্য মনে মেখে নিলাম। ।মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা এভাবেই কোটি কোটি বাঙালীর মনে গেঁথে দেওয়া হচ্ছে জেনে বাঙালী হিসাবে আমিও গর্বিত হলাম। 
" সোনার বাংলা" স্টেশান ছাড়ল সকাল সাতটায়।চট্টগ্রাম পৌঁছাবে বারোটায়।দূরত্ব পেরোবো 283 কি,মি।সফর সাথীর অভাব নেই ট্রেনের বাইরে ভেতরে।ঈশ্বরকে বলি, অভাব যেন না হয় দৃষ্টির।ভেতরের ছোট্ট দুটি শিশু মন কাড়ছিল বারবার,সাথে কোন এক যাত্রীর স্প্যনিশ বিড়াল ছানা।বাইরের মনলোভানো দৃশ্য সব প্রকাশ করার নয়।শুধু অনুভবে পাওয়া যায়।যেদিকে চোখ যায় কেবল সবুজ কার্পেট বিছানো অবারিত ধানক্ষেত আর নদীপাড়ের চিরায়ত মুগ্ধকর দৃশ্য।দৌড়াচ্ছে সব ,কেবল স্হবির স্মৃতিরা।সমস্ত জলাভূমি জুড়ে ছোট পানসী নাও।মন উদাস করা এসব দেখতে দেখতে কখন পৌঁছে গেলাম চট্টগ্রাম বটতলী স্টেশানে।

এবার স্বপনপুরী কক্সবাজার।মন শিহরিত।সমুদ্রের ডাক এসে কানে বাজছিল।রোমাঞ্চিত। 
বিকেল তিনটেয় আরামপ্রদ "সৌদিয়া কোচ " বাসে চাপলাম।পেরোতে হবে 160 কি,মি রাস্তা।সময় ছয় ঘন্টার মত।রওনা হলাম।শুরুতেই যানজট।ধৈর্যের বাঁধভাঙা অবস্হা।ঘন্টাখানেক এখানেই।তারপর অভূতপূর্ব দৃশ্য।কর্ণফুলি নদী।নদীমাতৃক এই দেশের নদীগুলোর নাম বড় আদুরে মায়ামাখানো।950 মি,দীর্ঘ ও 80 ফুট প্রস্হ শাহ্ আমানত সেতু চলে গেছে কর্ণফুলির বুক চিরে।নদীর বুকের অসাধারণ দৃশ্য দেখতে দেখতে রাস্তায় বাস পড়লো।যান জট কমে যাওয়ার সাথে সাথে গাড়ির বেগ বেড়ে গেল।

গাড়ির ঝাকুনিতে আধো ঘুমে আধো জাগরনে রাত নটায় পৌ়ঁছলাম গন্তব্যে।কক্সবাজার।পৌঁছেই অজিত বাবু আমাদের আত্মীয়জন , নিয়ে ছুটলেন কলাবতী রোডে লাবনী সী বীচের দিকে।নির্ধারিত থ্রী স্টার হোটেল অভিসার ওখানেই।সারাদিনের ক্লান্তিতে আর কোন কিছুর দিকে মন না দিয়ে খাওয়ার পাট চুকিয়ে হোটেলের কার্নিশে দাঁড়িয়ে একবার ফেনিল সমুদ্রের দিকে চোখ বুলিয়ে লোভ সামলাতে পারলাম না।দৌড়ে ছাদে গেলাম।দেখলাম আর মনে মনে নী্রব উচ্চা্রণ করলাম ,নীল আকাশের নীচে  সরবে প্রবহমান এই স্বর্গের নাম ই তো সমুদ্র সৈকত।যতই গর্জন করুক না কেন বালুকাবেলার বুকেই যে তাকে আছড়ে পড়তে হয়।ভাবনারা অন্তহীন।সুযোগে চেপে বসে,নিদ্ হারাম করবে।তাই প্রশ্রয় না দিয়ে এবারের মত বিছানায় গা এলানো।

প্রতিবেদকঃ রীণা দাস, শিক্ষিকা
আগরতলা, ত্রিপুরা

৬ই অক্টোবর ২০১৮ইং

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.