Type Here to Get Search Results !

অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানবধর্মের কবি কাজী নজরুলঃ আবু আলী,বাংলাদেশ

ছোট থেকেই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাম শুনে আসছি।পড়েছি তার কবিতাও। ভালো লেগেছে। বেসেছি ভালো। তথন থেকেই নজরুলকে জানার চেষ্টা করেছি। তিনি আমাদের জাতীয় কবি। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন সংগ্রামী। এ বিষয়ে তাঁর বিখ্যাত উক্তি-‘পরোয়া করিনা বাঁচি বা না বাঁচি যুগের হুযুগ কেটে গেলে’। স্বাধীনচেতা নজরুলের সংগ্রামী জীবন বাংলা ভাষাভাষী সবারই কম বেশি জানা আছে। তার জন্মক্ষণটি ইতিহাসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা পরবর্তীকালে কবি মানসে অসাম্প্রদায়িকতার প্রতিফলন ঘটে। কবির বেড়ে ওঠার সময়ে বিশ্ব রাজনীতিতে বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছিলো। এরমধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীনতা আন্দোলন। যার কারণে কবিকে আমরা কখনও বিদ্রোহী, কখনও সংস্কারবাদী, কখনও প্রেমিক পুরুষ, কখনও নবীর শান গাইতে কখনও বা শ্যামা সংগীত গাইতে দেখি। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তার অবদান বিরাট। তিনি স্বাধীনতাকামীদের রসদ জোগাতে কবিতা, গান এবং উপন্যাস লিখেছেন। ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের প্রশস্তি রচনার অপরাধে বে-আইনী ঘোষিত হয় ‘প্রলয় শিখা’, ছয় মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিতও হন তিনি। কবিতা লেখার পাশাপাশি তিনি জাতিকে উদ্ধারে তিনি সাংবাদিকতায়ও যুক্ত হয়। তিনি শুধুমাত্র ভারত বর্ষের কবি ছিলেন না। তার কর্ম ছড়িয়ে পরে বিশ্বময়। তাঁর কাব্য, গান, সাংবাদিকতা পৃথিবীব্যাপী সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পরে। তিনি সকল মুক্তিকামী মানুষেরর জন্য আলো ছড়িয়েছেন। সূর্যের মতো তিনি পৃথীবির সব অন্ধকার থেকে মুক্তির জন্য আলো ছড়িয়েছেন। তাঁর লেখনির মাধ্যমে সত্যকে উদ্ভাসিত করেছেন। মুক্তিমকামী মানুষকে করেছেন সরস আর জুলুমবাজকে করেছেন দগ্ধ। তিনি স্বাধীনতার পাশাপাশি সব সময় ন্যায়, সত্য ও মানবতাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তিনি জীর্নতা, জড়তা এবং সংকীর্নতার ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করেছেন। কবির ভাষায়-‘আমি এই দেশে এই সমাজে জন্মেছি বলেই শুধু এই দেশের এই সমাজের নই। আমি সকল দেশের সকল মানুষের সুন্দরের ধ্যান, তার স্তব গানই আমার উপাসনা, আমার ধর্ম। যে কুলে, যে সমাজে, যে ধর্মে যে দেশেই জন্মগ্রহণ করি, সে আমার দৈব। আমি তাকে ছাড়িয়ে উঠতে পেরেছি বলেই কবি’। নজরুলের সারা জীবনের সংগ্রাম ছিলো ধর্মীয় মৌলবাদের বিপক্ষে। তিনি বারবার তার কবিতায়, গানে, গল্পে লিখে গেছেন যে ধর্মীয় শক্তি মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে বা পরস্পরের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে, তা ধর্ম নয় অধর্ম। সংগ্রাম করেছেন সেই অপশক্তির বিরুদ্ধে। তিনি মনে করতেন অসাম্প্রদায়িকতা মানে ধর্মহীনতা নয়, বরং সকল সম্প্রদায়ের ধর্মমতকে শ্রদ্ধা করা। কবি তাই অসাম্প্রদায়িক চেতনার মাধ্যমে বারংবার মানবধর্মের কথাই বলেছেন। তিনি বারবার বলেছেন মানবধর্মের উপরে কিছু নেই। তাই লিখেছেন: “মানুষেরে ঘৃণা করি ও’ কারা কোরান, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি মরি! ও’ মুখ হইতে কেতাব গ্রন্থ নাও জোর করে কেড়ে যাহারা আনিল গ্রন্থ-কিতাব সেই মানুষেরে মেরে। পূজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল! -মূর্খরা সব শোনো, মানুষ এনেছে গ্রন্থ;- গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো।” নজরুল জন্মসূত্রে ভারতীয়, ধর্মে মুসলিম। দুই ভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যেই তার বেয়ে ওঠা, বড় হয়ে ওঠা। ছোটবেলায় মুয়াজ্জিনের কাজ আর মক্তবে পড়ে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে যেমন জেনেছেন আবার ঠিক তেমনি যখন লেটো গানের দলে যোগ দিলেন তখন শিখলেন জানলেন রামায়ণ-মহাভারত-ভাগবত আর পুরাণ। দুটো ধর্মকেই মোটামুটি নিবিড়ভাবে জানতে পেরেছিলেন বলেই তিনি এক হাত দিয়ে লিখতে পারতেন গজল আর ইসলামি গান, আবার ঐ একই হাতে লিখতেন শ্যামা সঙ্গীত, ভজন আর কীর্তন অঙ্গের গান। পরবর্তীতে তিনি যখন প্রমীলা দেবীকে বিয়ে করেন তখন তিনি হিন্দু ধর্মের আরও খুঁটিনাটি বিষয় জানতে পারেন। যে কারণে তার গানে আমরা বিভিন্ন মিথের ব্যবহার দেখতে পাই, গোপ-গোপিনীর প্রেমের কথা জানতে পারি। নজরুলের ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগদান এবং করাচীতে বসবাস এবং সেই সূত্রে ওমর খৈয়াম ও রুমির সাহিত্যকর্মের সঙ্গে পরিচয় তার জীবনে বড় প্রভাব ফেলে। আবার করাচী থেকে ফেরার পরে কলকাতাতে কমিউনিস্ট নেতা মুজফফর আহমদ ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের সাহচর্য তাকে মানবধর্মের এক নতুন পথের সন্ধান দেয়। বিদ্রোহী কবি প্রত্যক্ষভাবে রাজনৈতিক সংগ্রাম করেছেন ইংরেজ শাসনশক্তির বিরুদ্ধে। এরপর বাংলাদেশ যখন পাকিস্তানী নব-উপনিবেশায়নের বিরুদ্ধে গর্জন করে উঠল, তখনও নজরুল এসে দাঁড়ালেন এখানকার গণমানুষের মিছিলের সামনের সারিতে। বাংলা সাহিত্যে নজরুলের সাথে তুলনা করা যায় এমন কোনো কবি কোনো সময়ই খুঁজে পায়নি পাবেও না। সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছিল বিদ্রোহী ও বিপ্লবী কবি কাজী নজরুলের রচনা। বিদ্রোহী কবিতার সুর দুর্জয় আত্মোপলদ্ধির। নীপিড়িত জনসাধারণকে জাগ্রত করার পাশাপাশি তিনি তাদের প্রতি দরদ দেখাতেও কার্পন্য করেননি। বাংলাদেশও কবরি কাছে ঋণী। এজন্যই হয়ত বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২সালে কবিকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।

আবু আলী,বাংলাদেশ

২৯শে আগস্ট ২০২০

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.