গত ৩রা মার্চ ত্রিপুরা রাজ্যের লাখ লাখ মানুষের বুক থেকে দীর্ঘ ২৫ বছরের জগদ্দল পাথর যেমন নেমেছে তেমনি রাজ্যের ভাগ্যাকাশে নতূন সূর্য উদিত হয়েছে। ‘চলো পাল্টাই’ এই শব্দবন্ধটি যেন ৮ থেকে ৮০ সবার কাছে দীর্ঘদিনের জ্বালা- যন্ত্রণা, অপশাসনের হাত থেকে মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছিল। আজ যখন লিখছি তখন বিজেপি- আইপিএফটি নেতৃত্বাধীন সরকার চার মাসে পা দিল। পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হওয়া সরকারের পারফরম্যান্স নিয়ে পাঁচ মাসের আগে আলোচনা করা স্বাভাবিকভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়, তা সত্বেও ‘চলো পাল্টাই’ এর মৌলিক কিছু দিক নিয়ে আলোকপাত করা বোধ করি অমূলক হবে না।
প্রথমেই বলতে হয় রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের কথা। দীর্ঘ ২৫ বছরে চারিদিকে কর্মসংস্থানের প্রশ্নে রাজ্যের যুব সমাজ স্বপ্ন দেখতে একপ্রকার ভুলেই গিয়েছিল। একটা ‘স্টিরিও টাইপ’ ধারণা সবার মনে বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল যে, সরকারী চাকুরী পেতে গেলে মেলারমাঠের লাল বাড়ির আশীর্বাদ অতি আবশ্যক। এই ‘আশীর্বাদ’ ছাড়া সরকারী চাকুরী পাওয়া শুধু মুস্কিলই নয় না-মুমকিন (অসম্ভব) ও বটে। বাস্তব সত্যও এটাই ছিল। একটা সদ্য স্কুলের গন্ডী অতিক্রম করা ছাত্র মেরিট এর ভিত্তিতে যে একটা সরকারী চাকুরী পেতে পারে, এমন ভাবনা তার কষ্ট-কল্পনাতেও ছিল না। কিন্তু আজ সরকার পাল্টেছে। নিয়োগ নীতি পাল্টেছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যুব সম্প্রদায়ের চিরাচরিত ধারণা ও পাল্টেছে। আজ যে কোন একজন যুবক, যার রাজনীতির সাথে দূর দূরান্তের কোন সম্পর্ক নেই সেও স্বপ্ন দেখতে শিখছে, প্রত্যাশার জাল বুনতে শুরু করেছে। এখন আর কোন রাজনেতাদের পিছন পিছন লাইন দিতে হবে না। এলাকার ‘টুনু- পল্টূ – কেল্টূ’ নেতাদের চাকুরীর ললিপপ দেখিয়ে যুবকদের মিছিলে হাঁটাবার দিন এখন অতীত। এখানেই ‘চলো পাল্টাই’ এর ফলিত সার্থকতা।
আগে পার্টি আর প্রশাসন যে দুটো আলাদা বিষয় সেই বোধটাই মানুষের মন থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। গোটা সমাজটাকে রীতিমত একটা “পার্টি সোসাইটি” তে পরিণত করা হয়েছিল। পাড়ার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হোক, পুজো হোক, জায়গা ক্রয়- বিক্রয় হোক কিংবা এনআরইজিএস প্রকল্পে কাজ পাওয়া, বিপিএল কার্ড প্রাপ্তি, আবাস যোজনার বেনেফিসিয়ারী হওয়া ; সবেতেই আপনাকে ‘আমাদের লোক’ অর্থাৎ পার্টির লোক হতে হবে। আজ এই সমস্ত বিষয় থেকে ত্রিপুরা একটু একটু করে বেরিয়ে আসছে। সরকার কিংবা প্রশাসনের সুযোগ সুবিধা পেতে হলে এলাকার শাসক দলীয় রাজনৈতিক দলের অফিসে ছুটতে হয় না। সরাসরি প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা এখন সহজলভ্য। এটা নিঃসন্দেহে একটা সামাজিক বিবর্তন বা পরিবর্তন( রিফর্ম)। এই পাল্টে যাওয়াটাই তো “চলো-পাল্টাই”। এভাবেই ত্রিপুরা পাল্টাচ্ছে।
লেখকঃ মৃণাল কান্তি দেব, মুখপাত্র
প্রদেশ বিজেপি, ত্রিপুরা
২৫শে জুলাই ২০১৮ইং