মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেখতে চান আবুল হাশেম শেখ। স্বীকৃতি পাওয়ার মতো প্রয়োজনীয় সবরকম দালিলিক প্রমানাদি রয়েছে তার। সেগুলো পরম যত্নে আগলে রাখেন তিনি। বয়সের ভারে শরীরে বার্ধক্যের ছাপ। জরাজীর্ণ দোচালা টিনের ঘরে স্ত্রীকে তার বাস। অভাবের সংসার চলেনা। তাইতো স্ত্রী মহিরণকে ভিক্ষাবৃত্তি করতে হয় দুয়ারে দুয়ারে। ভিক্ষার সামান্য সাহায্য দিয়ে কোনোদিন দুই বেলা, আবার কোনোদিন না খেয়েও থাকতে হয় তাদের। দেশ স্বাধীনের পর সুদীর্ঘ ৪৭ বছর পার হয়ে গেলেও আজও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ।
বাংলাদেশের মাগুরা জেলাধীন মহম্মদপুর উপজেলার দীঘা ইউনিয়নের পাল্লা গ্রামের মৃত: আবদুল জব্বার শেখের ছেলে আবুল হাশেম শেখ । যিনি একাত্তরের দামামায় ফরিদপুরের কামারখালীতে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ ও করমর্দন করেন।
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে আবুল হাশেম শেখ স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েন। রক্তাক্ত রণাঙ্গনে অংশ গ্রহণ এবং সতীর্থদেরকে নানাভাবে সহযোগিতার কথা স্বীকার করছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। মহম্মদপুর ও শালিখা বাহিনীর যুদ্ধকালীন আঞ্চলিক অধিরায়ক বীরপ্রতীক গোলাম ইয়াকুব মিয়া কর্তৃক প্রদত্ব সনদপত্রসহ অন্যান্য দালিলিক প্রমানাদি রয়েছে আবুল হাশেম শেখের।
একাত্তরে তিনি নৌকায় করে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে বেড়াতেন। পাহারা দিতেন নৌকায় রাখা যুদ্ধেও সামগ্রী। পানি ও খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নানানভাবে সহযোগিতাও করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে সুদীর্ঘ ৪৭ বছর আগে। ৪ দশকের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মেলেনি আবুল হাশেম শেখের। অথচ স্বীকৃতি পাওয়ার প্রয়োজনীয় সবরকম তথ্য-প্রমাণ ও দালিলিক কাগজপত্র রয়েছে তার। তাহলে এ দায় কার? কার এ লজ্জা?
মৃত্যুর আগে তিনি মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেখতে চান। বিভিন্ন সনদ ও প্রত্যয়নসহ দালিলিক কাগজপত্র পরমযত্নে আগলে রাখেন আবুল হাশেম শেখ।
বছরের অধিকাংশ সময় অসুস্থ্য থাকেন ৯৩ বছর বয়সী আবুল হাশেম শেখ। ৪ শতাংস জমির উপর জরাজীর্ণ মাথা গোজার ঠাঁই। জীর্ণ কুটিরে স্ত্রী মহিরণ বেগমই তার একমাত্র ভরসা। মানুষের দুয়ারে দুয়ারে হাত পেতে স্ত্রীর ভিক্ষে করে আনা সামান্য অর্থ, চাল-ডাল দিয়ে কোনোরকম চলে অভাবের সংসার।
ক্ষোভের সাথে আবুল হাশেম শেখ বলেন, ‘মরার আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেকতি পারলিউ শান্তি পাতাম’।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (সাবেক) আলী রেজা খোকন বলেন, হাশেম শেখ মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন, এটা সঠিক। তবে তিনি কেনো তালিকাভুক্ত হতে পারেননি সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদেও প্রশাসক মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান বলেন, যেতেু আদালতের নির্দেশে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে, সেহেতু আপাতত কিছুই করার নেই। তবে প্রক্রিয়া শুরু হলে সংশ্লিষ্ট কমিটির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদনঃ এস আর এ হান্নান, বাংলাদেশ
বিশিষ্ট সাংবাদিক, উপদেষ্টা(আরশিকথা)
ছবিঃ সৌজন্যে এস আর এ হান্নান
৮ই আগস্ট ২০১৮ইং
অনুসন্ধানী প্রতিবেদনঃ এস আর এ হান্নান, বাংলাদেশ
বিশিষ্ট সাংবাদিক, উপদেষ্টা(আরশিকথা)
ছবিঃ সৌজন্যে এস আর এ হান্নান
৮ই আগস্ট ২০১৮ইং