শহুরে জীবনে কোকিলের ডাক শোনা যাক বা না যাক, অশোক, পলাশের বাহারি রঙ দেখে মুগ্ধ হবার সুযোগ আমরা পাই বা, না পাই -- বসন্তের আগমণ আমাদের বাঙালি মনে চলতে থাকে রূপ থেকে রূপান্তরে --সংস্কৃতির হাত ধরে। বসন্তকাল মানেই মনের কোনে জেগে ওঠা আবিরের রঙে সাজানো বিশাল এক খুশির আকাশ। বাতাসে কান পাতলেই যেন শুনি --
"ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান
তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান
সাত-সমুদ্রের ওপারের দেশ আমেরিকার একটি ব্যস্ততম শহর আটলান্টা। আমাদের এই প্রবাসী জীবনে নানা দেশের নানা ভাষার, নানা সংস্কৃতির প্রভাব সত্বেও আমাদের সচেষ্ট প্রয়াস থাকে বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বিদেশের বুকে নিজেদের গড়া স্বপ্নের স্বদেশে জুড়ে দেবার। এর পেছনে যে উৎসাহটা কাজ করে তা হলো দেশের প্রতি আমাদের ভালোবাসার টান, আর, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে বাংলার সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা। এমনি একটি প্রয়াস নিয়ে আমার বান্ধবী ঋচা সরকার গত বছর থেকে আটলান্টায় হোলির উদযাপন হিসেবে শুরু করে 'বসন্ত উৎসব'--শান্তিনিকেতনের স্টাইলে।
আমার মতো হয়তো অনেক বাঙালি রয়েছেন যারা শান্তিনিকেতনের বহু জনপ্রিয় 'বসন্ত উৎসব'এর নাম এবং ইন্টারনেটে তার বাহারি রঙে সাজানো বসন্তের সমারোহ দেখলেও -- ওই বিশেষ সময়টিতে শান্তিনিকেতনে থেকে তার উদযাপনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান নি। তাই আমার মতো অনেকের কাছে আটলান্টায় দোলপূর্ণিমার এই নতুন সংযোজন নিয়ে এসেছে অনেক খুশি। পুরুষ, মহিলা, এমনকি ছোটোরাও হলুদ রঙের পাঞ্জাবি, শাড়ি আর দেশি পোশাকে সেজেছে। আমরা মহিলারা খোঁপায় জড়িয়েছি ফুলের মালা।
আমার মতো হয়তো অনেক বাঙালি রয়েছেন যারা শান্তিনিকেতনের বহু জনপ্রিয় 'বসন্ত উৎসব'এর নাম এবং ইন্টারনেটে তার বাহারি রঙে সাজানো বসন্তের সমারোহ দেখলেও -- ওই বিশেষ সময়টিতে শান্তিনিকেতনে থেকে তার উদযাপনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান নি। তাই আমার মতো অনেকের কাছে আটলান্টায় দোলপূর্ণিমার এই নতুন সংযোজন নিয়ে এসেছে অনেক খুশি। পুরুষ, মহিলা, এমনকি ছোটোরাও হলুদ রঙের পাঞ্জাবি, শাড়ি আর দেশি পোশাকে সেজেছে। আমরা মহিলারা খোঁপায় জড়িয়েছি ফুলের মালা।
বিদেশের কর্মব্যস্ত জীবনে ধর্মীয় বা সামাজিক যেকোনো উদযাপনের একমাত্র ভরসা সপ্তাহ-শেষের দু'টো দিন। এবারেও তাই হলো। বসন্ত উৎসব আমরা পালন করলাম ২৩শে মার্চ, শনিবারে। এখানকার এক মন্দিরের মাঠে সকাল ন'টায় মিষ্টি, আবির, বিভিন্ন রকমের বাদ্যযন্ত্রসহ উৎসাহী অনেক বাঙালি পরিবার আমরা একসাথে হলাম। সবাইকে কমবেশী আবিরের রঙ লাগানো হবার পর শুরু হলো রবীন্দ্রসংগীত আর সেই গানের সাথে নাচ। সদ্য শীত শেষের সকালকে মাতিয়ে দিয়ে সবাই গেয়ে উঠলো --- "ওরে গৃহবাসী,, খোল দ্বার খোল, লাগলো যে দোল ---!" আমরা কয়েকজন সেই গানের সাথে নাচলাম। পরপর চলতে লাগলো গান আর সেই গানের আমেজে, নাচের তালে, আকাশে ওড়ানো আবিরের রঙে, এমনি একটা পরিবেশ গড়ে উঠলো---মনে হলো বিদেশের মাটিতে আমরা পেলাম অনেক খুশির এক টুকরো শান্তিনিকেতন, আর তার ছায়া-বিছানো পথ ধরে হলুদ শাড়ি পড়ে, ভেসে আসা সুমধুর গানের সাথে আমরা নেচে বেড়াচ্ছি অক্লান্ত!