আবু আলী, ঢাকা ॥
গত এক মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে দুই শতাধিক লোক বিজিবির হাতে আটক হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে। বলা হয়, এনআরসি আতঙ্কে ভারতীয় এসব নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, পুশ ইনের খবর মিডিয়া থেকে শুনছি, এখনো সরকারিভাবে জানি না। পত্র-পত্রিকায় যা বের হয় এর কিছু সত্য, কিছু মিথ্যা আর কিছু অতিরঞ্জিত। আমাদের জানতে হবে। পুরোপুরি ইস্যুটা বুঝতে হবে। সরকারিভাবে জানলে এ বিষয়ে কথা বলতে পারব।
বিদেশমন্ত্রী বলেন, আমি ঠিক বুঝি না, (এনআরসির আতঙ্কটা আমাদের হবে কেন? এনআরসির তালিকা করতে প্রায় ৩৪ বছর লেগেছে। এখনো অনেক প্রক্রিয়া বাকি আছে। আর ভারতীয় সরকার বারবার আমাদের ওয়াদা দিয়েছে, ভারতের এনআরসি তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা বাংলাদেশে কোনোভাবেই প্রভাব ফেলবে না।
২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে দুই দিনব্যাপী ৩৩তম সিএসিসিআই সম্মেলনে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সীমান্তে ‘পুশ ইন’ প্রসঙ্গে বিদেশমন্ত্রী বলেন, পত্র-পত্রিকায় দেখছি পুশ হচ্ছে, কিংবা ভয়ে নাকি লোকজন আসছে। আমি ঠিক জানি না, এইটা নিয়ে আমাদের আলাপ-আলোচনা করতে হবে কিনা। তবে সব দেশে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে ছোটখাটোৃ লেগেই থাকে, দেন-দরবার থাকে। তবে বড় নিউজটা হচ্ছে আমাদের বড় বড় যতগুলো সমস্যা আমরা মোটামুটি আলোচনার মধ্যে শেষ করেছি, শুধু শেষ করেছি তাই না, অত্যন্ত পরিপক্কভাবে শেষ করেছি। আমাদের উভয় দেশের মধ্যে যে ট্রাস্ট, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট অ্যান্ড কনফিডেন্স, সেটা খুব কম দেশের মধ্যে থাকে। ভারতীয় সরকারকে আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্বাস করতে চাই।
এখন তো ‘পুশ ইন’ হচ্ছে, এ ব্যাপারে ভারতীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন কিনা জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, পুশ ইন আমরা শুনছি মিডিয়া থেকে, আমরা সরকারিভাবে কিছু জানি না। ইদানীং পত্র-পত্রিকায় অনেক কিছু বের হয়, কিছু সত্য কিছু মিথ্যা। আমাদের এ ব্যাপারে পুরোপুরি জানতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, বিশেষ করে ফেসবুকে অনেক কিছু বের হয়। সরকারিভাবে না জানলে আমার বক্তব্য দেওয়া ঠিক হবে বলে মনে হয় না।
আনন্দবাজার পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী যখন পশ্চিমবঙ্গে গেলেন তাকে যথাযথভাবে অভ্যর্থনা জানানো হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, না, এইটা আমার মনে হয় না। অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে তাকে (প্রধানমন্ত্রী) গ্রহণ করেছে।
মিয়ানমারের আরও কিছু কর্মকর্তা আবারও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসতে চান, আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারে আগেই এমন প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হলে বিদেশমন্ত্রী বলেন, আমরা সবসময় উন্মুক্ত, যদি ওনারা আসতে চান আসতে পারেন। বিষয়টা হলো মিয়ানমার এই সমস্যার সৃষ্টি করেছে, মিয়ানমারকেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। সমস্যা দূর করতে তাদের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত এই কারণে যে, তাদের ট্রাস্ট বিল্ড করতে হবে। মিয়ানমার প্রায়ই আমাদের বলে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি করেছে কিন্তু রোহিঙ্গারা তো বিশ্বাস করে না। তারা যদি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করে তাদের বিশ্বাস বাড়াতে পারে উই উইল ওয়েলকাম।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে বাংলাদেশের বিষয়ে মিয়ানমার অপপ্রচার করছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, মিয়ানমার বলে যে, বাংলাদেশ না কি রেডি না রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করতে। বাংলাদেশ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, ওরা যখনই চাইবে তখনই বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করবে। তারা বলে, বাংলাদেশের জন্য নাকি প্রত্যাবাসন দেরি হচ্ছে—এটা অপপ্রচার না তো কী?
২৬শে নভেম্বর ২০১৯