উপহার আদান প্রদানের রীতি বহু পুরানো, সেই রীতি তে নতুনত্বের ছোঁয়া লাগলেও তাতে কোনো বিশেষ পরিবর্তন ঘটেনি। বরঞ্চ বলা যেতে পারে এই রীতির সাথে জড়িয়ে থাকা সুক্ষ্ম অনুভূতি ও আন্তরিকতা ধুয়ে মুছে গেছে সে কবে। পড়ে আছে বলতে গেলে সম্মানরক্ষার ব্যকুলতা, হয়তো তাই অজান্তেই এই উপহার হাত বদলাতে বদলাতে তার যাত্রাপথের যটিলতায় তটস্থ হয়ে দিকবেদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে সংসারে ফিরে আসে সেই প্রথম মালিকের কাছে। উপহার দাতার মিষ্টি হাসি ও উপহারের চকমকে ব্যপারটি দেখে এ সত্যের সন্দেহ ও হয়তো মনে আসা অসম্ভব। আমরা কেউ ভেবেই দেখিনা খামের অন্ধকারে পড়ে থাকা সেই উপহারটির কথা। ভালো করে দেখলে হয়তো সেই অন্ধকারে খুঁজে পাওয়া যায় অনেক উত্তর, কিন্তু এই ব্যস্ত মানুষদের সে সময় নেই।
তিন বছরের মেয়ে গুবাইকে খাওয়াতে বসেছে রিয়া, সামনে টিভিতে চলছে কার্টুন, দুষ্টু গুবাই মুখে ভাত নিয়েই লাফিয়ে পড়লো সোফায়। তার ছোট্ট পায়ের চাপেই রিমোটে চ্যানেলটি পাল্টে গেলো খবরের চ্যানেলে, সেই দেখে গুবাইয়ের কি কান্না। কিন্তু রিয়ার চোখ যেন টিভির স্ক্রিনেই আটকে গেছে আর তার স্মৃতির সরণী বেয়ে সে যেন হাজির হয়েছে চার বছর আগে তার বিয়ের সন্ধ্যে।
বিয়ের লগ্ন সে রাত বারোটায় রিয়ার ইচ্ছা করছিল পাশের ঘরে রাখা উপহার গুলি খুলে দেখতে, মন্ডপে এখন লোক ও কম। কিন্তু সে ঘরে পৌঁছে দেখে তার ছোট্ট ননদরা উপহার দেখার অদম্য উত্তেজনায় রঙিন র্যাপারগুলি এক প্রকার ছিঁড়ে ফেলেই বের করে দেখছে উপহারগুলি, কথাতেই আছে-'রায় বাঘিনী ননদিনী', আর হবু বৌদি হয়ে কি ছোট্ট ননদ এর মানা করা সাজে ? আর অনিচ্ছা সত্বেও ফিরে যেতে হল সেই পাশের ঘরটিতে একটি উপহার খুলতে। কি দেখে যেন মিমির মুখের সেই হাসিটা খসে গেল। উত্তেজনার উপর কাবু হয়ে মৃদু পায়ে সে রুমা দেবীর কানে কি যেন ফিসফিসিয়ে বলে জামার কোনে গোপন কুঁচি থেকে একটি কাগজ বের করে রুমা দেবীকে দেখাতেই তার চোখে সন্দেহ প্রশ্ন ও রাগ একই সঙ্গে ফুটে উঠেছে। সবার সামনে যখন সে চিঠি পড়া হল তখন চিঠিতে বর্ণিত শব্দের থেকেও সে চিঠি পাঠকের গলার অপ্রয়োজনীয় নাটকিয়তা যেন বিষয়টাকে আরো গম্ভীর করে তুলল। নতূন বউয়ের উপহারের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক চিঠি পাওয়া গেছে- কে লিখেছে নাম যদিও নেই কিন্তু এই চিঠি যে রিয়ার প্রেমিকের এ ধারণা দৃঢ় করার জন্য সেই লেখকের সঙ্গে কাটানো তার ভালোবাসার কিছু স্মৃতিচরণ, বিশ্বাসঘাতকতার কারণ- এই গুলোই ছিল যথেষ্ট। এমনিতেই রিয়ার বাবা আড়াই লাখ টাকার পণ দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিয়েছিল মাত্র ৯০ হাজার। নতুন বাইকের বদলে সেকেন্ডহ্যান্ড স্কুটি, ফ্রিজটা নতুনই দিয়েছে বটে কিন্তু যে কোম্পানির তারা দাবি করেছিল সে কোম্পানির নয়। পাত্র শিক্ষিত, ডাক্তার। রিয়া বি এ সেকেন্ড ইয়ার কিন্তু সেটা কে জানতে চায় ? তার না আছে রূপ না গুন। সস্তার পাউডার ও রঙের করা মেকআপের মধ্যে তার কালো রংটা যেন বেহায়ার মত আত্মপ্রকাশ করছে, এক মাসের ডায়েটিং কাজে দেয়নি বটে, বেনারসির কাজের নিচে তার মোটা চেহারা যেন বড়ই বেমানান। এত কিছুর পরেও ঐ সামান্য পণে বিয়েটা যে হচ্ছিল এটা তো বরপক্ষেরই হৃদয়বড়তা, কিন্তু সব ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো এই চিঠিটা।
সবার সামনে চিঠিটি ই সত্য মেনে বিয়ে ভাঙলো রিয়ার। গোপনে এই বিয়ের জন্য আরো এক লক্ষ টাকা চাওয়ায় রুমা দেবীর পায়ে লুটিয়ে পড়েছিল রিয়ার বাবা। কিন্তু সে বারের জন্য মেয়ের গতি করতে পারেননি তিনি।
রিয়ার হুশ ফিরলো প্রেশার কুকারের সিটিতে। সে জানেনা সেদিন সেই উপহারটা কে দিয়েছিল। না তার তেমন কোন গোপন ভালোবাসার মানুষ ছিল, হয়তো বা সে চিঠিও হাত বদলাতে বদলাতে হাজির হয়েছিল সেদিন। সেদিন নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়েছিল তার। 'উপহার' শব্দটাই যেন ভয়ের হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আজ যেন সেই অজানা উপহার দাতার জন্যই মন থেকে বেরিয়ে এল এক কৃতজ্ঞতা। তাকে লগ্নভ্রষ্টা করে যাওয়া রাজেশ ও তার মা রুমা দেবী এখন বধুহত্যার আরোপে জেলে। টিভির স্ক্রিনে বারবার ভেঁসে উঠছে আগুনে পোড়া রাজেশের স্ত্রী নীলিমার দেহ।
তৃষা সরকার, কলকাতা
১লা মার্চ ২০২০
তিন বছরের মেয়ে গুবাইকে খাওয়াতে বসেছে রিয়া, সামনে টিভিতে চলছে কার্টুন, দুষ্টু গুবাই মুখে ভাত নিয়েই লাফিয়ে পড়লো সোফায়। তার ছোট্ট পায়ের চাপেই রিমোটে চ্যানেলটি পাল্টে গেলো খবরের চ্যানেলে, সেই দেখে গুবাইয়ের কি কান্না। কিন্তু রিয়ার চোখ যেন টিভির স্ক্রিনেই আটকে গেছে আর তার স্মৃতির সরণী বেয়ে সে যেন হাজির হয়েছে চার বছর আগে তার বিয়ের সন্ধ্যে।
বিয়ের লগ্ন সে রাত বারোটায় রিয়ার ইচ্ছা করছিল পাশের ঘরে রাখা উপহার গুলি খুলে দেখতে, মন্ডপে এখন লোক ও কম। কিন্তু সে ঘরে পৌঁছে দেখে তার ছোট্ট ননদরা উপহার দেখার অদম্য উত্তেজনায় রঙিন র্যাপারগুলি এক প্রকার ছিঁড়ে ফেলেই বের করে দেখছে উপহারগুলি, কথাতেই আছে-'রায় বাঘিনী ননদিনী', আর হবু বৌদি হয়ে কি ছোট্ট ননদ এর মানা করা সাজে ? আর অনিচ্ছা সত্বেও ফিরে যেতে হল সেই পাশের ঘরটিতে একটি উপহার খুলতে। কি দেখে যেন মিমির মুখের সেই হাসিটা খসে গেল। উত্তেজনার উপর কাবু হয়ে মৃদু পায়ে সে রুমা দেবীর কানে কি যেন ফিসফিসিয়ে বলে জামার কোনে গোপন কুঁচি থেকে একটি কাগজ বের করে রুমা দেবীকে দেখাতেই তার চোখে সন্দেহ প্রশ্ন ও রাগ একই সঙ্গে ফুটে উঠেছে। সবার সামনে যখন সে চিঠি পড়া হল তখন চিঠিতে বর্ণিত শব্দের থেকেও সে চিঠি পাঠকের গলার অপ্রয়োজনীয় নাটকিয়তা যেন বিষয়টাকে আরো গম্ভীর করে তুলল। নতূন বউয়ের উপহারের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক চিঠি পাওয়া গেছে- কে লিখেছে নাম যদিও নেই কিন্তু এই চিঠি যে রিয়ার প্রেমিকের এ ধারণা দৃঢ় করার জন্য সেই লেখকের সঙ্গে কাটানো তার ভালোবাসার কিছু স্মৃতিচরণ, বিশ্বাসঘাতকতার কারণ- এই গুলোই ছিল যথেষ্ট। এমনিতেই রিয়ার বাবা আড়াই লাখ টাকার পণ দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিয়েছিল মাত্র ৯০ হাজার। নতুন বাইকের বদলে সেকেন্ডহ্যান্ড স্কুটি, ফ্রিজটা নতুনই দিয়েছে বটে কিন্তু যে কোম্পানির তারা দাবি করেছিল সে কোম্পানির নয়। পাত্র শিক্ষিত, ডাক্তার। রিয়া বি এ সেকেন্ড ইয়ার কিন্তু সেটা কে জানতে চায় ? তার না আছে রূপ না গুন। সস্তার পাউডার ও রঙের করা মেকআপের মধ্যে তার কালো রংটা যেন বেহায়ার মত আত্মপ্রকাশ করছে, এক মাসের ডায়েটিং কাজে দেয়নি বটে, বেনারসির কাজের নিচে তার মোটা চেহারা যেন বড়ই বেমানান। এত কিছুর পরেও ঐ সামান্য পণে বিয়েটা যে হচ্ছিল এটা তো বরপক্ষেরই হৃদয়বড়তা, কিন্তু সব ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো এই চিঠিটা।
সবার সামনে চিঠিটি ই সত্য মেনে বিয়ে ভাঙলো রিয়ার। গোপনে এই বিয়ের জন্য আরো এক লক্ষ টাকা চাওয়ায় রুমা দেবীর পায়ে লুটিয়ে পড়েছিল রিয়ার বাবা। কিন্তু সে বারের জন্য মেয়ের গতি করতে পারেননি তিনি।
রিয়ার হুশ ফিরলো প্রেশার কুকারের সিটিতে। সে জানেনা সেদিন সেই উপহারটা কে দিয়েছিল। না তার তেমন কোন গোপন ভালোবাসার মানুষ ছিল, হয়তো বা সে চিঠিও হাত বদলাতে বদলাতে হাজির হয়েছিল সেদিন। সেদিন নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়েছিল তার। 'উপহার' শব্দটাই যেন ভয়ের হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আজ যেন সেই অজানা উপহার দাতার জন্যই মন থেকে বেরিয়ে এল এক কৃতজ্ঞতা। তাকে লগ্নভ্রষ্টা করে যাওয়া রাজেশ ও তার মা রুমা দেবী এখন বধুহত্যার আরোপে জেলে। টিভির স্ক্রিনে বারবার ভেঁসে উঠছে আগুনে পোড়া রাজেশের স্ত্রী নীলিমার দেহ।
তৃষা সরকার, কলকাতা
১লা মার্চ ২০২০