জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশ একে অপরের পরিপূরক, বলা যায় মুদ্রার এপিট-ওপিট। জাতির জনকের জন্ম হয়েছে এক সাত অর্থাৎ সতের তারিখ এবং বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে ঠিক তার উল্টা সাত এক অর্থাৎ একাত্তর। উনিশ শত একাত্তর শুধুমাত্র একটি সংখ্যা নয়। উনিশ শত একাত্তর কে পর্যালোচনা করলে যা ভাবতে পারি তাহলো এক-এ একটি জাতি, নয়-এ নয় মাস যুদ্ধকরে, সাত-এ সাত জন বীরশ্রেষ্ঠর মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে, এক-এ একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম। তার নাম বাংলাদেশ। আমরা বায়ান্নয়ে পেয়েছি বাংলা একাত্তরে দেশ। যা আজ আমার সোনার বাংলাদেশ।
সতের মার্চ উনিশ শত বিশ সালে শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। তবে ছোট বেলায় তিনি খোকা নামেই বেশী পরিচিত ছিলেন। খোকা সাত বছর বয়সে উনিশ শত সাতাশ সালে গিমাডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। চোখের রোগের কারনে কয়েক বছর লেখাপড়া বন্ধ রেখে সতের বছর বয়সে তিনি পুনরায় সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন। সতের মার্চ উনিশ শত উনচল্লিশ সালে তিনি প্রথমবার গ্রেফতার হয়ে সাত দিন হাজতবাস করেন। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে তিনি ধীরে ধীরে খোকা থেকে শেখ মুজিবুর রহমান নামে পরিচিত লাভ করেন। সাতাশ বছর বয়সে উনিশ শত সাতচল্লিশ সালে তিনি কলিকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন এবং প্রথম পিতৃত্ব লাভ করেন। আজকের নন্দিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রথম সন্তান। ততদিনে তিনি ছাত্রনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। সতের মার্চ উনিশ শত আটচল্লিশ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সর্বপ্রথম বাংলা ভাষার দাবীতে পূর্বপাকিস্তানের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। সতের ফেব্রুয়ারী উনিশ শত বায়ান্ন সালে তিনি ভাষা আন্দোলনের কর্মীদের সাথে জেলখানায় বসে সাক্ষাৎ করেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পক্ষে তিনি একটানা সতের দিন জেলখানায় অনশন পালন করেন। জেলখানায় অনশন করা অবস্থায় তিনি গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে সাতাশ ফেব্রুয়ারী তাকে জেলখানা থেকে মুক্তি প্রদান করা হয়। সতের এপ্রিল উনিশ শত তেপান্ন সালে গর্ভনর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিনকে অসাংবিধানিকভাবে বরখাস্ত করেন। তরুন বয়সে তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে য্ক্তুফ্রন্ট নির্বাচনে ব্যাপক ভূমিকা রাখলে দল জয়লাভ করলে মাত্র চৌত্রিশ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ট সদস্য হিসেবে প্রাদেশিক সরকারের তিনি কৃষি ও বন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। সতের জুন উনিশ শত পঞ্চান্ন সালে ঢাকার পল্টন ময়দানে জনসভা থেকে তিনি পূর্বপাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসনের দাবীতে একুশ দফা ঘোষনা করেন। ঐ বছরই তিনি কোয়ালিশন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি ও ভিলেজ এইড দপ্তরের মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। সায়ত্রিশ বছর বয়সে সাত আগষ্ট উন্নিশ শত সাতান্ন সালে তিনি সর্বপ্রথম সরকারীভাবে তৎকালীন সমাজতন্ত্রের সুতিকাগার চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেন। মাত্র সায়ত্রিশ বছর বয়সে উনিশ শত সাতান্ন সালে তিনি দলকে সুসংগঠিত করার জন্য কোয়ালিশন সরকারের মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করে দলীয় কাজে মনোনিবেশ করেন। সাত অক্টোবর উনিশ শত আটান্ন সালে ইস্কান্দার মির্জাকে সরিয়ে জেনারেল আইয়ুব খান পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেন। সাত ডিসেম্বর উনিশ শত একষট্টি সালে হাইকোর্টের রিট আবেদনের মাধ্যমে তিনি সামরিক আইনে আটক থাকার কয়েক মাস পর মুক্তিলাভ করেন। সাত ফেব্রুয়ারী উনিশ শত বাষট্টি সালে জেনারেল আইয়ুব খান পুনরায় শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করেন। সতের দিনের পাক-ভারত যুদ্ধ শেষে উনিশ শত পয়ষট্টি সালে বঙ্গবন্ধু পূর্বপাকিস্তানের ভূমি এবং জনগনের সার্বিক নিরাপত্তা এবং অরক্ষিত বিষয়টি বাঙ্গালীদের সামনে নিয়ে আসেন। সাত জুন উনিশ শত ছেষট্টি সালে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবীতে পূর্ব পাকিস্তানে সর্বপ্রথম হরতাল অবোরধ হলে দশ জন নিহত হয়। সাত চল্লিশ বছর বয়সে উনিশ শত সাতষট্টি সালে বঙ্গবন্ধু প্রথম শশুর হন। প্রখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়। বহু আলোচিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার হয়ে কিছুদিন জেলখাটার পর সতের জানুয়ারী উনিশ শত আটষট্টি সালে জামিন লাভ করেন এবং পুনরায় জেলগেট থেকে গ্রেফতার হন। সাত ডিসেম্বর উনিশ শত আটষট্টি সালে মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বাঙ্গালীর মুক্তির সনদ ছয় দফার প্রতি একাত্বতা ঘোষনা করেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি লাভ করলে বাংলার ছাত্রসমাজ তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন। সাত জুন উনিশ শত সত্তর সালে ছয় দফা দাবী বাস্তবায়নের দাবীতে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনসভা করেন। সতের সেপ্টেম্বর উনিশ শত সত্তর সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের নির্বাচনের জন্য নৌকা প্রতিক পছন্দ করেন এবং নৌকার পক্ষে প্রথম জনসভা করেন ঢাকার ধোলাইখালে। সাত ডিসেম্বর উনিশ শত সত্তর সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় নির্বাচনে এক শত ষাটষট্টি আসন লাভ করে বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগ।
সাত ফেব্রুয়ারী উনিশ শত একাত্তর সালে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা জুলফিকার আলী ভুট্রো পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসেন। সাত মার্চ উনিশ শত একাত্তর সালে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু প্রথম স্বাধীনতা এবং মুক্তিসংগ্রামের কথা উল্লেখ করে জনসভায় বক্তব্য রাখেন। সাত মার্চের ভাষনে তিনি প্রায় সতের মিনিট বক্তব্য রাখেন (ষোল মিনিট বায়ান্ন সেকেন্ড)। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠি সাত জিরো সাত বোয়িং বিমান, পিআইএ ফ্লাইটের মাধ্যমে গোপনে পূর্ব পাকিস্তানে অস্ত্র জমা করতে থাকে। উনিশ শত বায়ান্ন (পাঁচ দুই) সালে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী ভাষার জন্য নিরস্ত বাঙ্গালীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে তেমনি ঠিক পঁচিশে মার্চ (দ্ইু পাঁচ) উনিশ শত একাত্তর সালে রাতের আধারে নিরস্ত বাঙ্গালীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানী হায়েনা বাহিনী । যেন মুদ্রার এপিট-ওপিট। ঠিক উল্টা। সাতাশ মার্চ উনিশ শত একাত্তর সালে অষ্টম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান চট্রগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষনা পাঠ করেন। সতের এপ্রিল উনিশ শত একাত্তর সালে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলায় আমবাগানে মুজিব নগর সরকারের পক্ষে সাত জন শপথ বাক্য পাঠ করেন। মুজিব নগর সরকারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ঘোষনা করা হয়। সাতশ মার্চ থেকে পূর্বপাকিস্তানে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হলে সাতাশ এপ্রিল কলিকাতা গ্রান্ড হোটেলে আওয়ামী লীগের সভা আহবান করেন মিজানুর রহমান চৌধুরী। সাত মে উনিশ শত একাত্তর সালে পূর্ব পাকিস্তানকে বাংলাদেশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাব পাশ হয়। সাতাশ জুলাই উনিশ শত একাত্তর সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো নানা হন। এদিনে বিশিষ্ট পরমানু বিজ্ঞানী ড.ওয়াজেদ মিয়া এবং শেখ হাসিনার কোল জুড়ে পৃথিবীতে আসেন সজীব ওয়াজেদ জয়। সাত সেপ্টেম্বর উনিশ শত একাত্তর সালে পাকিস্তানের লায়ালপুর সামরিক জেলখানায় বঙ্গবন্ধুকে সামরিক আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলায় মৃত্যুদন্ডের রায় প্রদান করা হয়। সাত সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রায়াসে পাকিস্তান সরকার রাজাকার অর্ডিন্যান্স জারি করেন। পিয়ারে পাকিস্তানের পক্ষে দালালী করা কুখ্যাত রাজাকার অধ্যাপক গোলাম আজমের জন্ম সাত মার্চ উনিশ শত বাইশ সাল। সাত ডিসেম্বর উনিশ শত একাত্তর সালে জেনারেল ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার জন্য আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিক্সনকে সাহায্যের জন্য জরুরী বার্তা প্রেরণ করেন। পাকিস্তানের সামরিক জান্তাদের সাহায্যের জন্য সাত ডিসেম্বর উনিশশ শত একাত্তর সালে সপ্তম নৌবহর প্রেরণ করেন পরাক্রমশালী রাষ্ট্র আমেরিকা। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, সিপাহী হামিদুর রহমান, সিপাহী মোস্তফা কামাল, মোহাম্মদ রুহুল আমিন, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান, ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ এবং ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মাদ নামের সাত জন বীর শ্রেষ্ঠকে জীবন উৎসর্গ করতে দেখেছি। সাত মার্চ উনিশ শত উনপঞ্চাশ সালে বীর শ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর জন্মগ্রহণ করেন। ষোল ডিসেম্বর উনিশ শত একাত্তর সালে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটি জন্ম হয়। সেই ষোল ডিসেম্বর উনিশ শত সাতচল্লিশ সালে বীর শ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল জন্ম গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে অনেক ব্যক্তিগত বাহিনী যুদ্ধ করলেও সাতটি বাহিনী ব্যাপকভাবে প্রচার লাভ করেন যুদ্ধক্ষেত্রে অসীম সাহসিকতার কারনে। বাহিনীগুলো হলো সারাদেশে মুজিব বাহিনী, টাঙ্গাইলে কাদের বাহিনী, ময়মনসিংহে আফসার বাহিনী, টাঙ্গাইলে বাতেন বাহিনী, ফরিদপুর-বরিশালে হেমায়েত বাহিনী, মাগুরা-ঝিনাইদহে আকবর বাহিনী এবং গাজীপুরে আজিজ বাহিনী। সাতাশ ডিসেম্বর উনিশ শত একাত্তর সালে বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি চান। সাত জানুয়ারী উনিশ শত বাহাত্তর সালে পাকিস্তান সরকার নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে তাঁর সাথে লায়ালপুর কারাগারে দেখা করে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নিরস্ত বাঙ্গালীদের হত্যার জন্য পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হয়ে নীল নকশাকারী বেলুচিস্থানের কসাই নামে খ্যাত টিক্কা খানের জন্ম সাত জুলাই উনিশ শত পনের সালে। বিশ্ববিহায়াখ্যাত ইয়াহিয়া খানের জন্ম উনিশ শত সতের সাল। বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সর্বমোট সতের বার গ্রেফতার/গৃহবন্দী হন। বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডির যে বাড়িতে বসবাস করতেন তার নাম্বার ছিলো ছয়শত সাতাত্তর (যা ধানমন্ডি বত্রিশ নাম্বার নামে অধিক পরিচিত, ধানমন্ডি বত্রিশ ছিলো তখনকার রোড নাম্বার)।
সতের মার্চ উনিশ শত বাহাত্তর সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সহযোগী দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সফরে আসেন। সতের মার্চ উনিশ শত বাহাত্তর সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হয়। সাত মার্চ উনিশ শত তেহাত্তর সালে বাংলাদেশের প্রথম সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সাত অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান জাপান সফর করেন। নানা কুটনৈতিক তৎপরতায় সাত সেপ্টেম্বর উনিশ শত চুয়াত্তর সালে বাংলাদেশ জাতি সংঘের সদস্যপদ লাভ করেন। শেখ মুজিবুর রহমান, বেগম ফজিলাতুন নেছা, শেখ হাসিনা, শেখ কামাল, শেখ রেহেনা, শেখ জামাল এবং শেখ রাসেল এই সাত জন নিয়ে ছিলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে পরিবার। পরবর্তীতে পরিবারে দুজন পুত্রবধু যোগ হন। বিশ্বাসঘাতক কয়েকজন সহযোগী ও উচ্চভিলাষী সামরিক অফিসারের হাতে বঙ্গবন্ধুর পরিবার ও আত্মীয়স্বজন সহ সতের জন নিহত হন উন্নিশ শত পচাঁত্তর সালের পনের আগষ্টের কালোরাতে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান, রাষ্ট্রপতির সহধর্মিনী বেগম ফজিলাতুন্নেছা, জ্যৈষ্ঠপুত্র মু্িক্তযোদ্ধা লে. শেখ কামাল, পুত্র লে. শেখ জামাল, কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, ভগ্নিপতি কৃষিমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও তাঁর কন্যা বেবী সেরনিয়াবাত, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, দৌহিত্র সুকান্ত আব্দুল্লাহ বাবু, ভ্রাতুস্পুত্র শহীদ সেরনিয়াবাত, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মণি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্ণেল জামিল এবং চৌদ্দ বছরের কিশোর রিন্টু। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, বাঙ্গালী জাতির জনক, বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর তাঁর লাশ পাঁচ শত সত্তর (একটি কাপড় কাঁচার সাবান) সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে জানাযা শেষে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় দাফন করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুইবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং দুইবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সাত নভেম্বর উনিশ শত পঁচাত্তর সালে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে পুনরায় হত্যা করা হয়। সাত নভেম্বর উনিশ শত পঁচাত্তর সালে বাংলাদেশের অনেক খ্যাতনামা খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে হত্যা করা হয়। সামরিক জান্তার হাত থেকে গনতন্ত্রকে পুনরুদ্দার করতে গিয়ে এদিন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল খালেদ মোশাররফ সহ অনেকে নিহত হন। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে সায়ত্রিশ সদস্য বিশিষ্ট বিপ্লবী কমিটি করা হয়। সতের নভেম্বর উনিশ শত ছিয়াত্তর সালে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি ইন্তেকাল করেন। বাংলাদেশের রজনীতিতে আলোচিত চরিত্র জিয়াউর রহমান উনিশ শত সাতাত্তর সালে বাংলাদেশের সপ্তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসেন। স্বাধীনতার মাত্র সাত বছর পর স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধীতাকারী শাহ আজিজুর রহমান প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমানকে জাতীয় গোরস্থান জাতীয় সংসদ ভবন চত্বরে দাফন করে স্বাধীনতাকে চরম অপমান করা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে সতের মে উনিশ শত একাশি সালে আজকের প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন গৃহবধু শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আসেন। যা ইতিহাসে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পরিচিত। সাত মার্চ উনিশ শত সাতাশি সালে সুইডেনের রাষ্ট্রদুত থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু হত্যা নিয়ে প্রথম মুখ খোলেন বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সময় সেনাবাহিনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করা কে এম শফিউল্লাহ। সাতাশ জনকে আসামী করে দুই অক্টোবর উনিশ শত ছিয়ানব্বই সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা রুজু করা হয়। রাত দশ টা সাত মিনিট বার নভেম্বর উনিশ শত ছিয়ানব্বই সালে জাতীয় সংসদে কালাকানুন আইন বাতিল করা হয়। এক মার্চ উনিশ শত সাতানব্বই সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে শুরু হয়। সাত এপ্রিল উনিশ শত সাতানব্বই সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চার্জশীট প্রদান করা হয়। সতের আগষ্ট দুই হাজার পাঁচ সালে তেষট্টি জেলায় একযোগে পাঁচশত বোমা হামলার মধ্য দিয়ে জিএমবি নামক উগ্র ধর্মীয় সংগঠন বাংলাদেশে তাদের উপস্থিতি জানান দেন। সাতাশ জানুয়ারী দুই হাজার দশ সালে মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত সৈয়দ ফারুক রহমান, মহিউদ্দিন আহমদ, বজলুল হুদা, এ.কে.এম.মহিউদ্দিন আহমেদ এবং সুলতান শাহারিয়ার রশিদ খান এর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত সাত জন আসামী খন্দকার আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী, আব্দুল মজিদ, মুসলেউদ্দিন খান এবং আজিজ পাশা এখনো পলাতক রয়েছেন। সাতাশ মার্চ দুই হাজার সালে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবী করেন। শেখ হাসিনা হত্যা চেষ্ঠা মামলায় সতের বছর পর দুই হাজার সতের সালে সতের জনকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়। একাত্তর সালে (সাত এক) স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত প্রায় এককোটি বাঙ্গালীকে আশ্রয় দিয়ে মানবতার পরিচয় দিয়েছিলো। সতের (এক সাত) সাল দুই হাজার বাংলাদেশ প্রায় দশ লক্ষ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিপন্ন মানবতার পাশে দায়িড়ে বুঝিয়েছেন বাংলাদেশে মানুষ মানবতার পক্ষে। দুই হাজার সতের সালে বাংলাদেশের নন্দিত প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা মাদার অব হিউমিনিটি পদকে ভূষিত হন। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সতের জন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
মোঃ হেদায়েত উল্লাহ তুর্কী
সহকারী রেজিস্ট্রার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ
১৭ই মার্চ ২০২০