Type Here to Get Search Results !

আমার আত্মকথন (তৃতীয় পর্ব)ঃ পি আর প্ল্যাসিড,জাপান

সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান শেষ হলে আমরা সবাই যে যার মতো ঢাকা চলে যাই। যাবার পর নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে যাই। সব কিছুর পরেও আমাদের মধ্যে একটা বিষয় খুব মিল ছিল। সেটা হচ্ছে প্রায় প্রতি শুক্রবার আমরা সব বন্ধু মিলে ঢাকা থেকে দল বেঁধে একসাথে গ্রামে যেতাম। কখনও সাইকেল চালিয়ে কখনওবা ট্রেনে। শুক্রবার বিকেলে বা শনিবার আবার ঠিকই দল বেঁধে ঢাকা ফিরে আসতাম। কারণ ছিল, সেই সময় আমাদের সবাই প্রায় টিউশনী করে ঢাকা শহরে পড়ালেখা করি। শনিবারও বাচ্চাদের পড়াতে হত। যে কারণে শনিবার চলে আসা। তখন ঢাকার সাথে আমাদের এলাকায় আসার রাস্তা পাঁকা ছিল না। আজকের মতো বাস যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব ভালো ছিল না। বলতে গেলে ট্রেন ব্যবস্থাই ছিল মূল। যে কারণে নিজেদের সুবিধার জন্য সাইকেলেও আসা যাওয়া করতাম মাঝে মধ্যে। ঢাকা টিউশনী আর নিজেদের ক্লাস করে রবিবার যে যতো ব্যস্তই থাকতাম না কেন, সব ব্যস্ততার পর তেজগাঁও চার্চে এসে সন্ধ্যায় সবাই জড়ো হতাম। চার্চে মিশা শেষ হলে হলিক্রস কলেজের সামনে (দক্ষিণ পাশে) রেস্টুরেন্টে রাত অবধি আড্ডা দিতাম। এই আড্ডা হতো আমাদের সামাজিক কর্মকান্ড নিয়ে আলোচনা করে। রবিবার গির্জায় মিশা শোনা আর আড্ডা দেওয়া ছিল আমাদের অনেকটা বাধ্যতামূলক নিত্য নৈমত্যিক বিষয়। সারা সপ্তাহ আমরা যে যেখানেই থাকি, রবিবার আমাদের দেখা করে ঢাকা এবং এলাকায় সামাজিক কর্মকান্ড করার জন্য আলোচনা হত নিজেদের মধ্যে। একদিন গির্জায় মিশা শেষে বাইরে গেইটের কাছে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে বন্ধুরা মিলে কথা বলছিলাম। এমন সময় দেখি চার পাঁচজন মেয়ে সামনে দিয়ে যাচ্ছে আর বারবার আমাদের দিকে তাকিয়ে কি যেন বলাবলি করছে। রসিকতা করে আমি ওদের ডাকলাম। তখনও সেখানে যে নাগরীর সেই অনুষ্ঠানে পরিচয় হওয়া মেয়েটি রয়েছে তা খেয়াল করিনি। ওরা সামনে এসে দাঁড়ালে মেয়েটিকে দেখে বললাম, আরে তুমি? তোমাকে তো আমি মনে মনে খুঁজছিলাম। বলার পর মেয়েটিকে দেখি আনন্দ আর লজ্জার মিশ্রনে কাচুমাচু করছে। ওখানে ওদের সাথের একজনকে খুব বেশি কথা বলতে দেখে না জেনেই প্রশ্ন করলাম " এই, তোমার বাড়ি কি বরিশাল নাকি? এতো বেশি কথা বলছো কেনো? পরে অবশ্য ওর উত্তর শুনে অবাক হলাম। কারণ সত্যি হয়েছিল আমার রসিকতা করে করা প্রশ্নের উত্তর। দশ মিনিটের মতো আমরা সেখানে দাঁড়িয়ে কথা বললাম। একসময় আমাদের একজন বলল, চলেন ওদের ওখানে যাই। জানতে চাইলাম, ওদের ওখানে বলতে কোথায়? কোথায় থাকে ওরা? জানালো, ওরা রাজাবাজার সাধনপাড়া হোস্টেলে থাকে। রাজাবাজার গলির মুখেই ছিল বড় ভাইয়ের প্রিন্টিং প্রেস। ওখানে অনেক আগে থেকেই আমার আসা যাওয়া অথচ এত কাছেই যে মেয়েদের হোস্টেল আছে সেটা জানা ছিল না। তাই বলার পর আমার কাছে হোস্টেলের বিষয়টি ইন্টারেস্টিং মনে হলো। তাই যে আমাকে ওদের ওখানে যেতে আমন্ত্রণ জানালো ওকে বললাম, চলো যাই। তখন চাইলে গির্জার গেইট থেকে রিক্সায় রাজাবাজার পর্যন্ত যাওয়া যেতো। তারপরেও হেঁটে ফার্মগেইট পর্যন্ত গেলাম ওদের সাথে কথা বলতে বলতে। ফার্মগেইট ব্রীজের গোড়া থেকে রিক্সা নিয়ে চলে গেলাম রাজাবাজার সাধনপাড়া। গিয়ে দেখি আমার অতি পরিচিত একজনের বাসায় ঢুকছে। ওদের পিছু পিছু আমরা দুই বন্ধু ভিতরে গিয়ে দেখি আমার সেই পরিচিতজনের ঠিক পাশের ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়ে ওরা থাকে। সেন্ট যোসেফ স্কুলের এক ব্রাদার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়ে মেয়েদের সেখানে নিরাপদে থেকে ঢাকা শহরে পড়ালেখার সুযোগ করে দিয়েছেন। সেখানে ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ঘন্টা খানেক সময় ওদের সাথে কথা বলে চা চেয়ে খেয়ে তারপর বিদায় নিলাম সেদিনের মতো। আমি থাকি তখন পুরাতন ঢাকার লক্ষ্মীবাজার। ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফার্মগেইট পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে ওভারব্রীজের উপর দিয়ে পায়ে হেঁটে বড় সড়ক পাড় হলাম। এরপর পূর্ব পাশে বাসস্ট্যান্ড থেকে মিনিবাসে চড়লাম। এক বাসে চলে গেলাম গুলিস্তান। সেখানে বাস বদলে সদরঘাটের আগে ভিক্টোরিয়া পার্ক পর্যন্ত গেলাম অন্য বাসে। রাস্তায় যেতে যেতে সেদিন আমার একবারও মনে পড়ল না সেই মেয়েটির কথা। শুধু ভাবছিলাম আজ টিউশনীর বাসায় না বলে ছুটি করলাম, কাল গেলে জানি কি হয়। কি অযুহাত দেবো তাই ভাবছিলাম। ভাবতে ভাবতে কি আর করি অযুহাত একটা দিয়ে কাটানোর কথা। কিন্তু বাচ্চাদের যে পড়ার ক্ষতি হয়ে গেল তা পরের দিন একটু সময় বেশি পড়িয়ে সেদিনের পড়া কভার করিয়ে দেবার ভাবনাই ছিল মাথাজুড়ে। তখন আজকের মত আমাদের আর মোবাইল ফোন ছিল না যে সহজে যোগাযোগ করবো। রাতে ঘুমানোর আগে একবার ওদের কথা মনে পড়ছিল। হোস্টেলের প্রত্যেকটি মেয়েই ছিল বেশ চোখে পড়ার মত। বয়স কম, দেখতে সুন্দরী, স্মার্টও। কথা বলে জমানোর মতো ওদের মধ্যে একটি মেয়েই ছিল যাকে না জেনেই প্রশ্ন করেছিলাম বাড়ি বরিশাল নাকি? ওর কথাই মনে পড়ছিল আমার বারবার। সেদিন মেয়েটি সম্পর্কে একটি বিষয়ই আমার জানা হলো। হোস্টেলের প্রধান ছিল সেই মেয়েটি যাকে আমি প্রথম দেখাতেই পাগলের মতো পছন্দ করে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। ওর নাম স্মরণ করলাম একবার, এরপর আমার লম্বা সাদা দিস্তা কাগজের খাতা খুলে ওর নামটি বড় করে লিখলাম খাতার এক পাতাজুড়ে। নাম ওর রমলা। পরে অবশ্য রমলা লেখা খাতার সেই পাতাটি ছিড়ে ভাঁজ করে আমার শার্টের পকেটে ভরে রেখে বিছানায় যাই ঘুমোতে। যখন ঘুমাতে গেলাম তখন মধ্যরাত। অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটায় দিন বদলে গেছে।

পি আর প্ল্যাসিড
জাপান (চলবে)

১১ই আগস্ট ২০২০

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.