নারী মা, নারী বোন, নারী স্ত্রী, নারী বন্ধু। নারী এক শক্তিময়ী। নারী দশভূজা দূর্গা। কিন্তু এই নারী কি আজ সহজ লভ্য হয়ে গেছে? বর্তমান সমাজে নারীর চলমান শক্তি ক্রমে গ্রাস করে নিচ্ছে মানুষরুপি কিছু হিংস্র পুরুষ। ১৯৭১ সালের কথা যদি বলি তবে সে বছর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নারীরা অত্যাচারীত হয়েছিলো পাক হানাদার বাহিনীর কাছে। কতটা জঘন্য, কতটা নির্মম অত্যাচার চলেছিলো অসহায় নারীদের উপর। যা শুনলে গা শিউরে উঠে। প্রায় চার লাখ নারীর সম্ভ্রমহানী ঘটে। সেই থেকে আজ অবধি আদৌকি নারীর প্রতি সহিংসতা কমেছে। না, কমেনি,বরং বেড়েই চলেছে সমাজে নারী সহিংসতা।
ভারত আর বাংলাদেশের চিত্র একই। গত কয়েক বছরে ভারতে নারী ধর্ষনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কেবল ধর্ষনই নয় ধর্ষিত নারীকে পুড়িয়ে মারার মতো নিঃসংস্র ঘটনা। ২০১২ সালের দিল্লিতে ঘটে নির্ভয়া কান্ড।যার জেরে উত্তাল হয়ে উঠেছিলো পুরো ভারত দীর্ঘ ৮ বছর পর ফাঁসির সাজা ঘোষণা হয়েছিলো ওই
মামলায়৫ জনের। ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর ২০১৮ সালের রিপোর্ট, সেখানে বলা হয়েছে ভারতে প্রতিদিন ৯১টি ধর্ষণ, ৮০টি খুন আর ২৮৯টি অপহরনের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ, প্রতি ১৫ মিনিটে সেখানে একজন মহিলা ধর্ষনের শিকার হন। কিন্তু বেসরকারী পরিসংখ্যান বলছে, বাস্তবে এই সংখ্যা আরো বেশি। প্রতিদিন ভারতে ধর্ষনের শিকার হন শতাধিক নারী। বাংলাদেশেও এর কম নয়। নারীর প্রতি সহিংসতা ভয়াবহ। ২০১৯ সালে যৌন হযরানীর শিকার হয়েছে ২৫৮ জন নারী।২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিলো ১৭০ জন। ২০১৯ সালে যৌন হয়রানীর শিকার হয়ে ১৮ জন নারী আত্নহত্যা করেছেন। ১৭ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। যৌন হয়রানীর প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৪৪ জন পুরুষ নির্যাতনের শিকার হন। এর বাইরে এ্যাসিড নিক্ষেপ, ফতোয়া এবং সালিশি ব্যবস্হার শিকার হয়েছেন অনেক নারী। প্রতিনিয়ত নারী সহিংসতা বেড়েই চলেছে।
১০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে শিশু ধর্ষনের ঘটনা দ্বিগুণ হয়েছে। ধর্ষণ কেবল ভারতের সমস্যা নয় পুরো বিশ্বে ধর্ষণের ঘটনা প্রচুর।
একজন নারী যেখানে একটা পরিবার চালাচ্ছে চালাচ্ছে গোটা রাষ্ট্র সেখানে আজ বিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে নারী আজও পরাধীন, আজও অসহায়। কেবল সমাজে নয়, প্রতিটি পরিবারে নারী আজ কোনো না কোনো ভাবে নিপিড়ীত, অবহেলিত।
কোনো কোনো পরিবারে দেখা যায় নারী সংসার সামলাচ্ছে সাথে বাইরে রোজগারও করছে। তবুও কিছু কিছু পরিবারে নারীর সে অর্জিত আয় কেড়ে নেয়া হচ্ছে। তাকে অবহেলিত করে রাখছে পুরুষ। এ কেমন অবিচার? মেয়ের একটু বয়স হলে তাকে বিয়ে দিয়ে দাও, যেনো একটু বাড়ন্ত বয়সের মেয়েরা ভালো ঘর, ভালো স্বামী পায় না এটাই ধারনা করা হয় পরিবার থেকে। মেয়ে কালো হলে তো আর কথাই নেই, অতিরিক্ত পণ দিয়ে তাকে শ্বশুর বাড়ি পাঠানো হয়। কিন্তু এই যে এতোএতো পণ দিয়ে তাকে শ্বশুর বাড়ি পাঠানো হচ্ছে সেখানেও কি ঐ মেয়েটা সুখী আদৌ?
একটু ঘেঁটে দেখলে দেখা যাবে সেও নির্যার্তিত শ্বশুর বাড়ির লোকদের কাছে। এমন ঘটনা তো নতুন নয়। অতিরিক্ত পণ পেয়ে বিয়ে করে ফের আবার পণের জন্য স্ত্রীকে মারধর করে অনেক স্বামীই। লাঠিপেটা করে, শরীরে কেরোসিন ঢেলে স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার ঘটনা সমাজে প্রচুর রয়েছে।
অনেক স্বামী আছেন যারা স্ত্রীকে মাত্রারিক্ত সন্দেহ করে। রাস্তায় বের হলে স্ত্রীর দিকে যদি রাস্তার কোনো অপরিচিত লোকও তাকায় তবে ব্যাস হয়ে গেলো মেয়েটির কাপালে লাথি চড়।
আসলে আমরা কোথায় একটু নিরাপদ? কোথায় একটু শান্তুি পাবো? কোথায় গেলে একটু বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বাচবো?অথচ এই পুরুষ একটি নারীর গর্ভেই জন্ম নেয়। নারী তাকে মা রূপে, বোন রূপে, বন্ধু রূপে আগলে রাখে প্রতিটা ক্ষণ। সেই নারীর প্রতি সম্মানবোধ নেই করো। যদি আজ নূন্যতম সম্মানবোধ পুরুষ সমাজ করতো তবে আজ নারী স্বাধীন ভাবে সমাজে বেচে থাকতো। ভয়হীন ভাবে শুভ্র বলাকার মতো সেও উড়তো।
আসুন না একটু অন্তত নারীকে শ্রদ্ধা করি।নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাই, নারীকে একটু ভয়হীন স্বধীনভাবে বাচতে দেই সমাজে এই সংসারে, তবেই নারীর প্রতি নির্যতন বন্ধ হবে, ধর্ষন, খুন বন্ধ হবে।
প্রসাসনের আইনও ঠিক মতো বাস্তবায়ন করতে হবে। আইনের বাস্তবায়ন সঠিক ভাবে না হওয়াতে অনেক নারী আজ সুবিচার পায় না। তাই আইনের সঠিক ও কঠোর বাস্তবায় এবং নারীর প্রতি শ্রদ্ধামনোভাব পারে সমাজে নারী সহিংসতা রোধ করতে।
ছবিঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট
রীতা আক্তার
ঢাকা, বাংলাদেশ
১৮ই ফেব্রুয়ারি ২০২১