Type Here to Get Search Results !

যে কারণে ভারতীয় সিরিয়ালে বুঁদ বাংলাদেশিরা ঃ প্রভাষ চৌধুরী, বাংলাদেশ

।। প্রভাষ চৌধুরী, আরশিকথা ।।

ভারতের টিভি সিরিয়ালগুলো ভারতীয়দের কাছে যতটা না জনপ্রিয়, তার থেকে অনেকগুণ বেশি গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশের মানুষের কাছে। এই টিভি সিরিয়ালের কারণে এদেশে আত্মাহুতির ঘটনাও ঘটেছে। বাংলাদেশের শহর থেকে গ্রাম সব জায়গাতেই দাপট ভারতীয় সিরিয়ালের। বিশেষ করে নারীরা এসব সিরিয়াল বা নাটকে বুঁদ হয়ে থাকে। সংসারের কাজ তাড়াহুড়ো করে সেরে বসে যান টিভির সামনে। ভারতের জি-নেটওয়ার্কের চ্যানেল জি-বাংলা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এই জনপ্রিয়তার পিছনের কারণ কী, তা নিয়েও হয়েছে ব্যাপক গবেষণা, জরিপ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে নারীদের ৯০ শতাংশ টেলিভিশন দেখেন। যদিও এদের ৬০ শতাংশই দেখেন স্টার জলসাসহ ভারতীয় বাংলা চ্যানেলগুলো। কেন ভারতীয় চ্যানেল পছন্দ করেন দর্শকেরা, কেন বাংলাদেশের অনুষ্ঠান তাদের আকর্ষণ করে না? বাংলাদেশে ভারতীয় বাংলা সিরিয়ালের জনপ্রিয়তা কেন? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেশ কয়েকটি কারণ বেরিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের টিভি দর্শকদের বড় অংশের কাছে ভারতের বাংলা চ্যানেলগুলোর দৈনিক সোপ অপেরাগুলো জনপ্রিয়। এগুলোর দর্শক প্রধানত নারী এবং অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ নারী-পুরুষ। আরেকটি অংশের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে বিভিন্ন খেলাধুলার চ্যানেল, এগুলোর দর্শকদের বড় অংশটি তরুণ ও নানা বয়সের পুরুষ। কিন্তু বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে দেশি টিভি অনুষ্ঠানের চেয়ে কেন ভারতের চ্যানেল জনপ্রিয়, এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যাপক সংখ্যক দর্শক বিজ্ঞাপন আধিক্যের অভিযোগ তুলেছেন। এক গৃহিনী বলেন, ভারতীয় চ্যানেলে বিজ্ঞাপন কম। তাছাড়া ওদের প্রতিটা অনুষ্ঠানের পেছনে ওরা প্রচুর খরচ করে, মানে ওদের কাপড়চোপড়, গৃহসজ্জা এসবে অনেক মনোযোগ দেয়, যেটা দেখতে ভালো লাগে। এর বাইরে ওদের বাচনভঙ্গিও আমার কাছে যথার্থ মনে হয়। যেমন ওরা আইছস-গেছস বলে না, কিন্তু বাংলাদেশের নাটকে দেখবেন কাজের ছেলেও যে ভাষা বলে নাটকের নায়কও একই ভাষায় কথা বলে। আরেকজন বলেছেন, আমাদের দেশের চ্যানেলগুলো যেদিন থেকে মেয়েদের মন বুঝে প্রোগ্রাম বানাতে পারবে, সেদিন থেকে আর আমাদের বিদেশি চ্যানেল বিশেষ করে স্টার জলসা আর জি'টিভির ওপর ক্ষোভ ঝাড়তে হবে না। রুচি সম্মত অনুষ্ঠান না বানালে আমাদের দেশীয় চ্যানেলগুলোকে এইরকম দর্শকের পিছনে ঘোড়দৌড় করেই বেড়ানো লাগবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সানজিদা নীরা বলেন, ভারতীয় সোপগুলোতে দেখানো 'ফ্যান্টাসি' দেখতে পছন্দ করেন দর্শক। রূপকথার গল্পের মতন যেসব ফ্যান্টাসি সেখানে দেখানো হয়, সেটা বাংলাদেশে হয় না। যেমন ঘরের মধ্যে অনেক গয়না-গাটি পরে বসে আছে, বা অসম্ভব সাংসারিক একটা ষড়যন্ত্র দেখানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয়, মানুষ নিজের বাস্তব জীবনের বাইরে বেরিয়ে একটা ফ্যান্টাসির দুনিয়া দেখতে চায়, যেটা তাকে হালকা একটা বিনোদন দেবে। এছাড়া সময়সূচি একটা ব্যাপার, নির্দিষ্ট করে রবিবার-সোমবার মনে রাখতে হয় না। এদিকে সিরিয়াল বা নাটক বানাতে বাজেটের সমস্যার কথা সামনে আনছেন বাংলাদেশের অনেক নির্মাতা।


আরশিকথা বিনোদন

২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০২১
 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.