সামাজিক বিভাজন তথা জাতপাত ও ধর্মীয় কুসংস্কার অপসৃত না হলে আর্থিক ও রাজনৈতিক মুক্তিলাভ সম্ভব নয়-এ সত্যটি যিনি সর্বপ্রথম উপলব্ধি করেছিলেন তিনি হলেন ব্রাহ্ম ভাবধারায় বিশ্বাসী, নিরাকার ব্রহ্মের উপাসক, নবজাগরণের জ্বলন্ত মশাল রাজা রামমোহন রায়। এসবের ঊর্ধ্বে উঠে তিনিই প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন, প্রাচ্যের শিক্ষার পাশাপাশি জনজাগরনের জন্য পাশ্চাত্য শিক্ষারও প্রয়োজন রয়েছে। নারী শিক্ষা ও নারী স্বাধীনতার গুরুত্ব উপলব্ধি করে তিনি তৎকালীন সমাজ পতি ও পুরোহিত শ্রেণীর বিপক্ষে যেতেও দ্বিধাবোধ করেননি। স্ত্রী জাতি অবলা ও বুদ্ধিহীন-এই ধারণার বশবর্তী উচ্চমার্গীয় সমাজকে তিনি প্রশ্নবানে বিদ্ধ করে জানতে চেয়েছিলেন, নারীরা যদি সত্যিই নির্বোধ ও অবলা হয়ে থাকে তবে লীলাবতী, গার্গী, মৈত্রেয়ী, ভানুমতী, বিদ্যুত্তমা ওরা কিভাবে সর্ববিদ্যা পারদর্শী ছিলেন? বরঞ্চ নারীদেরকে যদি যথার্থ বিদ্যা শিক্ষা ও জ্ঞান প্রদান করা হয় তবে সমাজের মেরুদন্ড কোনদিনই ভেঙে পড়তে পারে না। এই তত্ত্ব কে সামনে রেখে নারীজাতির উন্নতিকল্পে পুরুষদের আধিপত্যবাদকেই বেশি দোষারোপ করেছেন। শিক্ষা ও সম্পত্তির অধিকার থেকে নারীদেরকে বঞ্চিত করা, সতীদাহ, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, পণপ্রথা, কৌলিন্য প্রথা এসব অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি শাস্ত্রীয় জ্ঞানোপলব্ধ ব্যাখ্যায় নিজের অভিমত যেমন ব্যক্ত করেছেন তেমনি সক্রিয়ভাবেও তিনি এসবের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা এবং অশিক্ষার অন্ধকার দূর করে আধুনিকতার পথ প্রদর্শন করেন তিনি। তাইতো তিনি আধুনিক ভারতের রূপকার। তাঁরই প্রচেষ্টায় ও যুক্তিগ্রাহ্য বাগ্মিতায় বাধ্য হয়ে তৎকালীন ইংরেজ সরকারের প্রতিনিধি লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে সতীদাহ প্রথার মতো এক ঘৃণ্য প্রথার অবসানকল্পে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করেন।
তেজারতি ব্যবসায় বিত্তবান, জ্ঞানী, মূর্তিপূজার ঘোর বিরোধী, নারী স্বাধীনতার পূজারী, রাজা না হয়েও যিনি 'রাজা' উপাধিতে ভূষিত সেই রামমোহন রায়ের আজ প্রয়াণ দিবস। স্মরণে, মননে, আত্মনিবেদনে আরশিকথা'র পুষ্পাঞ্জলি সেই মহামানবের পদযুগলে।
টিংকু রঞ্জন দাস, পরিচালক
আরশিকথা গ্লোবাল ফোরাম
আরশিকথা হাইলাইটস
২৭শে সেপ্টেম্বর ২০২১
প্রতিটি লেখাই খুব ভালো হয়েছে।
উত্তরমুছুনঅনেক সমৃদ্ধ হলাম।