সমৃদ্ধ রাজ্য নির্মাণের লক্ষ্যে আদর্শ সরকার পরিচালনায় প্রয়োজন আদর্শ সাংবাদিকতার। সংবাদমাধ্যমগুলির আভ্যন্তরীণ পর্যালোচনার দ্বারা নেতিবাচকতা চিহ্নিতকরণ ও ইতিবাচকতাকে ধারণ করার মাধ্যমে সংবাদ জগৎ ও রাজ্যের কল্যাণ সম্ভব। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে ও আগরতলা প্রেস ক্লাবের সহযোগিতায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ২ নম্বর প্রেক্ষাগৃহে জাতীয় প্রেস দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সংবাদ জগতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য রাজ্যের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকদের সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে সময়ের কাজ সময়ের মধ্যে শেষ করতে আগ্রহী। পরবর্তী প্রজন্মের সামনে এক সুনিশ্চিত সমৃদ্ধশালী ত্রিপুরা নির্মাণের লক্ষ্যে আগামী ২৫ বছরের কর্মপরিকল্পনার রূপরেখা স্থির করা হয়েছে। রাজ্য কোন পথে অগ্রসর হচ্ছে তার একটি স্বচ্ছ রূপরেখা যেন রাজ্যবাসীর সামনে থাকে সেজন্যই এই লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রশাসন পরিচালনায় বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে সংবাদমাধ্যমের। আদর্শ রাজ্য সরকারের কাজের অগ্রগতিতে সহায়ক ভূমিকা রয়েছে আদর্শ সাংবাদিকতার। বর্তমান রাজ্য সরকারের উপর সমস্ত কিছুর দায় চাপিয়ে দেওয়ার আগে নিজেদের অভিজ্ঞতায় বিগত দিনগুলি পর্যালোচনা করার আবেদন রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, স্বচ্ছ নিয়মনীতি নিয়ে জনকল্যাণে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে চলেছে সরকার। স্বচ্ছতার লক্ষ্যে কাগজের ব্যবহার কমিয়ে ক্রমশ ডিজিটালাইজেশনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এতে রাজ্যে কর্মসংস্কৃতির ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যের গৌরব ও ইতিহাসের প্রতি আমাদের সম্মানজনক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা আবশ্যক। এই ভাবনা থেকেই পূর্ণরাজ্য দিবস অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ১৮ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে চলেছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের নাগরিকদের দূরদর্শিতার প্রশংসা উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর মুখেও। আমাদের ভাবনার পথেই জীবন ধাবিত হয়। বর্তমান রাজ্য সরকারের প্রতি মানুষের বিশ্বাস থেকেই আমাদের আগামীদিনের কর্মপরিকল্পনা রূপায়ণে প্রেরণা দেয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার সংবাদবান্ধব। সাংবাদিকদের সঙ্গে কিভাবে আরও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা যায় তারজন্য ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সংবাদপত্রের স্বার্থে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা বিগত দিনে অলিক স্বপ্ন ছিলো। সাংবাদিকদের পেনশন এক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দশ হাজার টাকা করা হয়েছে। সাংবাদিকদের সুরক্ষার স্বার্থে তাদের প্রেস জ্যাকেট প্রদান করা হয়েছে। সাংবাদিকদের কিভাবে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনা যায় তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সাংবাদিকদের আবাসন প্রদানের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা চলছে। দুজন সাংবাদিক হত্যার ঘটনার সিবিআই তদন্তের আদেশ দেওয়া হয়েছে। তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী বলেন, প্রত্যেককে সম্মিলিতভাবে রাজ্যের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হবে। কোভিড অতিমারী আমাদের কাছ থেকে মূল্যবান ২টি বছর কেড়ে নিয়েছে। জনমত গঠনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। অন্যদিকে, সংবাদমাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করলে সমাজে নেতিবাচক প্রভাবও পড়ে। দুর্গাপূজার সময় বাংলাদেশে যে অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিলো তাকে কেন্দ্র করে এই রাজ্যেও অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছিলো। বহিরাজ্যের মিডিয়ার একটা অংশ পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করেছিলো। রাজ্য সরকার অত্যন্ত দক্ষ হাতে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে। অনুষ্ঠানে আগরতলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি প্রবীণ সম্পাদক সুবল কুমার দে বলেন, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে সংবাদমাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতেই হবে। যে দেশে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা বেশি সেই দেশ অনেক উন্নতি করেছে। অনুষ্ঠানে রাজ্যের ৭ জন বিশিষ্ট সাংবাদিককে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্ট অতিথিগণ তাদের সংবর্ধনা প্রদান করেন। যাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে তারা হলেন শানিত দেবরায়, মানস পাল, জয়ন্ত ভট্টাচার্য, দেবাশিস ভট্টাচার্য, সৈয়দ সাজ্জাদ আলি, ড. বিশ্বেন্দু ভট্টাচার্য এবং সুমন দেবরায়।
অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা প্রাপকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শানিত দেবরায়, জয়ন্ত ভট্টাচার্য ও সৈয়দ সাজ্জাদ আলি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা প্রেস ক্লাবের সম্পাদক প্রণব সরকার এবং তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা।
আরশিকথা ত্রিপুরা সংবাদ
ছবিঃ সুমিত কুমার সিংহ
৩০শে নভেম্বর ২০২১