Type Here to Get Search Results !

বাগেরহাটে আজও মাথা উঁচু করে রয়েছে ষোড়শ শতাব্দির পুরাকীর্তি অযোধ্যা মঠঃ বাংলাদেশ

উজ্জ্বল কুমার দাস,বাগেরহাট, আরশিকথাঃ

বাংলাদেশের বাগেরহাটে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে ষোড়শ শতাব্দির পুরাকীর্তি অযোধ্যা মঠ ৷ স্থানীয়দের কাছে এটি কোদলা মঠ নামেই বেশি পরিচিত ৷খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে যাত্রাপুর নামক স্থানে এটির অবস্থান ৷

পুরাকীর্তির শহর হিসাবে এ জেলায় রয়েছে সুলতানি আমলের ষাট গম্বুজ মসজিদ ৷ঠিক তার উত্তর পশ্চিমে পুরাতন রূপসা-বাগেরহাট সড়ক ধরে বারুইপাড়া ইউনিয়নে ষোড়শ শতাব্দির উড়িষ্যা স্থাপত্যের আদলে তৈরী এই মঠটি আজও দাঁড়িয়ে আছে মাথা উচু করে ৷ধারনা করা হয় ষোড়শ শতাব্দীর শেষে কিংবা সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এটি তৈরি করা হয়েছিলো ।

প্রায় সম্পূর্ণ মঠটিই একসময়ে পোড়ামাটির ফলকে আচ্ছাদিত ছিল। কেউ কেউ এটাকে প্রাচীন হিন্দু মন্দির হিসাবেও মনে করে থাকেন।এই প্রত্নতাত্ত্বিক অবকাঠামোটি ক্রমাগত সৌন্দর্য হারাতে বসলেও এখনো অযোধ্যা বা কোদলা মঠের বিশেষ আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে এর বাইরের অপূর্ব কারুকাজ সমৃদ্ধ অলংকরণ।

বহুকাল আগে মঠের দক্ষিণ কার্নিসের নিচে প্রায় অদৃশ্যমান দুই লাইনের একটি ইটে খোদাই করা শিলালিপিও পাওয়া গিয়েছিল ৷ তাতে ধারণা করা হয় সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে দেবতার অনুগ্রহ লাভের আশায় এ মঠটি একজন ব্রাহ্মণ কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। মঠের নির্মাণ নিয়ে যে সকল তথ্য জানা যায় এবং সবচেয়ে বেশি স্বীকৃত বারো ভুঁইয়ার অন্যতম রাজা প্রতাপাদিত্যের উদ্যেগে তার গুরু (সভাপন্ডিত) অবিলম্ব সরস্বতীর স্মতিস্তম্ভ হিসাবে মঠটি নির্মান করা হয়।

রাজা প্রতাপাদ্যিতের শাসনমাল থেকে জানা যায়, সে সময় সমগ্র বাগেরহাট প্রতাপাদিত্যের শাসনাধীন ছিল। বিশেষ করে প্রতাপাদিত্যের কাকা বসন্ত রায়ের মৃত্যুর (প্রতাপাদিত্য তার কাকাকে হত্যা করে) বলেশ্বর নদী পর্যন্ত শাসন ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। প্রতাপাদিত্য কাকা, জামাইকে হত্যা চেষ্টা করার স্বত্বেও বহু পন্ডিতকে বৃত্তি দিতেন। সভাপন্ডিতদের মধ্যে অন্যতম প্রতাপাদিত্যর বন্ধুকবি অবিলম্ভ সরস্বতী। তিনি মুখে মুখে দ্রুত কবিতা রচনা করতে পারতেন বলে তার নাম অবিলম্ব সরস্বতী হয়েছিল।

বর্গাকার চতুস্কোণ বিশিষ্ট ভিতের উপর নির্মিত হয়েছে অযোধ্যা বা কোদলার মঠটি।এর উচ্চতা আনুমানিক ১৮.২৯ মিটার। প্রাচীরগুলি চিকন ইটের তৈরি, পুরুত্ব ৩.১৭ মিটার। ভেতরের প্রত্যেক দেয়াল বর্গাকার, দৈর্ঘ্য ২.৬১ মিটার। দেয়ালের ইট লাল পালিশ করা। অযোধ্যা বা কোদলার মঠের প্রবেশ পথ ৩টি। পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণে এ প্রবেশ পথগুলি। ধারণা করা হয় দক্ষিণ দিকের পথটি মূল প্রবেশ পথ। দক্ষিণ দিকের প্রবেশ পথের উপরে আদি বাংলায় মঠটির সম্পর্কে খোদাই করা হয়েছিল। তাছাড়া মঠের একেবারে উপরিভাগের কিছু অংশ ভেঙ্গে পরেছে বলে ধারনা করা হয়।

উড়িষ্যা অঞ্চলে খ্রীষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত যে রেখা’ নমুনার মন্দির নির্মাণ পদ্ধতি দেখা যায় তার প্রভাব এ মঠে আছে বলে ধারণা করা হয়। হয়তো অযোধ্যার মঠ বা কোদলার মঠ কোন দেব মন্দির নয়,সম্ভবত মৃত: মহাত্মার সমাধি স্তম্ভ হিসাবে অনুমান করা হয়। মঠের বাইরের দিকের প্রত্যেক পার্শ্ব দেয়াল বহুভূজ এবং পাঁচটি করে কুলুঙ্গি রয়েছে।বাইরের দিকের সম্মুখ ভাগের প্রত্যেক অংশে ছয়টি সমতল এবং এগারোটি কুলুঙ্গি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে বহুভূজ আকৃতির এই পাঁচটি কুলুঙ্গি। বাইরের দেয়ালের ডিজাইনে নিচ থেকে উপরের দিকে ক্রমান্বয়ে চক্রাকারে বলয় তৈরি করে উঁচুতে সরল অনুভূমিক রেখা সৃষ্টি করে উঠে গিয়েছে।কোদলা মঠের বহির্ভাগের এ অলংকরণই মন্দিরের প্রধান আকর্ষণীয় স্থান।পিরামিডের অনুরূপ উঁচু স্থাপত্যিক গঠনই একে শিখর স্টাইলের সঙ্গে অঙ্গীভূত করেছে। মঠের ভেতরের অংশে ১২/১৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা গুম্বুজ ফাঁকা তলদেশর আকারে উপরে উঠে গিয়ে শেষ হয়েছে।

সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রাচীন এই স্থাপনা। মঠের উপরিভাগের অনেকটা জায়গা জুড়ে বেড়ে উঠেছে গাছ-গাছালি।মঠের উপরি ভাগের বাহিরের ছোট অসংখ্য কুঠরীতে বাসা বেঁধেছে শালিক সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।স্থাপনা প্রাঙ্গনে বিচরণ করে গরু-ছাগল। প্রবেশ পথ নেই সুরক্ষিত। এ অবস্থায় দ্রুত প্রাচীন এই ঐতিহ্যকে সংস্কার করে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন ঘুরতে আসা দর্শনার্থী সহ এলাকার সচেতন মহল।


আরশিকথা বাংলাদেশ সংবাদ

৬ মে, ২০২৩

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.