Type Here to Get Search Results !

ঘুড়ি উৎসবে রঙিন পদ্মার চরের আকাশঃ আরশিকথা বাংলাদেশ

মোঃ শাহ্ জালাল, ফরিদপুর, বাংলাদেশঃ 

  

শুক্রবারের বিকেল ও সন্ধ্যাটা ফরিদপুরবাসীর জন্য ছিল অন্যরকম। এদিন উৎসবের ঘুড়ি ও ফানুসে রঙিন হয়েছে পদ্মার চরের আকাশ। আনন্দ, উচ্ছ্বাসের কেটেছে বিকেল থেকে সন্ধ্যা। সব বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে এ চরাঞ্চল। বহু বছর পর ঘুড়ি উড়িয়ে যেন শৈশবে ফিরে গেলেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার।

পদ্মার চরে ঘুড়ি উড়িয়ে ‘শৈশবে ফিরে গেলেন’ ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার। যেদিকে চোখ যায় মানুষ আর মানুষ। শিশু, তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষসহ সব বয়সী হাজারো মানুষের ঢল নেমেছিল পদ্মা নদীর পাড়ে। আকাশের দিকে তাকালেই দেখা যাচ্ছিল নানা আকারের ও রঙের শত শত ঘুড়ি। দেখে মনে হচ্ছিল, আকাশে শত শত রঙিন পাখি উড়ছে। ঘুড়ি উৎসবের পর সন্ধ্যায় শত শত ফানুস উড়িয়ে অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ মাতিয়ে দেন অংশগ্রহণকারীরা।


ডিসি ফরিদপুর  শিক্ষার উন্নয়নে কামরুল আহসানের হাতে যেন ‘জাদুর কাঠি’।শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) বিকেলে ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের ধলার মোড়ে পদ্মা নদীর পাড়ে এ ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করা হয়। ‘চলো হারাই শৈশবে’ স্লোগানে টিম ফরিদপুর সিটির আয়োজনে ‘পেপারটেক ৭ম ঘুড়ি উৎসব’ এর আয়োজন করা হয। পদ্মার চরে ঘুড়ি উৎসবে অংশ নেন তরুণ তরুণীরাও। 

ঘুড়ি উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রামানন্দ পাল।ভাঙ্গা উপজেলার হামিরদী থেকে আসা শাহিনা বেগম বলেন, ‘প্রতি বছর এই সময়ের জন্য অপেক্ষায় থাকি। সন্তানদের নিয়ে আসি ঘুড়ি উৎসবে। খুবই ভালো লাগে, নিজে ঘুড়ি উড়াই, ছেলে মেয়েরাও ঘুড়ি উড়ায় খুবই ভালো লাগে।’

শহরের কমলাপুরের বাসিন্দা রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘গতকাল স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে ঘুড়ি বানিয়েছি উড়াবো বলে। ঘুড়ি নিয়ে এসেছি, উড়িয়েছি খুব ভালো লেগেছে। ঘুড়ি উড়ানোর সময় শৈশবের কথা খুব মনে পড়ে যায়। আলাদা একটা ভালোলাগা ফিল করি।’

ঘুড়ি উৎসবের পাশাপাশি ঘুড়ি বিক্রিরও ব্যবস্থা ছিল সেখানে। উৎসব দেখতে ফরিদপুর শহর ছাড়াও এসেছেন বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলার লোকজন। বিকেলের ঘুড়ি উৎসবের পর সন্ধ্যায় অন্ধকার নেমে এলে শত শত ফানুস উড়িয়ে অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ মাতিয়ে দেন অংশগ্রহণকারীরা।এদিন পদ্মার চরে বিকেলের আকাশ রঙিন হয়ে ওঠে বিভিন্ন রঙের ঘুড়িতে। 

সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী তাফসিয়া বলেন, ‘বিকেলে ঘুড়ি উড়িয়েছি, সন্ধ্যায় ফানুস উড়িয়ে আনন্দ করেছি। ভালো একটা দিন কাটল। বান্ধবীদের সাথে এসেছি, সবাই খুব মজা করেছি।’

ইয়াসিন কলেজের শিক্ষার্থী আশরাফ হোসেন বলেন, ‘এধরনের উৎসব একেবারেই হারিয়ে গেছে। প্রতিবছর এখানে আয়োজন করা হয় ঘুড়ি উৎসবের। অপেক্ষায় থাকি এই দিনের জন্য। ঘুড়ি উৎসব হারিয়ে যেতে বসেছে। এই আয়োজন প্রতিবছর হোক প্রত্যাশা করি। ঘুড়ি উৎসবে বিভিন্ন বয়সী হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে। অনেকে ঘুড়ি বানিয়ে নিয়ে এসেছে, আবার কেউ কেউ এখান থেকে কিনে নিয়েছে।’

ঘুড়ি বিক্রি করতে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অপেক্ষায় থাকি ঘুড়ি উৎসবের। এক মাস আগে থেকেই ঘুড়ি তৈরি শুরু করি। দেড়শ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত একেকটি ঘুড়ি বিক্রি করে থাকি। প্রায় দুইশ ঘুড়ি বিক্রি করেছি।’

ফরিদপুরের ডিসি বলেন,খেলাধুলা তরুণদের ভালো মানুষ হওয়ার সহায়ক। ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, ‘গ্রাম বাংলার ঐহিত্য ঘুড়ি উৎসব হারিয়ে যেতে বসেছে। এই ঘুড়ি উৎসবের যারা আয়োজন করেছে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। প্রতিবছরই এধরনের আয়োজন যাতে করা হয়, সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করব।’



বিকেলে ঘুড়ি উৎসব শেষে সন্ধ্যায় ফানুসের আলোর ছটা পদ্মার চরের আকাশে। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, ‘পদ্মার চরে ঘুড়ি উৎসবের পাশাপাশি গ্রাম বাংলার আরও বেশ কিছু ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে, সেগুলোও ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বিনোদনের আরও বেশ কিছু আয়োজন এখানে করা হবে। আগামীতে ঘুড়ি উৎসবের পাশাপাশি গ্রামীণ মেলারও আয়োজন করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘুড়ি শুধু ঘুড়ি নয়, ঘুড়ি আমাদের একটি স্বপ্ন। আমাদের হারিয়ে যাওয়া শৈশবের স্বপ্ন। আমাদের সকল কল্পনাকে নিয়ে ঘুড়ি যখন আকাশে উড়ে বেড়ায়, আমরা শুধু তাকিয়ে থাকি না, আমরা উপভোগ করি। এ সৌন্দর্য ফরিদপুরবাসীর মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’


ঘুড়ি উৎসবের আয়োজনকারী সংগঠন টিম ফরিদপুর সিটির এমদাদুল হাসান বলেন, ‘গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতিবছরই ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করা হয়। শৈশবের স্মৃতি ফিরিয়ে আনতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। ঘুড়ি উৎসবে বিজয়ী ২০ জনকে পুরস্কার দেয়া হবে। এছাড়া ঘুড়ি উৎসব থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে অসহায় মানুষকে সহায়তা করা হয়ে থাকে।


আরশিকথা বাংলাদেশ সংবাদ
২৬ জানুয়ারি ২০২৪

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.