Type Here to Get Search Results !

আন্তর্জাতিক পাপেট উৎসবে রবীন্দ্র ভবন জনজোয়ারে ভাসলোঃ আরশিকথা আগরতলা

আমার মেয়ের বায়নায় আমি জীবনে প্রথমবার পাপেট শো দেখতে আসি।এসে আমি অভিভূত। গতকাল  ২৬ শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রবীন্দ্র ভবনের ২নম্বর হলে উদ্বোধন ও একটি পাপেট শোয়ের মাঝখানে বলছিলেন শ্রী এস দেববর্মা।

কানায় কানায় ভর্তি হল।দর্শক হলের সিঁড়িতে বসে পড়েছেন, অনেকেই দাঁড়িয়ে।এ এক অদ্ভুত বিস্ময়ে দর্শকের অভিজ্ঞতার কথা শুনছিলাম।সময়ের থেকে অনেকটা পিছিয়ে শুরু হলেও মুগ্ধ হয়েছি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখে,বললেন সোমা রায়।তার কথায় একটু বিরক্ত লাগছিল দেরি হচ্ছে দেখে তারপর সময় কি মন্ত্রমুগ্ধের মত কেটে গেল।বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারিনি।

পুতুল নাচাচ্ছেন প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী যিষ্ণু দেববর্মণ,সমাজ কল্যাণ  ক্রীড়া মন্ত্রী টিঙ্কু রায় সহ মঞ্চে আসীন অতিথিগন।সবাই যেন ছেলেবেলায় ফিরে গেছেন।সব চাইতে বড় বিস্ময় ৯৪ বছরের তরুণ,হুইল চেয়ারে কলকাতা থেকে আসা বিশ্ব বিখ্যাত পাপেটিয়ার পদ্মশ্রী সুরেশ দত্ত। তার হাতেও পুতুল নাচলো।


আমি ছোটবেলায় পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ায় বড় হয়েছি,পুতুল নাচ দেখেছি অন্যরকম।উপর থেকে সুতোয় বাঁধা পুতুল।আর ত্রিপুরায় পুতুল নাচ দেখা এই প্রথম।একটা দল সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছে,না এলে মিস করতাম। সোমা দেবী শুধু নয় অনেকেই বলছেন না এলে মিস করতেন।ঝাঁসির রাণী লক্ষ্মীবাঈ - এটুকু সময়ে পুরো জীবন তুলে আনা - অসামান্য দক্ষতা নিয়ে কাজটি হয়েছে। এমন একটি শো দেখলাম যা জীবনে ভুলবনা।আর হল ভর্তি জনসমুদ্রে আমি ও একজন এটা আমাকে রোমাঞ্চিত করেছে।

যে কোন দর্শক শ্রোতার চোখে মুখে তৃপ্তির ছাপ নজর এড়ায়নি পাশের দর্শকের।দুজন অপরিচিত দর্শক পরিচিতির গন্ডি পেরিয়ে আলোচনা করেছেন এমন আয়োজনের।


উদ্ধোধনের মঞ্চে বক্তারা বাহবা দিলেন বললে ভুল হবে তারাও যেন উদ্যোক্তা হয়ে উঠলেন তাদের মেধাও মননসমৃদ্ধ বক্তৃতার সময়।

ঝাঁসির রাণী লক্ষ্মীবাঈ মঞ্চস্থ হবার পর রবীন্দ্র ভবনের বারান্দায়  শ্রী কৃষ্ণ পুতুল নৃত্য সংস্থার নিত্যানন্দ শর্মার পরিচালনায় "মনা বড়ি বায় রে "উপস্থাপিত হয়।এখানে ও মঞ্চের সামনে কোনভাবে যেন একটু চোখ রাখা আর কান পাতা যায় এমন ভাবে বডি ব্যালেন্স করে দর্শকদের ভিড়।সেই মুহূর্তে জায়গা নিয়ে মনকষাকষি নয়,সব দর্শক হয়তো ভাবছিলেন যেন আমার পাশের মানুষটিও যেন দেখতে পান। অন্যদিকে তখন রবীন্দ্র ভবনের ২ নম্বর হলে তৃতীয় পাপেট শোর মঞ্চ রেডি। ঘড়ির কাটা ন'টা পেরিয়েছে, নির্ধারিত সময় ছিল ৭-৩৫। অপরিসীম ভালো লাগা নিয়ে দর্শক আবার ফিরে এলেন হলে।  সত্তর উর্ধ্বে র দর্শক ও তখন জীবনের নিয়মের ছক ভেঙ্গে অপেক্ষায়।এবার মঞ্চে ইউ নাইটেড ষ্টেটস অব আমেরিকার পাপেট "পেঙ্গুইন ইন মাই পকেট।" পরিচালনায় কার্ট হান্ট মারিয়াসিস।


একজন মানুষ মঞ্চ তৈরি থেকে দারুণ দক্ষতায় দর্শক আসনে বসা দর্শকদের মঞ্চে নিয়ে অংশগ্রহণ করিয়েছেন।

দ্বিতীয় দিন- বর্ধমান দা পাপেটের" নীল বর্ণ শেয়াল" এবং বাংলাদেশের "দুষ্টু রাখাল "দর্শকদের মোহিত করেছে।ঐ সন্ধ্যায় ত্রিপুরা পাপেট থিয়েটারের ছোটদের "রাজা ও কাঠবেড়ালি "উপস্থাপনা দেখে বোঝা গেছে উত্তরসূরি তৈরি হয়েছে।গত বছর খানেক ধরে তাদের কয়েকটি উপস্হাপনা দেখে একবাক্যে সবাই একমত পুতুল নাচকে মাধ্যম করে অনেক বার্তা সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়।

তৃতীয় দিন সকালে পাপেট নিয়ে সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন পাপেটের সাথে যারা যুক্ত রয়েছেন শুধু তারা নয়, অনেকেই পাপেটের খুঁটিনাটি জানতে চেয়ে।

শেষ সন্ধ্যায় বর্ধমানের দ্য পাপেটিয়ার,পশ্চিম বাংলার গ্লোব পাপেট,রাজস্থানের স্ট্রিংগ পাপেট। এছাড়া স্পেন ও ব্রাজিলের ইজাবেলা ব্রোচাডো, মার্কোস আন্তোনিও পেনা ফারোর উপস্থাপনায়  ডন কুইক্সোট এবং তার বিশ্বস্ত স্কয়ারের পারফরমেন্স।


নিউ দিল্লির ঈশারা পাপেট ট্রাষ্ট নিবেদিত পদ্মশ্রী দাদি পাদুমজীর পরিচালনায় মহাত্মা গান্ধীর জীবন ও দর্শনকে নিয়ে ইমেজ অফ ট্রুথ দর্শকদের নিয়ে গেছেন অন্যজগতে।

না প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দর্শক বললেন, পুতুল নাচ নিয়ে উৎসব এত ছোট হলে না করলে আমরা সবাই বসে দেখতে পারতাম।এমন হল ভরা দর্শক নিয়ে রবীন্দ্র ভবনে অনুষ্ঠান- মঞ্চের অতিথি দের প্রত্যেককের কথায় উঠে এসেছে। পাপেট উৎসবে সুবর্ণজয়ন্তীকে নিজেদের ভালো লাগায় জড়িয়ে রাখবেন দর্শকদের প্রত্যাশা তাই।বছর ভর নিজেদের এতিহ্য পরম্পরাকে ধরে রাখবেন উত্তরসূরি দের ভালোবেসে সচেতনতার মোড়কে।

সব মিলিয়ে ত্রিপুরা পাপেট থিয়েটারের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষের এই আয়োজন দারুণ সাড়া ফেলেছে।শহরে বই মেলা,মিলন মেলা,আরো নানা অনুষ্ঠান চলছে লোক সমাগম কতটা হবে এই ভাবনা যেন কোথাও ছাপ ফেলেনি।


তিনদিন ব্যাপি এই আয়োজনে সারা শহর ছিল রবীন্দ্রভবনমুখী।পরপর তিনদিন পাপেট উৎসবকে কেন্দ্র করে যে জনজোয়ার তা স্মরণকালে অনেকেই দেখেনি। আন্তর্জাতিক পাপেট উৎসব বছরে একবার হোক অনেকেই বলছেন। ত্রিপুরা পাপেট থিয়েটার তাদের সুবর্ণজয়ন্তী বছরে রাজ্যবাসিকে যে উপহার দিয়েছে,তা অবশ্যই অভিনন্দন যোগ্য। ধৈর্য্য,একাগ্রতা,নিষ্ঠা নিয়ে পঞ্চাশ বছর আগে শিল্পী প্রয়াত হরিপদ দাশ যে পাপেট শুরু করেছিলেন তার উত্তরসুরী পুত্র প্রভিতাংশু দাশ  সেই মশাল বহন করছেন। এবং আন্তরিক ভাবে সহশিল্পী রা সহযোগিতা করে চলেছেন।তৈরি হচ্ছে ত্রিপুরা পাপেট থিয়েটারের জুনিয়র গ্রুপ। ত্রিপুরা পাপেট থিয়েটারের সাথে যারা যুক্ত ছিলেন চিত্তরঞ্জন পাল ,যাদব সাহা জয়নারায়ন ভট্টাচার্য প্রাণগোপাল  মজুমদার,প্রণবকর, বিদ্যুৎ রায়চৌধুরী, অঞ্জন দেবকে হরিপদ দাস সম্মাননা প্রদান করা হয়। আন্তর্জাতিক পাপেট উৎসবে রবীন্দ্র ভবন জনজোয়ারে ভাসলো।


নন্দিতা দত্ত, ত্রিপুরা


আরশিকথা হাইলাইটস

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪










 




 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.