Type Here to Get Search Results !

গন্ডাছড়ায় মানবতার দৃষ্টান্তে সর্বস্ব খোয়ানো শরণার্থীদের পাশে দাঁড়াল বৃহন্নলারা ঃ আরশিকথা ত্রিপুরা

বিশেষ প্রতিনিধি, আগরতলা, আরশিকথাঃ


সমাজে এরা শিখন্ডি বা বৃহন্নলা হিসেবে পরিচিত। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় তাদেরকে অনেকেই এখনো নিচু নজরে দেখেন। প্রকৃতির খেয়ালে তাদের অনেকের চলাফেরা, আচার-আচরণ পুরুষ হলেও  নারী সুলভ কিংবা নারী হলে পুরুষের মত। কিন্তু তারাও যে মানুষ সেই ভাবনাটাই বর্তমান সমাজের মানুষজনের ভেতরে নেই। মানুষ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার অধিকারের লড়াইটা তারা দীর্ঘদিন ধরেই লড়ছেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তারা আজ অনেকটাই নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। ভোট দেবার অধিকার পেয়েছেন, পেয়েছেন অন্য কিছু অধিকারও। কিন্তু তারপরেও আজকের দিনেও খুব ভালো নজরে তাদেরকে দেখা হয় না। তাই বিভিন্ন সময়ে অনেকেই তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেন। তাদের সমাজবর্জিত করে দূরে সরিয়ে রাখেন। কিন্তু মানবিকতা তাদের ভেতরেও রয়েছে। তারাও যে সমাজেরই লোক আবারো সেই প্রমাণ রাখল বৃহন্নলারা। তারাই আজ সমাজের একাংশ বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ালো। কিন্তু তাদেরকে হয়তো বা সভ্য সমাজ পরিবারের অঙ্গ বলে মনে করে না। কিন্তু তারপরেও আসলে তারা সকলে আমাদের পরিবারের এবং সমাজের অঙ্গই। কিন্তু এই সমাজে তাদের পরিচয় দেওয়া হয়, বৃহন্নলা, হিজড়া এবং তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে। এমনও দেখা গেছে, নিজেদের উদার মনস্ক এবং আধুনিক মনস্ক বলে জাহির করা শিক্ষিত ও ভদ্র সমাজ আজকেও তাদের হিজরা বলে তাদের দেখলে বাড়ির গেইট লাগিয়ে ফেলে। কিন্তু এই বৃহন্নলারা এবার মানবিকতার এক নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করল। গত ১১ ও ১২ জুলাই অশান্ত গন্ডাছড়ায় সর্বহারা হয়েছে প্রায় শতাধিক পরিবার। এখনো তারা গন্ডাছড়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে আছেন। সেই বিপন্ন মানুষজনের পাশেই এবার দাঁড়ালেন বৃহন্নলারা। এদের নিজস্ব আয় বলতে কিছু নেই।  সকাল থেকে রাত অবধি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে, মানুষের বাড়ি বাড়ি সদ্য জন্মানোর ছেলে নাচিয়ে, নাচ গান করে কিংবা বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে গিয়ে চেয়ে চিন্তে যৎসামান্য রোজগারেই এই সম্প্রদায়ের লোকজনদের মূল পেশা।  আর এবার ঘুরে ঘুরে সংগৃহীত সেই টাকা দিয়ে মহিলাদের জন্য কাপড় এবং শিশুদের জন্য জামা কিনে বৃহন্নলা সম্প্রদায়ের এই লোকজনরা শুক্রবার হাজির হলেন গন্ডাছড়ায়।  তাদের দলের সদস্য পূজা কায়স্থ এবং লতা পাল জানিয়েছেন, মানুষ তাদের যাই ভাবুক না কেন, মানুষের দুঃখে তাদের হৃদয় কাঁদে। গন্ডাছড়ায় দুদিনের তান্ডবে যারা শুধুমাত্র পরনের কাপড়টুকু ছাড়া সর্বস্ব হারিয়েছেন, তাদের জন্যই তারা কাপড় ও শিশুদের জন্য জামা কিনেছেন। তাদের যতটুকু ক্ষমতা সেই ক্ষমতা অনুযায়ী এই সমস্ত বস্ত্র তারা অসহায় মানুষজনের মধ্যে বিলি করেছেন। মানুষ জানে না কার ভাগ্যে কি আছে। আমরা কেউই জানিনা আগামীকাল আমাদের কি হবে। তবে ভাগ্যের সাথে লড়াই করার মানসিকতা নিয়ে অসহায় লোকজনদের সাহস দিতে আমরা  প্রস্তুত। আর বাকিটা নির্ভর করবে উপরওয়ালার প্রতি। তাই মানুষের এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে এসে আমরা দাঁড়িয়েছি। বৃহন্নলাদের এই আন্তরিকতায় মুগ্ধ ক্যাম্পে থাকা শরণার্থীরা। গণ্ডাছড়াবাসী ও দেখলো তাদের মানবিকতা। দুঃসময়ে যারা অসহায় মানুষদের পাশে এসে দাঁড়ায় তারাই যে সমাজের দায়িত্ববান সমাজসেবী এদিন প্রমাণ করলো পূজা এবং লতারা। তাই গণ্ডাছড়ার সচেতন নাগরিকদের এদিন জোর গলাতেই বলতে শোনা গেল, দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আজকের দিনে বৃহন্নলারা  ভন্ড সমাজসেবীদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে প্রকৃতপক্ষে পাশে এসে দাঁড়ানো কাকে বলে। তারা জানিয়েছেন আবার আসবেন গন্ডাছড়ায়। অসহায় মানুষদের এ দৃশ্য দেখে তারা অত্যন্ত মর্মাহত। 


আরশিকথা ত্রিপুরা সংবাদ

২৬শে জুলাই ২০২৪
 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.