Type Here to Get Search Results !

খড়ম.....আরশি কথা'র অতিথি কলামে অরিন্দম নাথের বিশেষ প্রতিবেদন


মানব-সভ্যতার শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার বোধকরি আগুন তারপরে নিশ্চয়ই আসবে চাকার আবিষ্কার আর মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা চিন্তা করলে জুতা-আবিষ্কারও একটি ল্যান্ড-মার্ক আমরা তাই মহারাজ হবুচন্দ্রকে এতো ভালোবাসি :কহিলা হবু, ‘শুন গো গোবুরায়,
কালিকে আমি ভেবেছি সারা রাত্র,
মলিন ধুলা লাগিবে কেন পায়
ধরণী-মাঝে চরণ ফেলা মাত্র

পঙক্তিগুলি কবিগুরুরজুতা-আবিষ্কারকবিতা থেকে নেওয়া রাজা হবুচন্দ্র এমন-ধারা না ভাবলে জুতা-আবিষ্কার কত শত-সহস্র বছর পিছিয়ে যেত সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে জুতার দোকানদারদের উচিত হবুচন্দ্রের একটি আদর্শ মুরতি কল্পনা করে পূজা করা

আমি উত্তর জিলার মানুষ সিলেটী ভাষার প্রতি আমার খানিকটা দুর্বলতা তাই সুন্দরী মোহন দাসের লেখা সিলেটী রামায়ণের কয়েকটি পঙক্তি মন থেকে একটু বিস্তৃত উদ্ধৃতি দিচ্ছি:
দশরথে আইজ্ঞা দিলা রাম হইতা রাজা
হুনিয়া বড় সুখী হইলা রাজ্যর যত প্রজা ৷৷
কেকৈর এক বাপর বাড়ির বান্দি কপালপুড়া
পিঠ যেলান মন হেলান ধনুর লাখান তেরা ৷৷
কেকৈরে কইলা গিয়া রাম রাজা হইত
তর ছাওয়াল ভরত বুঝি ক্ষুদর জাও খাইত ৷৷
বড়র পুয়া রাজা হইলে তুই হইবে বান্দি
ভরত রাজা হইবার লাগি পড়গি কান্দি ৷৷
হুনিয়া কেকৈর মাথা চৌরঙ্গী দিলাইলো
গুঁসা করিয়া উপাশ থাকি মাটির উপর হুইলো ৷৷
দশরথে দেখি কইলো ইতা কর কিতা ?
দন্ডত্ দিতাম পারি তুমি চাও যেতা ৷৷
কেকৈ উঠিয়া কইলা রামরে পাঠাও বনে
আমার ভরতরে বউআও সিংহাসনে ৷৷
সুইয়া রানীর কথা হুনি রাজা গলি গেলা
কইলা কান্দিও না সোনা তোমার কথাঔ ভালা !
রাম গেলা বনবাসে ভরত বড় বোকা
সিংহাসনও আনি বসাইলা রামর পাদুকা ৷৷’ 

ভরত রামের প্রতি শ্রদ্ধাবশত: রামের পাদুকা বা জুতা সিংহাসনে রেখে চৌদ্দ বছর রাজত্ব করেছিলেন কিন্তু এথেকে বোঝা যায় রামায়ণের সময়ে অর্থাৎ ত্রেতা যুগে কিংবা এরও আগে জুতা আবিষ্কৃত হয়েছিল রাজা হবুচন্দ্র তাই রামের পূর্বসূরি তিনি হয়তো সত্যযুগে জন্মে ছিলেন
সে যাক আমরা উত্তর জিলার লোকেরা রাম যে ধরণের পাদুকা পায়ে দিতেন সেগুলিকেখড়মবলি খড়ম কাঠের সোলের চপ্পল পায়ের বুড়ো আঙ্গুল এবং তর্জনীর ফাঁকে আটকে থাকার কাঠেরই গ্রিপ থাকে মুনি ঋষিরা, আমাদের বয়স্ক পূর্বজরা খড়ম ব্যবহার করতেন খড়মের ব্যবহার এখন কমে গেছে খড়ম একটি অস্ত্রও বটে খড়ম-পেটা করার অসংখ্য নজির পাওয়া যায়
ভরত ছিলেন প্রক্সি রাজা প্রতীক হিসাবে রামেরখড়মসিংহাসনে রাখতেন চৌদ্দ বছর এই প্রক্সি ব্যবস্থাকে আমাদের অঞ্চলে এক কথায়খড়মবলা হয় কিছুদিন আগের ঘটনা আমার এক সহকর্মী পুলিশের ডি.এস.পি. তারও বাড়ি উত্তর জিলায় পুলিশ সদরে মিটিং চলছে মহকুমা পুলিশ আধিকারিকদের নিয়ে ওর যখন বলার টার্ন এলো সঠিকভাবে বড় সাহেবদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছিল না বার বার ছন্দপতন হচ্ছিল এক পর্যায়ে সে বলে উঠল, ‘আমি খড়ম স্যার
সবাই মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছিল উত্তর শুনে আমি বুঝিয়ে বললাম সে বলতে চাইছে আসল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক ছুটিতে সে তার জায়গায় প্রক্সি দিচ্ছে তাই সব প্রশ্নের উত্তর সঠিক দিতে পারছে না সভায় হাসির রোল উঠল কিন্তু, সেই থেকে বেচারার নাম পড়ে গেলখড়ম

লেখকঃ  অরিন্দম নাথ, পুলিশ আধিকারিক
       ত্রিপুরা  
       

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.