Type Here to Get Search Results !

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী’

 ব্যুরো এডিটর, ঢাকাঃ
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা সংস্থা সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত বলে চিহ্নিত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ(টিআইবি)। জনগণের কাছ থেকে নেয়া মতামতের ভিত্তিতে দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত শীর্ষ সেবাখাত হিসেবে উল্লেখ করেছে টিআইবি। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থার বাংলাদেশ শাখা ২০১৭ সালের এক খানা জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার প্রশাসন, ভূমি সেবা, কৃষি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, বিচারিক সেবা, বিদ্যুৎ, ব্যাকিং, বিআটিএ, কর ও শুল্ক, এনজিও, পাসপোর্ট, বিমা, গ্যাস সেবা গ্রহণকারীদের ওপর এই জরিপ করা হয়। জরিপে অংশ নেওয়া ৮৯ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, ঘুষ না দিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সেবা পাওয়া যায় না। জরিপ অনুযায়ী দুর্নীতিগ্রস্ত খাতের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পাসপোর্ট অফিস, তৃতীয়- বিআরটিএ এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে বিচারিক ব্যবস্থা। বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে ওই খানা জরিপের তথ্য প্রকাশ করা হয় সংবাদ সম্মেলন করে। জরিপটি প্রকাশ করেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৭ সালে দেশজুড়ে খানা জরিপ পরিচালনা করে টিআইবি। এতে সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের ভিত্তিতে জনগণের মতামত জানতে চাওয়া হয়। এই জরিপের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে দুর্নীতিগ্রস্ত শীর্ষ খাত হচ্ছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। জরিপে অংশ নেওয়া ৮৯ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, ঘুষ না দিলে এই খাতে সেবা পাওয়া যায় না। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক জানান, জরিপে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে খানা প্রতি গড়ে ঘুষ দেওয়ার পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ৯৩০ টাকা। কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতে এই পরিমাণ টাকা দিতে বাধ্য হয়েছে মানুষ। তবে টাকার অংকে সর্বোচ্চ ঘুষ আদায়ের তিনটি সংস্থার মধ্য আবার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নয়। এতে আছে যথাক্রমে গ্যাস, বিচারিক সেবা ও বিমা খাত। ২০১৭ সালে টিআইবি জরিপে বলা হয়, যেসব খাতে জরিপ করা হয়েছে তাতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রাক্কলিত ঘুষের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৬৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এটি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ এবং জাতীয় বাজেটের ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। প্রতিবেদনে টিআইবি বলছে, ২০১৭ বছরে বীমা খাতে সেবা গ্রহণের উপর ৫০৯ কোটি ৯০ লাখ টাকার ঘুষ বা নিয়ম বহির্ভুত ভাবে অর্থের লেনদেন হয়েছে। একই ভাবে ব্যাংকিং খাতে ১১২ কোটি ৯০ লাখ টাকার লেনদেন হয়ছে। এতে বীমা বিষয়ে বলা হয়েছে, দেশে সরকারি ও বেসকারিভাবে ৭৭টি বীমা কোম্পানি কাজ করছে। আর এ খাত থেকে সাধারণ জনগণের সেবা নেওয়ার হার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই খাত থেকে সেবা গ্রহণের সময় জনগণকে নানা ধরনের দুর্নীতি, অনিয়ম ও হয়রানির শিকার হতে হয়। ঘুষ দেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বীমা সংক্রান্ত সেবা গ্রহণকারী খানাগুলো যারা ঘুষ দিয়েছে বা দিতে বাধ্য হয়েছে তারা কারণ হিসেবে হয়রানি বা জটিলতা এড়ানো (৮৪.১ শতাংশ), টাকা না দিলে সেবা না পাওয়া (৫৪.৮ শতাংশ), নির্ধারিত ফি জানা না থাকায় অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া (১৭.১ শতাংশ), নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দ্রুত সেবা পাওয়া (১২.৪ শতাংশ) এবং নির্ধারিত সময়ে সেবা পাওয়া (৫ শতাংশ) উল্লেখ করেছে। জরিপে ব্যাংকিং খাতে অন্তর্ভুক্ত খানার ৬৭.১ শতাংশ ব্যাংক থেকে সেবা গ্রহণ করছে। সেবাগ্রহণকারী খানার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৫৪.৩ শতাংশ, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ৫০.৬ শতাংশ, কৃষি ব্যংক/রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ৭.৬ শতাংশ, অন্যান্য বিশেষায়িত ব্যাংক ১ শতাংশ, বৈদেশিক বাণিজ্যিক ব্যাংক ০.৫ শতাংশ এবং অ-তফসিলি ব্যাংক থেকে ৫.৫ শতাংশ সেবা গ্রহণ করেছে। এছাড়া খানার সদস্যরা ব্যাংক থেকে যেসব সেবা নিয়েছে তার মধ্যে ৪৮ শতাংশ খানা টাকা উত্তোলন, ৪৭.৪ শতাংশ খানা বিভিন্ন পরিসেবার বিল প্রদান, ৪৩.৭ শতাংশ খানা টাকা জমা, ১৫.৫ শতাংশ খানা ডিপিএস, ১০ শতাংশ খানা বেতন, ভাতা ও পেনশন উত্তোলন, ৯ শতাংশ খানা ঋণ গ্রহণ (ব্যক্তিগত, বাড়ি নির্মাণ, গাড়ি ক্রয়) করেছে। সেবা গ্রহণকারী খানার মধ্যে ৫.৭ শতাংশ খানা বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছে। সেবা গ্রহণকারী খানার মধ্যে ১.১ শতাংশ খানাকে ঘুষ বা নিয়ম বহির্ভুত অর্থ, ৩.৪ শতাংশ খানা সময় ক্ষেপন এবং ২.৯ শতাংশ খানা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অনীহা বা অসহযোগীতার সম্মুখীন হয়েছে। এছাড়া ১ শতাংশ অন্যান্য (প্রতারণা, মৌখিকভাবে আংশিক তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন করা, ভাংতি টাকা না দেওয়া, ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ না করলে ডিপিএসের টাকা জমা না নেওয়া প্রভৃতি) বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছে। ব্যাংক থেকে সেবা নিতে যেসব খানা ঘুষ বা নিয়ম বহির্ভুত অর্থ দিয়েছে তাদের গড়ে ৩ হাজার ৯৮৫ টাকা (গ্রামাঞ্চলে ২ হাজার ৭৪৬ টাকা এবং শহরাঞ্চলে ৪ হাজার ৮৫৭ টাকা) দিয়েছে বা দিতে বাধ্য হয়েছে। প্রতিষ্ঠানভেদে সেবা গ্রহণকালে ৭.৪ শতাংশ খানা কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, ৭.২ শতাংশ খানা অন্যান্য অ-তফসিলি ব্যাংক, ৫.৪ শতাংশ খানা রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৪.৪ শতাংশ খানা বিশেষায়িত ব্যাংক এবং ৩.৫ শতাংশ খানা বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে দুর্নীতির শিকার হয়েছে। সেবার ধরন অুনযায়ী দেখা যায়, ১২.৩ শতাংশ খানা ঋণ গহণ সংক্রান্ত সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির শিকার হয়েছে। এছাড়া ৯.৪ শতাংশ কৃষি ঋণ গ্রহণে, ৮.২ শতাংশ খানা মেয়াদি সঞ্চয় হিসাবের ক্ষেত্রে, ৪.৬ শতাংশ খানা রেমিট্যান্স উত্তোলন, ৪.৫ শতাংশ খানা সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচীর আওতায় প্রাপ্ত ভাতা উত্তোলন, ৪ শতাংশ খানা ডিপিএস সংক্রান্ত, ৩.৩ শতাংশ খানা চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাবরক্ষণ সংক্রান্ত, ৩.১ শতাংশ খানা বেতন, ভাতা ও পেনশন উত্তোলন, ২.৬ শতাংশ খানা বিভিন্ন পরিসেবার বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে দুর্নীতির শিকার হয়েছে। জরিপে ঘুষের শিকার হওয়া খানা ঘুষ দেওয়ার যেসব কারণ উল্লেখ করেছে তার মধ্যে ঘুষ বা অতিরিক্ত অর্থ না দিলে সেবা না পাওয়া (৬১.৬ শতাংশ), হয়রানি বা ঝামেলা এড়ানো (৫১.৪ শতাংশ), নির্ধারিত সময়ে সেবা পাওয়া (৩৯.৮ শতাংশ), দ্রুত সেবা পাওয়া (১৩ শতাংশ) অন্যতম। এছাড়া অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে নির্ধারিত ফি জানা না থাকায় অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া (৪.৩ শতাংশ), অবৈধভাবে ঋণ পাওয়া (১.৩ শতাংশ)।

৩১শে আগস্ট ২০১৮ইং

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.