28/07/18.ইং.....
পরের দিন অর্থাৎ 29/07/18ইং সকাল ছয়টা নাগাদ বের হতে হবে ।গন্তব্য ওপার।তাই আগের দিন অর্থাৎ 28/07/18 ইং সারা দিনমান মন উত্তেজনায় টগবগ। চললো মানসিক প্রস্তুতি।সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই রাতের প্রহর গোনা শুরু।সাথী আমার ফেলে আসা স্কুলের দিদি ও সহকর্মী সাগরিকা দি ও উনার হাজব্যান্ড শ্রদ্ধেয় কাঞ্চন দা।
কাপড় চোপড় ইস্ত্রী শেষে ব্যাগ পুটুরী নিয়ে বসলাম।মনে এঁকে চলেছি বাবা মায়ের জন্মভূমির ছবি।যখন বারো ক্লাশে পড়তাম তখন বাবা মায়ের সাথে ওপারে গেছিলাম।সে স্মৃতি এখন ঘোলাটে।ছেলের কাপড় চোপড় গোছাতে গিয়ে মনে পড়লো সেইদিন আমার মা আমার কাপড় চোপড় গোছগাছ করেছিলেন।আজ আমার ছেলে বারো ক্লাশে,ওর মা ওর ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছে।গন্তব্য একটাই।টান ও একটাই।ভাটির টান।
বাবা ঠাকুর্দা দেশ ছেড়ে এসেছেন দেশ বিভাগের পূর্বেই।তবু মনে হয় এখনো আমার পিতৃভূমি,মাতৃভূমি।আমার বাবা মধুমেহ,হার্ট কিডনী ইত্যাদি বিবিধতে আক্রান্ত হওয়ায় প্রায়ই বিস্তৃতির অতলে ডুবে যান।তখন উনি পুরনো জন্মভূমিকে খুব ভালো স্মৃতিতে আনতে পারেন।একেই বোধহয় বলে জন্মমাটির টান।উনি তখন অবুঝ শিশুর মত খিলখিল করে হেসে উঠেন।বাবার এই শিশুরূপ আমাকে বাংলার মাটিতে স্বপ্নের মত টেনে নিয়ে যায়।চোখে আঁকি কেবল।
হঠাৎ সম্বিত ফিরে আসে ব্যাগ গোছানোর ফাঁকে পাসপোর্টের দিকে নজর পড়তেই।এদেশী বলে ওদেশে যাওয়ার অনুমতি নিয়ে যেতে হবে।নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ আমাকে আমার পূর্বজদের মাটিতে পা দিতে আমাকেই অনুমতি নিতে হবে।মন কেঁদে উঠে।কারন দেশটা এখন আর আমার নয়।বিভাজনে কাঁটাতার দিয়ে কাঁটা বিঁধে দেওয়া হয়েছে মনে।তোমার ওইদেশ,আমার এইদেশ ,এই গাঁথামালায়।
মনের ভিতর বাংলাকে চিত্রায়িত করতে গিয়ে বাংলার পথঘাট,মাঠ,জলাভূমি অনায়াসে ছুটে আসে এক অমোঘ টানে।এড়ানোর ক্ষমতা নেই।অন্তর খুড়ে বাঁকে বাঁকে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে অবলীলায় ছূটে যাচ্ছে।চোখে ভাসছে নদীর চিত্ররেখা,মনের শিকড়ে গেঁথে যাচ্ছে সবুজ বনানী।
ঘড়িতে রাত বারোটা।হাতে মাত্র পাঁচ ঘন্টা।শিহরিত হচ্ছি বারবার।চোখ বুঁজলে ঘুমের দেশে পাড়ি জমাতে পারব কি না কে জানে,না কি ভীনদেশী স্বপ্নেরা ভীড় জমাবে চোখের পাতায়।এই ভেবে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।----------
( চলবে)
কাহিনীকারঃ রীনা দাস,শিক্ষিকা,ত্রিপুরা
ছবিঃ সৌজন্যে কাহিনীকার
১২ই আগস্ট ২০১৮ইং
শুরুতেই জমিয়ে দিয়েছেন ৷ অপেক্ষায় রইলাম বাংলার মানুষ ও প্রকৃতির নান্দনিক সান্নিধ্যের ৷
উত্তরমুছুন