29/07/18 ইং (দ্বিতীয় অংশ)
অতঃপর কাকভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেল।বের হয়ে পড়লাম ।ঘড়িতে ছয়টার কাঁটা ছুঁয়ানো।অতি আগ্রহে আগে থেকে খোঁজ নেইনি ওপারে কটায় যাওয়ার রাস্তা খুলবে।যাই হোক নতুনের স্বাদ নতুনই।সেও আরেক সৃষ্টি।ছয়টায় রওয়ানা হয়ে রামনগর তিন নং রোডের বাড়ি থেকে আমাদের সফর সঙ্গী সাগরিকা দি ও কাঞ্চন দা কে নিয়ে আমাদের গাড়ির চালক পবন ,পবনের গতিতে যাত্রা শুরু করলো আখাউড়া বর্ডারের দিকে।
দশ মিনিটে পৌঁছে গেলাম বর্ডার চত্বরে।দেখি যাত্রীবিহীন রুমগুলো সবেমাত্র ভোরের আলো মাখছে।নিরাপত্তা রক্ষীর বাহিনীরা চোখ রগড়ে মাত্র ভোরের আড়মুড়ি ভাঙ্গছে।যাই হোক একজন এসে আমাদের বসতে বলল।সবাই আনন্দে উদ্বেলিত।গৃহকর্তা জানালেন অনেক জায়গা ঘুরে এতটা উত্তেজনা অনুভব করেন নি যতটা বাংলাদেশকে দেখা ও জানার জন্য হচ্ছে।আমাদের সাথী কাঞ্চন দা জানালেন উনি নাকি তখনও স্বপ্নের ঘোরে।ভাবেন নি কোনদিন সীমানা পেরোবেন।ছেলে কেবল মুখ টিপে হাসছিল।সত্যিই সে এক রোমাঞ্চকর যাত্রা।
ঘড়ি জানান দিল সাতটা।কর্মকর্তারা এলেন।ধীরে ধীরে অন্যান্য যাত্রীরা।আমাদের পাসপোর্ট ভিসা পরখ করে একে একে সবার ছবি তুলে রাখলেন মেশিনে।তারপর লাগেজগুলো চেক ইন করে পাঠিয়ে দিলেন পরের গেইটে।বের হয়ে সোজা রাস্তা ধরে হ়াঁটছি আর সামনে পেছনে ডানে বাঁয়ে তাকাচ্ছি।দুধারে রঙিন পতাকাগুলো পতপত করে উড়ছে,গাছগাছালিরা সাড় ব়েঁধে দাঁড়িয়ে ,যেন অভিবাদনরত।নতুনকে আস্বাদনের তাড়নায় হেঁটেই চলছিলাম।হঠাৎ একজন নিরাপত্তারক্ষী ডাক পাড়লেন।যেতে হবে পাশের অফিস ঘরটায়।বুঝতে পারলাম আমরা এবার ওপার (ইন্ডিয়া বর্ডার) ছেড়ে এপারে প্রবেশ করলাম।
বিভেদ নেই।একই আকাশতলে একই পিচঢালা রাস্তা,একই হাওয়া,একই গাছপালা সমদূরত্বে,রক্তেমাংসে গড়া মানুষগুলোও একই রকম ।পার্থক্য শুধু দেশ দুটো।ভারত,বাংলা।ওপাড়ে হোর্ডিং এ ঝুলানো ভারতীয় চেকপোষ্ট,এপাড়ে বাংলাদেশ চেকপোষ্ট।চেকের তেমন বালাই ছিল না।সহজ ,সাধারণ ছিল।তৈরী অটোচালকরা।গন্তব্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আজমপুর রেল স্টপেজ।বেলা নটায় চারশ টাকা অটো ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে নেমে পড়লাম ।খবর নিয়ে জানা গেল ট্রেন আসবে দশটা চল্লিশে।রেলটিকিট অটোচালক ব্যবস্হা করে দিলেন বেশী টাকার বিনিময়ে।বুঝে গেলাম পকেট গরম থাকলে কোথাও নরম হতে হবে না।
সওয়ারী হওয়ার ফাঁকে আশেপাশের স্হানীয়দের সাথে একপশলা আলোচনা সেরে নিলাম।সাথে চা।যথাসময়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে কালনী এক্সপ্রেস এসে উপস্হিত।গন্তব্য ঢাকা।বসে পড়লাম নির্ধারিত সিটে।সুর তুলে"কালনী" তার যাত্রা শুরু করলো।আমাদের নামাবে ঢাকা কমলাপুর ষ্টেশানে।ট্রেনের যাত্রীদের সাথে আলাপ আলোচনায় জানতে পারলাম রাস্তায় পড়বে কিশোরগঞ্জ জেলার আশুগঞ্জের নদী বন্দর।যা মেঘনা নদীর উপর অবস্হিত দ্বিতীয় ভৈরব রেলসেতু। 984 মিঃ দৈর্ঘ্য ও 7 মিঃ প্রস্হের এই সেতু পার হতে হতে মন দিক্ বিদিক্ শূণ্য হয়ে যায়।দীর্ঘদিনের লালিত পদ্মা,মেঘনা ,যমুনা এই তিন বোনের এক বোনকে এত কাছে এত অল্প সময়ে দেখতে পাব ভাবিনি।
ট্রেন ছুটছে দুধারের গাছপালা,জলাভূমি,ডিঙি ,মাঝি ,মানুষ সব কিছুকে পেছনে ফেলে।।আশুগঞ্জের নদী বন্দরের উপর সেতুতে উঠতেই জানতে পারলাম,মেঘনা নদীর উপর যে সেতু তার নাম ভৈরব রেল সেতু।এপারের নাম আশুগঞ্জ ওপা্রের নাম ভৈরবী।
পথের পাশের সমস্ত প্রকৃতির শোভার পাশাপাশি বস্তিবাসীদের জরাজীর্ণ দৃশ্য দেখতে দেখতে ট্রেন এসে ঢুকল কমলাপুর ষ্টেশানে।ঢাকার এটাই শেষ স্টপেজ।বেলা দুপুর গড়িয়ে বিকেল।সময় দুটো।দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ঢাকা শহর দেখার।বোধহয় পূর্ণ হবে এবার।
পা রাখলাম ট্রেন থেকে মাটিতে।চলে এলাম ষ্টেশান সংলগ্ন " আল ফারুক ইন্টারন্যাশনাল হোটেল এন্ড রেষ্টুরেন্টে " এ।সেখানেও ছবিটবি তুলে আমাদের পাঠিয়ে দিলো নয় তলা এসি রুমে।ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম খাবারের উদ্দেশ্যে।ততক্ষণে বিকেল গড়িয়ে গোধূলি ছুঁই ছুঁই। রাস্তার যানজটের কথা ভেবে ,সময়ের তাড়নায় চলে গেলাম " বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে "।দশ তলা বিশিষ্ট এই শপিং মলে সব ভুলভুলাইয়া।লোকে লোকারণ্য কিন্তু কেনাকাটার খুব একটা ধূম নেই।ব্যস্ত সবাই এদিক ওদিক ছুটাছুটিতে।দোকানীরা তাদের ঝকঝকে পসার সাজিয়ে রেখেছেন।ঘুরেফিরে মনে হলো বেচাকেনার চাইতে বিনোদনের জন্যই লোকের সমাগম বেশী।টুকটাক কেনাকাটা সেরে চলে এলাম নীচে।গরম চায়ে চুমুক দিয়ে চাঙ্গা করে নিলাম শরীরকে।ঘড়িতে নয়টা।এবার যানজটের ভীড়ে আমরা।
আর কোন প্ল্যান রাখিনি প্রথম দিনে।ঘুরে এসে ক্লান্ত পথিক আমরা এ দিনের সফর সমাপ্ত করে হোটেলে আশ্রয় নিলাম।
(চলবে)
রীণা দাস, শিক্ষিকা
আগরতলা,ত্রিপুরা
১৯শে আগস্ট ২০১৮ইং