প্রভাষ চৌধুরী, ঢাকা থেকে:
বাংলাদেশের যমুনা ফিউচার পার্কে বিশ্বের বৃহত্তম ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রের নাম গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে উঠাতে চায় ভারত। ইতিমধ্যে ভারতের তরফ থেকে এই প্রস্তাব গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
শিগগিরই গিনেস বুকের একটি প্রতিনিধি দল যমুনা ফিউচার পার্কে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র পরিদর্শন করবে। তারপর তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
এ বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন এত বড় ভিসা কেন্দ্র পৃথিবীর আর কোথাও নেই। ভিসা প্রার্থীরা এই কেন্দ্রে কোনো হয়রানির শিকার হচ্ছেন না।
শ্রিংলা মঙ্গলবার ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ তথ্য জানান।
তিনি আরও বলেন, সিকিম, লাদাখ, অরুনাচল প্রদেশসহ যেসব ভারতের অঞ্চলে বিদেশিদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে; বাংলাদেশিদের ওইসব অঞ্চলে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে পারমিট নিয়ে ওই সব অঞ্চলে বাংলাদেশিরা ভ্রমণ করতে পারবেন। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন থেকেই এই পারমিট নিতে পারবেন ভিসা প্রার্থীরা।
এদিকে নির্বাচন সম্পর্কে শ্রিংলা বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের জনগণ। এ ব্যাপারে ভারতের কোনো বার্তা নেই। জাময়াতে ইসলামী ছাড়া সব দলের সঙ্গে তিনি স্বাভাবিক সৌজন্যমূলক যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন বলেও জানান।
ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, বাংলাদেশের ভিসা ব্যবস্থা আধুনিক, সহজ করা হয়েছে। ভিসা পাওয়ার সব ধরনের হয়রানি দূর করা হয়েছে। যমুনা ফিউচার পার্কে বিশ্বের বৃহত্তম মডেল ভিসা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। প্রায় ১৮ হাজার পাঁচশ বর্গফুট জায়গায় এই ভিসা কেন্দ্রে নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে। চলতি ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ প্রায় ১৪ লাখ ৩০ হাজার বাংলাদেশি ভারতীয় ভিসা নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতিদিন যমুনা ফিউচার পার্কে ১২ হাজার বাংলাদেশি ভিসার জন্য আবেদন করেন। ২০১৫ সালে মাত্র পাঁচ লাখ বাংলাদেশি ভারতের ভিসা পেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ভারতের ভিসা পেতে একসময় দীর্ঘ লাইন দিতে হতো। এখন সেই দিন অতীত হয়েছে। যমুনা ফিউচার পার্কে ভিসা সেন্টার সকালে খোলার আগে লাইন থাকলেও সকাল ১০/১১টার দিকে কোনো লাইন নেই। যমুনা ফিউচার পার্কে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত কাউন্টার রয়েছে। ভিসা প্রার্থীদের বসার পর্যপ্ত জায়গা রয়েছে। এখন আর ভিসা প্রার্থীদের রোদবৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় কাজ চলে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশ সফরকালে বলেছেন, ভারতের প্রতিবেশীবান্ধব নীতির মধ্যে বাংলাদেশ হলো প্রথম।
ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ভারতে প্রবেশ ও প্রস্থানে কোনো কোনো স্থলবন্দরে নিষেধাজ্ঞা ছিল। স্থলবন্দরগুলোর বেশির ভাগই রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে। এ কারণে সমস্যা ছিল। এখন সেটিও শিথিল করা হয়েছে। অতিরিক্ত স্থলবন্দর ব্যবহার করতে হলে তা উল্লেখ করতে হবে। এটি উল্লেখ করার বিষয় প্রসেস করার জন্যে যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রে আলাদা কাউন্টার করা হয়েছে।
এদিকে ভারতীয় হাইকমিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈধ ভিসায় অতিরিক্ত রুট অনুমোদনের সব আবেদন ২২ নভেম্বর ২০১৮ হতে বাংলাদেশের সব ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রে (আইভিএসি) গ্রহণ করা হবে।
এই সেবার জন্য প্রক্রিয়াকরণ ফি হিসেবে আইভিএসিকে ৩০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। সব আইভিএসিতে রুট অনুমোদনের আবেদন জমা দেয়ার জন্য আলাদা কাউন্টার থাকবে।
একজন আবেদনকারী বিদ্যমান ২৪টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং গেদে/হরিদাসপুর রেল ও সড়কপথ ছাড়াও অতিরিক্ত দুটি রুটের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ভারতীয় হাইকমিশন ও ভারতীয় ভিসার আবেদন কেন্দ্রের ওয়েবসাইটগুলোতে আবেদন ফরম পাওয়া যাবে।
এখন থেকে ভারতীয় হাইকমিশন, ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট ও খুলনার সহকারী হাইকমিশনগুলোতে অতিরিক্ত রুট অনুমোদনের কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না বলে ভারতীয় হাইকমিশনের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, টুরিস্ট ভিসায় যারা যাবেন তারা স্বল্পমেয়াদি চিকিৎসাও করাতে পারবেন। তবে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা যেমন কারো হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে অবশ্যই মেডিকেল ভিসা নিতে হবে। টুরিস্ট ভিসাতেও স্বল্পকালীন চিকিৎসা করানোর সুযোগের কথা ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হাসপাতালগুলোকে জানানো হয়েছে।
ভিসা ম্যানুয়েলের উল্লেখ করে শ্রিংলা বলেন, কোনো হাসপাতাল টুরিস্ট ভিসার কারণে স্বল্পমেয়াদি চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করলে তা যেন ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনকে জানান। মেডিকেল ভিসার সঙ্গে রোগীর পরিচর্যার জন্যে তিনজন এটেনডেন্টকেও ভিসা দেয়া হবে। এতে করে তারা পর্যায়ক্রমে রোগীর যত্ন নিতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ এতটাই বেড়েছে যে, গত বছর শুধু বেনাপোল-পেট্রাপোল দিয়েই ১৩ লাখ মানুষ আনাগোনা করেছেন। অবশ্য তাদের মধ্যে ভারতীয় নাগরিকও ছিলেন। শ্রিংলা বলেন, টুরিস্ট ভিসা এক বছর ও ছয় মাসের মাল্টিপল দেয়া হয়। ব্যবসায়ী, বয়স্ক নাগরিক, মুক্তিযোদ্ধারা পাঁচ বছরের মাল্টিপল ভিসা পাবেন। মাল্টিপল ভিসা নিলে যতবার ইচ্ছা ভারতে আসা যাওয়া করতে পারবেন।
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নতির ভূয়সী প্রশংসা করে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশে গত ১০ বছর ধরে ৬ শতাংশের বেশি জিডিপি হয়েছে। আঞ্চলিক ও উপআঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ১০ বিলিয়ন ডলার ভারতীয় বিনিয়োগ রয়েছে। আশা করি, ভারতেও বাংলাদেশের বিনিয়োগ করা উচিত। এক বছরে ভারতে বাংলাদেশের বাণিজ্য বেড়েছে ১৪২ শতাংশ আর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বেড়েছে ৩০ শতাংশ। গত তিন বছরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৯২টি চুক্তি সই হয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে ভারতের কোনো বার্তা নেই
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারত কোনো বার্তা দিতে চায় না। ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন পুরোপুরি বাংলাদেশের জনগণের ওপর নির্ভর করে। কেননা ভারত বিশ্বাস করে গণতন্ত্র কোনো দেশের জনগণের ওপর নির্ভর করে থাকে।
এক প্রশ্নের জবাবে শ্রিংলা জানান, তিনি আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, তরিকত ফেডারেশনসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কূটনীতিক হিসেবে স্বাভাবিক যোগাযোগ রক্ষা করেন। তবে জামায়াতে ইসলামী একটি সাম্প্রদায়িক ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধী দল হওয়ায় এই দলের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতীয়রাও প্রাণ দিয়েছেন। তাই এই জায়গায় ভারত কোনো আপস করবে না।
ভারত নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবে কিনা জানতে চাইলে শ্রিংলা বলেন, এটা বাংলাদেশের জনগণের চাওয়ার ওপর নির্ভর করে।
২১শে নভেম্বর ২০১৮ইং
২১শে নভেম্বর ২০১৮ইং