Type Here to Get Search Results !

কিল্লার বড়মুড়া পাহাড়ের রসালো কমলা রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশে এক নতুন দিগন্ত খুলে দেওয়ার পথে

বিশেষ প্রতিবেদনঃ
 স্বাদের রসালো ফল কমলা চাষকে কেন্দ্র করে কিল্লার বড়মুড়া এখন পর্যটনের নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। উদয়পুর শহর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা রাস্তা চরাই উৎরাই করে পেরিয়ে গেলেই উত্তর বড়মুড়া ভিলেজ। এই ভিলেজের কলই ও মলসম সম্প্রদায়ের লোকেরা বেশীরভাগ কমলা চাষ করছেন। এক সময়ের যে গ্রামে বারুদের গন্ধে আকাশ বাতাস মুখরিত ছিলো। আজ সেই গ্রামে পাকা রাস্তা, বিদ্যুৎ, পানীয় জল, স্বাস্থ্য পরিষেবা সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধায় নতুন জীবনের ছন্দ ফিরে এসেছে। কিল্লা এলাকায় মূলত সাতটি ভিলেজের প্রায় ৪৮০ হেক্টর ভূমিতে কমলার চাষ হচ্ছে। এতে প্রায় ৭০০ কমলা চাষি উপকৃত হচ্ছেন। 
এক কথায় কিল্লা এলাকার সন্নিহিত কমলাচাষিরা রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। রাজ্য সরকারের ঐকান্তিক চেষ্টায় বিশেষ করে নতুন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ও কৃষি মন্ত্রীর যৌথ উদ্যোগে রাজ্যের উৎপাদিত আনারস দেশ ও বিদেশের মাটিতে পা রেখেছে। সেভাবে কিল্লায় উৎপাদিত রসালো কমলাও দেশ বিদেশে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখছে কিল্লা এলাকার কমলাচাষিরা। বর্তমানে রাজ্যের বাজারে কিল্লার কমলা জম্পুইয়ের কমলার মতো চাহিদা পূরণ করতে পারবে বলে সবাই আশাবাদী। বর্তমানে ত্রিপুরার কমলা চাষের মানচিত্রে অন্যতম একনাম কিল্লার বড়মুড়া পাহাড়। একে ঘিরেই উত্তর বড়মুড়া, দক্ষিণ বড়মুড়া, দার্জিলিং বাড়ি ইত্যাদি এলাকার মানুষ নিরলস ভাবে চাষ করে চলেছেন কমলা। 
একদা জম্পুই পাহাড়ের পরই বর্তমানে কমলার ঠিকানা কিল্লা। বর্তমানে রসালো কমলা চাষই অনেকের জীবন জীবিকা অর্জনের সুগম পথ। বড়মুড়া,পাহাড়ের উঁচুনিচু ঢালু জমিতে কমলা চাষ ইতিমধ্যেই খ্যাতি লাভ করে ফেলেছে। স্বাদে, গন্ধে ও আয়তনে জম্পুইয়ের কমলা থেকে অনেক এগিয়ে বড়মুড়ার কমলা। কমলাবাগান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ভিত্তি করে কিল্লার  বড়মুড়ায় গড়ে ওঠার প্রহর গুনছে পর্যটন কেন্দ্র। রাজ্য ও বহিরাজ্যের ভ্রমণ পিপাসুরা গাছের কমলা হাতে ধরে আনন্দ উপভোগ করতে পারবে। 
ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য রয়েছে বড়মুড়া থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে কিল্লা সদরে সুদৃশ্য অতিথিশালা। ইতিমধ্যে রাজ্যে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এলাকার এমডিসি ও বিধায়ক কমলা চাষিদের উন্নয়নে কৃষিমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করে আর্থিক সহায়তার বন্দোবস্ত করেন। রাজ্য কৃষি দপ্তরের সহযোগিতায় ও কিল্লা কৃষি মহকুমার উদ্যোগে কমলাচাষিদের সমস্ত রকম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একসময় সন্ত্রাসবাদের কারণে  বড়মুড়ার তুই-বাকলাই গ্রামে বিকেলের হাত ধরে সন্ধ্যা নামার আগেই ঘরের দরজায় খিল দিয়ে অজানা আতঙ্কে পরের দিনের সকালের জন্য অপেক্ষা করতো গ্রামবাসীরা। আজ সেখানেই অনুষ্ঠিত হবে কমলার উৎসব। 
আগামী ১৬ই নভেম্বর শুক্রবার কমলার বাগানে অনুষ্ঠিত হবে কমলার উৎসব। ঐদিন দুপুর দুই ঘটিকায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এর উদ্বোধন করবেন। সেদিন রাতভর চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জাগাবে সেই মানুষকে যে মানুষ ভ্রমণ পিপাসু ও ভ্রমণ বিলাসী। শনিবার(৩ নভেম্বর ) সপ্তম কমলা উৎসবকে সর্বাঙ্গীণভাবে সুন্দর ও সার্থক করে তোলার জন্য কিল্লা ব্লকের মিলনায়তনে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। 
বৈঠক থেকে বিধায়ক বিপ্লব কুমার ঘোষকে চেয়ারম্যান ও বিধায়ক রামপদ জমাতিয়াকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া কমলা উৎসবকে সামনে রেখে ৯ টি সাব কমিটি গঠন করা হয়। 
সপ্তম কমলা উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে থাকার কথা রয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এর। এছাড়া উপস্থিত থাকবেন কৃষি, পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় সহ গোমতী জেলার অন্যান্য বিধায়করা। এদিনের কমলা উৎসবের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কিল্লা ব্লকের চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া, এমডিসি জয় কিশোর জমাতিয়া, কিল্লা কৃষি তত্ত্বাবধায়ক দেবব্রত মজুমদার, কৃষি আধিকারিক বিদ্যা দেববর্মা, কিল্লা ব্লকের বিডিও সঞ্জিত দেববর্মা, এমডিএম আশিস দত্ত এবং অন্যান্য আধিকারিক সহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মীগণ। 

প্রতিবেদকঃ স্নেহাশিস পাল, উদয়পুর
ছবিঃ সৌজন্যে প্রতিবেদক

৩রা নভেম্বর ২০১৮ইং          

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.