Type Here to Get Search Results !

ঢাকায় পুলিশ কর্মকর্তার ৮ বছরের কারাদণ্ড

প্রভাষ চৌধুরী, ঢাকা ব্যুরো অফিস: বাংলাদেশে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ৮ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ জরিমানা করেছেন সেদেশের আদালত। ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের (আইসিটি) মামলায় তাকে এ সাজা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে, অনাদায়ে আরও এক বছর জেল দেয়া হয়েছে। জরিমানার টাকা নুসরাতের পরিবারকে দিতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার(২৮ নভেম্বর) বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস-শামস জগলুল হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন। এটি বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া কোনো মামলার প্রথম রায়। বৃহস্পতিবার বেলা ২টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস-শামস জগলুল হোসেন এজলাসে আসন গ্রহণ করেন। বেলা ২টা ১৭ মিনিটে ওসি মোয়াজ্জেমকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। এর পর রায় পড়া শুরু করেন আদালত। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায় ওসি মোয়াজ্জেমের পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং ২৯ ধারায় তিন বছর কারাদণ্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। এ দুই ধারায় মোট আট বছরের কারাদণ্ড এবং ১৫ লাখ অর্থদণ্ড হয় ওসি মোয়াজ্জেমের। একটি সাজার পর অন্য সাজা কার্যকর হবে। অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ড নির্ধারণ হয়। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নুসরাতের মামা সৈয়দ সেলিম ও ছোট ভাই রাসেদুল হাসান রায়হান। এজন্য মামলার বাদী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনকে ধন্যবাদ জানান তারা। এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে ওসি মোয়াজ্জেমকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে নেয়া হয়। ২০ নভেম্বর মামলাটিতে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে আজ রায় ঘোষণার দিন ঠিক করা হয়েছিল। ১৫ এপ্রিল সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। ওই দিন ট্রাইব্যুনাল মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন। ১৭ জুন ওসি মোয়াজ্জেম জামিন আবেদন করলে নাকচ করেন সাইবার ট্রাইব্যুনাল। পরে তিনি ২ জুলাই হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। সেখানেও তার জামিন নাকচ হয়। ১৬ জুন শাহবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার হন মোয়াজ্জেম হোসেন। ২০ জুন সাইবার ট্রাইব্যুনালে ওসি মোয়াজ্জেমের পক্ষে কারাগারে ডিভিশন পাওয়ার বিষয়ে আবেদন করা হলে বিচারক গত ২৪ জুন তাকে প্রথম শ্রেণির বন্দির (ডিভিশন) সব সুবিধা দেয়ার নির্দেশ দেন। ফেনীর সোনাগাজী থানায় মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে ‘অসম্মানজনক’ কথা বলায় এবং তার জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ এনে ১৫ এপ্রিল সাইবার ট্রাইব্যুনালে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন বাদী হয়ে এ মামলা করেন। বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা অভিযোগটি পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল। সেই সঙ্গে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে তদন্ত করে ৩০ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। ২৭ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। একই দিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে একই ট্রাইব্যুনালের বিচারক সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। একই সঙ্গে ১৭ জুন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিসংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেন। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে বাদীসহ ১৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকেও নিয়মবহির্ভূতভাবে ভিকটিম নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্যের ভিডিও ধারণ ও প্রচার করে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় অপরাধ করেছেন।’ প্রসঙ্গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন ভুক্তভোগী নুসরাতের মা। পরে সিরাজউদ্দৌলাকে গ্রেফতার করা হয়। যৌন হয়রানির অভিযোগ করতে যাওয়ার পর সোনাগাজী থানার ওসির কক্ষে ফের হয়রানির শিকার হতে হয় নুসরাতকে। নিয়ম না মেনে জেরা করতে করতেই নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি। মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় দুজন পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। এর পর ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষা চলাকালে নুসরাতকে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ডেকে ছাদে নিয়ে গায়ে আগুন দেয় নরপশুরা। ওই দিন নুসরাতকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন নুসরাতের মৃত্যু হয়। ২৪ অক্টোবর নুসরাত হত্যা মামলায় ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাসহ ১৬ আসামির সবার ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। আসামিদের বেশিরভাগই এখন কারাগারে।

২৮শে নভেম্বর ২০১৯

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.