Type Here to Get Search Results !

মাথায় আইএসের টুপি, আদালতে স্লোগান দিল আসামি!

প্রভাষ চৌধুরী, ঢাকা ব্যুরো অফিস: সকালে আদালতে হাজির করার সময় কারো মাথায় এমন টুপি ছিল না। কিন্তু বের হওয়ার সময় রাকিবুলের মাথায় এই টুপি দেখা যায় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আনা এসব জঙ্গিরা আইএসের প্রতীক সংবলিত টুপি কোথায় পেলেন তা নিয়ে বিস্ময় ও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তবে আসামিরা কারাগার থেকে এ টুপি নিয়ে এসেছেন নাকি আদালতে আনার সময় বা আনার পর কোনোভাবে তাদের কাছে এই টুপি এসেছে— তা এখনও জানা যায়নি। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার তিন বছর চার মাস ২৬ দিন পর চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে আট আসামির মধ্যে সাতজনের মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে বুধবার দুপুরে এ রায় ঘোষণা করা হয়। রায় ঘোষণার পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাত জঙ্গির কারো মধ্যে কোনো অনুশোচনা দেখা যায়নি। বরং আদালত কক্ষ থেকে বের করার সময় তারা স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় আসামি রাকিবুল ইসলাম ওরফে রিগ্যান মাথায় আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের (ইসলামিক স্টেট) পতাকার প্রতীক সংবলিত টুপি পরে ছিলেন। এরপর আসামিদের প্রিজনভ্যানে তোলার পর আরও এক জঙ্গিকেও কালো কাপড়ে তৈরি একই রকম টুপি পরতে দেখা যায়। ওই জঙ্গির নাম জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী। দণ্ডপ্রাপ্ত নব্য জেএমবির এসব জঙ্গিদের আদালত থেকে কারাগারে নেয়ার সময় তারা প্রিজনভ্যানের ভেতর থেকে চিৎকার করে নিজেদের কর্মকাণ্ডের পক্ষে বলতে থাকেন। একই সঙ্গে স্লোগান দিতে থাকেন। এর আগে সকালেও আসামিরা হাসিমুখে আঙুল উঁচিয়ে আদালতে প্রবেশ করে। তখন তাদের চোখেমুখে কোনো চিন্তার ছাপ ছিল না। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটি আমরা দেখেছি, ছবিও দেখেছি। আমরা বিস্মিত হয়েছি। কারাগার থেকে আনার সময় আসামিদের তল্লাশি করে দেখা হয়, তাদের সঙ্গে কি আছে তা দেখা হয়। এ ধরনের টুপি তাদের কাছে কীভাবে গেল, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হবে।’ বিষয়টি নিয়ে দুপুরে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সংবাদ সম্মেলনেও সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন। জবাবে আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। এটি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। আমি এখনই তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব।’ ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাতকাটা সোহেল মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাশেদ ইসলাম ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন। আর খালাস পাওয়া আসামির নাম মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে দুই পুলিশসহ দেশি-বিদেশি ২২ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দু’জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া হামলায় অন্তত ৩০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ডে’ পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। অভিযানে এক জাপানি ও দুই শ্রীলংকানসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। জঙ্গি হামলার ঘটনায় ওই বছরের ৪ জুলাই গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ। তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ২৩ জুলাই হামলায় জড়িত ২১ জনকে চিহ্নিত করে জীবিত আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হয়। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর এ চার্জশিট দাখিল করেন। ঘটনায় জড়িত ‘চিহ্নিত’ বাকি ১৩ জন এরই মধ্যে বিভিন্ন অভিযানে নিহত হওয়ায় তাদের নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়। এরপর গত বছরের ২৬ নভেম্বর এ মামলায় আট আসামির বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে চলতি বছরের ২৭ অক্টোবর শেষ হয়। গত ৩০ অক্টোবর আত্মপক্ষ সমর্থনে আদালতের কাছে আট আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। এরপর চলতি মাসের ৬ নভেম্বর এ মামলায় যুক্তিতর্ক শুরু হয়। ৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সব আসামির মৃত্যুদণ্ড চান। আর ১৭ নভেম্বর এ মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়। মামলায় চার্জশিটভুক্ত ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।

২৭শে নভেম্বর ২০১৯

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.