"ঠাম্মির একা একা ভালো লাগছেনা। তাই দাদুকে নিয়ে গেলো। দাদুভাই তো মাত্র এলো, এখনই কোথায় চলে গেলো?"...পাঁচ বছরের সৌনকের প্রশ্নের উত্তর জানা নেই বাবা সৈকতের কাছে। সৈকতও ভাবতে পারছেন না। মাত্র পাঁচদিন আগে শিকাগোতে ছেলের কাছে এসেছেন পিতা রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন এস পি বিভূতি চক্রবর্তী।
তৃতীয়বারের মতো আমেরিকা যাওয়ার উদ্দেশ্য - শিকাগোতে ছেলের নতুন বাড়ি আর যা দেখা হয়নি তা দেখা। ৩রা আগস্ট সকালে ঘুম থেকে ওঠানোর জন্য ডাকতে গিয়ে সাড়া না পেয়ে সৈকত প্রথমটায় বুঝতেই পারেনি। রাতে খাওয়া এবং খাওয়ার পর ছেলে, ছেলে বৌ, নাতির সঙ্গে গল্প করে ফেসবুক আপডেট করে ঘুমাতে যান। ঘুমের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
আগরতলা থেকে মাসদুয়েক আগে কোলকাতায় মেয়ের বাড়িতে যান। নাতির প্রায়ই প্রশ্ন থাকতো কেন দাদুভাই সবসময় তাদের সঙ্গে থাকেনা। ছোট্ট সৌনককে খুশি করতেই ওনার যাওয়া। ১৯৫৯ সালে রাজ্য পুলিশের এস আই হিসেবে যোগ দিয়ে দীর্ঘ ৩৮ বছর কর্মজীবনে এস পি সাউথ হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কর্মজীবন অতিবাহিত করে অবসর জীবনে লেখালেখিতেই সময় কাটাতেন। বছর কয়েক আগে স্ত্রীর মৃত্যুতে একা হলেও মনোবল হারাননি। ফেসবুকে অ্যাক্টিভ মেম্বার হিসেবে অনেকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিলো। আমেরিকার প্রচুর ছবি এবং ভ্রমণ কাহিনী তাঁর প্রতিবারের ভ্রমণের পর পাঠকের কৌতূহল মিটিয়েছে। মৃত্যুর আগের রাতেও এবারের ভ্রমণ সংক্রান্ত পরিকল্পনা নিয়ে পুত্র পুত্রবধূর সাথে আলোচনা করেছেন। স্বল্পভাষী এই মানুষটি নেতাজী স্কুলের এলামনির সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। আগরতলার নেতাজী স্কুল এবং এম বি বি কলেজে পড়াশুনা করেন। ছাত্রাবস্থা থেকেই লেখালেখি করতেন। রাজ্যের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত বেশ কিছু ছোট গল্প রয়েছে। কবিতা, উপন্যাস এবং ছোটগল্পের সংকলন প্রকাশের উৎসাহে পাণ্ডুলিপির কাজ চলছিলো।
১৯৫৯ সালে রাজ্যপুলিশে যোগ দিয়ে ৩৮ বছর সুনামের সাথে কর্তব্য করেছেন। এস আই থেকে এস পি। দীর্ঘ কর্মজীবনে ১৯৮১ এবং ১৯৯২ সালে দুবার তিনি রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক পেয়েছেন। আরক্ষা দপ্তরের বিভিন্ন পদাধিকারিকদের সাথে ওনার নিয়মিত যোগাযোগ ছিলো সাহিত্যচর্চাকে কেন্দ্র করে। শিকাগো শহরের পুলিশ তাঁর মৃত্যুর পরে যাবতীয় কাজকর্মে একজন পুলিশ আধিকারিকের মর্যাদায় সম্মান জানিয়েছেন। শিকাগো শহরের নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুর ২৪ঘণ্টা পর অন্তিম সংস্কারের কাজ হবে হিন্দু শাস্ত্রমতে শিকাগোতেই। তাঁর মৃত্যুতে ওনার ঘনিষ্ট রাজ্য আরক্ষা আধিকারিক ও ছোট গল্পকার অরিন্দম নাথ ওনার ছেলেকে এক শোকবার্তায় জানিয়েছেন, " তিনি আমাকে তোমার ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন। গতবছর আগস্ট মাসে আমি পিতৃহারা হই। আগস্ট আমার কাছে বিষাদের মাস। আমি আমার অন্তরের শ্রদ্ধা এবং শোকজ্ঞাপন করছি।"
নেতাজী স্কুল এলামনি তাঁর মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করেছে। এলামনির তরফে ডঃ দেবব্রত ভৌমিক বলেছেন, আমরা আমাদের অভিভাবককে হারালাম। শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সান্তনা জানাচ্ছি। মৃত্যুকালে তিনি পুত্র, পুত্রবধূ, নাতি, কন্যা, জামাতা নাতনি সহ অনেক আত্মীয়পরিজন এবং গুণমুগ্ধদের রেখে গেছেন।
প্রতিবেদনঃ নন্দিতা দত্ত, আগরতলা
ছবিঃ সংগৃহীত
৮ই আগস্ট ২০১৮ইং
তৃতীয়বারের মতো আমেরিকা যাওয়ার উদ্দেশ্য - শিকাগোতে ছেলের নতুন বাড়ি আর যা দেখা হয়নি তা দেখা। ৩রা আগস্ট সকালে ঘুম থেকে ওঠানোর জন্য ডাকতে গিয়ে সাড়া না পেয়ে সৈকত প্রথমটায় বুঝতেই পারেনি। রাতে খাওয়া এবং খাওয়ার পর ছেলে, ছেলে বৌ, নাতির সঙ্গে গল্প করে ফেসবুক আপডেট করে ঘুমাতে যান। ঘুমের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
আগরতলা থেকে মাসদুয়েক আগে কোলকাতায় মেয়ের বাড়িতে যান। নাতির প্রায়ই প্রশ্ন থাকতো কেন দাদুভাই সবসময় তাদের সঙ্গে থাকেনা। ছোট্ট সৌনককে খুশি করতেই ওনার যাওয়া। ১৯৫৯ সালে রাজ্য পুলিশের এস আই হিসেবে যোগ দিয়ে দীর্ঘ ৩৮ বছর কর্মজীবনে এস পি সাউথ হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কর্মজীবন অতিবাহিত করে অবসর জীবনে লেখালেখিতেই সময় কাটাতেন। বছর কয়েক আগে স্ত্রীর মৃত্যুতে একা হলেও মনোবল হারাননি। ফেসবুকে অ্যাক্টিভ মেম্বার হিসেবে অনেকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিলো। আমেরিকার প্রচুর ছবি এবং ভ্রমণ কাহিনী তাঁর প্রতিবারের ভ্রমণের পর পাঠকের কৌতূহল মিটিয়েছে। মৃত্যুর আগের রাতেও এবারের ভ্রমণ সংক্রান্ত পরিকল্পনা নিয়ে পুত্র পুত্রবধূর সাথে আলোচনা করেছেন। স্বল্পভাষী এই মানুষটি নেতাজী স্কুলের এলামনির সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। আগরতলার নেতাজী স্কুল এবং এম বি বি কলেজে পড়াশুনা করেন। ছাত্রাবস্থা থেকেই লেখালেখি করতেন। রাজ্যের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত বেশ কিছু ছোট গল্প রয়েছে। কবিতা, উপন্যাস এবং ছোটগল্পের সংকলন প্রকাশের উৎসাহে পাণ্ডুলিপির কাজ চলছিলো।
১৯৫৯ সালে রাজ্যপুলিশে যোগ দিয়ে ৩৮ বছর সুনামের সাথে কর্তব্য করেছেন। এস আই থেকে এস পি। দীর্ঘ কর্মজীবনে ১৯৮১ এবং ১৯৯২ সালে দুবার তিনি রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক পেয়েছেন। আরক্ষা দপ্তরের বিভিন্ন পদাধিকারিকদের সাথে ওনার নিয়মিত যোগাযোগ ছিলো সাহিত্যচর্চাকে কেন্দ্র করে। শিকাগো শহরের পুলিশ তাঁর মৃত্যুর পরে যাবতীয় কাজকর্মে একজন পুলিশ আধিকারিকের মর্যাদায় সম্মান জানিয়েছেন। শিকাগো শহরের নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুর ২৪ঘণ্টা পর অন্তিম সংস্কারের কাজ হবে হিন্দু শাস্ত্রমতে শিকাগোতেই। তাঁর মৃত্যুতে ওনার ঘনিষ্ট রাজ্য আরক্ষা আধিকারিক ও ছোট গল্পকার অরিন্দম নাথ ওনার ছেলেকে এক শোকবার্তায় জানিয়েছেন, " তিনি আমাকে তোমার ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন। গতবছর আগস্ট মাসে আমি পিতৃহারা হই। আগস্ট আমার কাছে বিষাদের মাস। আমি আমার অন্তরের শ্রদ্ধা এবং শোকজ্ঞাপন করছি।"
নেতাজী স্কুল এলামনি তাঁর মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করেছে। এলামনির তরফে ডঃ দেবব্রত ভৌমিক বলেছেন, আমরা আমাদের অভিভাবককে হারালাম। শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সান্তনা জানাচ্ছি। মৃত্যুকালে তিনি পুত্র, পুত্রবধূ, নাতি, কন্যা, জামাতা নাতনি সহ অনেক আত্মীয়পরিজন এবং গুণমুগ্ধদের রেখে গেছেন।
প্রতিবেদনঃ নন্দিতা দত্ত, আগরতলা
ছবিঃ সংগৃহীত
৮ই আগস্ট ২০১৮ইং