Type Here to Get Search Results !

বোধের ঘরে"...... অতিথি কলামে তৃতীয় লিঙ্গ প্রসঙ্গে প্রসেনজিৎ চক্রবর্তীর একান্ত অনুভব

ওরা বেশ কয়েকজন, সবাই তৃতীয় লিঙ্গের লোক.....একটা নামেই আমরা তাদের চিনতে চেষ্টা করি..ওই যে ওই নামটা...হি... যাক, হয়তো এভাবেই এইটুকুই আমরা জানি... আর কিছু জানার হয়তো প্রয়োজনও বোধ করি না। তা সে প্রায় কুড়ি বছর ধরে ওদের সঙ্গে আমার পরিবারের সম্পর্ক........

বৈশাখ মাসের প্রথম দিকে আর পুজোর সময় আসে ওরা। তাছাড়াও কখনও তিনচার মাস পরপরও আসে। বছরে দুবার ওদের মধ্যে যিনি সব চাইতে বড়, ওনাকে কাপড় ও কিছু অর্থ দেওয়ার চেষ্টা করি। ওদের গলার স্বর, হাততালি এগুলোই হয়তো ওদের পরিচয়। কিন্তু এতো বছর ওদের সঙ্গে সম্পর্ক, ঘরে বসে সবাই মিলে গল্প করি, খাওয়াদাওয়া করি, কই,কোনোদিন কোনো কঠিন স্বরে কথা বলেনি তো!... কোনোদিন যা নিজে থেকে দিয়েছি, তার বাইরে কিছু চায়নি তো! কোনো অশ্লীল কথা বলা বা ইঙ্গিত করা, কোনোদিন করতেও দেখিনি। ওদেরকে তো আমরা সেজন্যই ভয় পাই, তাই না... ওরা আমায় ভাই বলে, মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করে, বলে... আমাদের আর জীবনে কি আছে, তোমাদের খুশিই আমাদের খুশি....। অবাক হয়ে শুধু শুনি আর ভেবে চলি...। আমার মনে হয় শুধু শুধু ওদের প্রসঙ্গে সমাজে একটা ভয়ভীতি ছড়িয়ে আছে। একটু ভালো ব্যবহার পেলে ওরাও আমাদের বন্ধু হিসেবেই প্রমাণ দেয়... পারিনা কি একটু বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিতে ??

আমি যখন হাতের অপারেশনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি, কোথা থেকে যেন খবর পায় আর আমাকে দেখতে আসে। আমি কলকাতায় আছি শুনে চলে যায়। পরে আবার একদিন আসে। মাথায় হাত দেয়। আশীর্বাদ করে... না না...কোনো টাকা পয়সা নেয়নি সেদিন। আমি সাধলাম। তবুও নিলো না। পূজার দুদিন আগেই দল বেঁধে ভাইকে দেখতে এলো। ওরা কিছুদিন না এলে আমাদের ভাবনা হয়, অনেকদিন এলো না দেখি...।

সেদিন সবাই মিলে ছবি তুললাম। ওরা তিনজন আমাদের গাছের রুদ্রাক্ষ নিলো। নিষ্ঠা ভরে নিয়মকানুন জেনে নিলো।

কেন পারিনা আমরা ওদের আপন করে নিতে.....কোথায় প্রতিবন্ধকতা...

ওরা চলে যাবার পর এইসব প্রশ্নই শুধু ঘুরপাক খায় মনে। হয়তো একদিন এই প্রতিবন্ধকতা দুর হয়ে যাবে...আশাকরি সেটাও হয়তো একটা সুদিনের সংজ্ঞায় থাকবে ...।।

প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী, ব্যাঙ্ক আধিকারিক
আগরতলা, ত্রিপুরা

১৪ই অক্টোবর ২০১৮ইং

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.