Type Here to Get Search Results !

একটি বৃষ্টিমুখর দিন" ...... সুদূর ওমান থেকে মৌসুমী ভট্টাচার্যের ছোট গল্প

মোনা,এক গৃহবধূ :
মোনা দোতালার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে বৈকালিক চায়ের কাপ হাতে বৃষ্টির রূপ দেখছিল সকাল থেকে অবিরাম বৃষ্টিকলকাতার বানভাসি অবস্থা করে ফেলেছে। ওদের বাড়ির সামনের গলি জলমগ্নদু পাশের নর্দমার সব নোংরা ভাসছেকলেজ ফেরতা এক তরুণএক তরুণী ভিজে ভিজে যাচ্ছেজীন্সের প্যাণ্ট হাঁটু অব্দি গোটানোমুখে হাসিদুটো শালিখ ভিজে একশা হয়ে জানালার কার্নিসে বসে আছে ভারি চিন্তিত দেখাচ্ছেওদের। কোনো খাবার সংগ্রহ করতে পারে নি বোধহয়

মোনা ভাবেচায়ের সাথে পকোড়া দারুণ জমে কয়েকটা ভেজে নিলে হয়’, ভেবে কিচেনে যায় রাতে ডিনারে খিচুড়ি অমলেট খেলে কেমন হয়! গুনগুন করে গাইতে থাকে ‘বিজুরি চমকে বরষমে হরবা…’আর হাতচালায় স্বামী অনীক এসে কি খুশী হবে ভাবতেই তার মুখে হাসি ফোটে কিন্তু আসবে কি করে কে জানে!কলকাতা যে লণ্ডন হয় নি বৃষ্টি হলে আরো বোঝা যায় । সে গৃহবধূ,বর্ষার রূপ উপভোগ করতে কোনো বাধা নেই সিডি প্লেয়ারে লাগায় ‘রিমিঝিমি গিরে শাবন….’

অনীক,সফট্ওয়ার ইন্জিনীয়ার :
অনীক তার সল্ট লেকের অফিসের পাঁচতলার জানালা দিয়ে বৃষ্টিস্নাত কলকাতাকে দেখছিল ,আর বসের মুণ্ডুপাত করছিল ঝমঝম্ বৃষ্টিতে কলকাতা যে কুৎসিত হয়ে যায় ,তার থেকে ভাল কে জানে ! কি করে সে যশোর রোডে যাবে , জলমগ্ন রাস্তা,ট্রাফিক জ্যাম ,গোদের উপরবিষফোঁড়াআজই এ্যসাইনম্যান্ট শেষ করতে হবেশালা,এমন সন্ধ্যায় আদা চা,সাথে পকোড়া ..আহা..! রাতে একটু সিভাসরিগাল দু পেগ ..নিবু নিবু আলোতে ‘ এমন বরষা ছিল সে দিন’,বাজতে থাকবেবাইরে ব্যাঙদের কোরাস ,সবমিলিয়ে এক আমেজ সৃষ্টি করবে

বস নির্ঘাত বিয়ে করে নি ,নইলে ডিভোর্সী বেটা কি জানে সদ্য বিয়ে আর বৃষ্টির রসায়ন কালো  কফিতে চুমুক দিতে দিতে বেজার মুখে সে ল্যাপটপে চোখ রাখে

কেশবা,অটো ড্রাইভার :
সকাল থেকে নাগাড়ে মুশলধারে বৃষ্টিতে ভারতের এই সিলিকন সিটি কাম গার্ডেন সিটি গারবেজ সিটিতে পরিণত হয়েছেবহু জায়গা জলমগ্ন,শহরবাসীর দুর্ভোগের শেষ নেই। কেশবা তার অটোনিয়ে শহরের ব্যস্ত আই.টি সেক্টরের সামনে দাঁড়িয়ে আছেযে সব ইয়ং আই.টি ইন্জিনীয়াররা এখনও গাড়ি কেনে নি,তাদের আজ ভালভাবে গলা কাটা যাবেভাবতেই তার মুখে হাসি ফোটে,কান ঢাকা টুপিটা আরেকটুঠিক করে নেয়। একটু কফি পেলে ভাল হত হাতে হাত ঘষে গরম হতে চেষ্টা করেতামিলনাড়ুতে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে ,থাকবে দিন। কষ্ট হলেও একদিকে ভালইনকাম ভাল হয়রাতে দেশী পাইট একটু গলায় ঢেলেআহা ,স্বর্গে আছে মনে হয়। যদিও বৌ ফ্যাচ্ ফ্যাচ করে। তখন দু ঘা দিতেই হয়। তবে বলে ঠিকইএই নেশার জন্য পয়সা জমতে পারে না। যাকগেএত ভাবা তার পোষায় নাওইআসছে,অফিস ছুটির সময়। অস্থির হয়ে অটো স্টার্ট দেয়

নন্দিথা,গাইনোকোলিজিস্ট :
নন্দিথা অস্থির হয়ে রিস্ট ওয়াচ দেখেসকাল আটটা বাজে। এখনও আয়া আসে নি। আধ ঘণ্টার মধ্যে হসপিটাল না পৌঁছলে মুশকিল হয়ে যাবেতার দু বছরের বাচ্চাকে কার কাছে রেখেযাবে ! স্বামী রাজন ট্যুরে। আসবেই বা কি করে ! সম্ভবতঃ ঘরে জল ওঠে থাকবেমনে মনে বেঙ্গালুরু মিউনিসিপালটির মুণ্ডপাত করেতার পারফরমেন্স খুব এফেকটেড হচ্ছে ,মা হবার পর থেকে

তুলসীএক আয়া :
তুলসীদের বস্তী জলমগ্ন হয়ে তার ঘরে জল ঢুকেছে। স্বামী রাজমিস্ত্রীকাজ বন্ধএতটুকু সাহায্য করে নাজল ঢুকুক,আগুন লাগুক,তার কিছু যায় আসে নাতাদের তিন বছরের মেয়েটাকে তুলসীর মা কাছে রেখে , যায় নন্দিথা মেমসাহেবের মেয়েকে দেখতেমা কাছাকাছিই থাকে,কিন্তু আজ দেরী হয়ে গেল,মোবাইলেও চার্জ নেই। উনি নিশ্চয় অস্থির হচ্ছেনমেয়েটার সর্দি লেগেছেমা-রও গায়ে জ্বরডাক্তার মেমসাহেব থেকে অষুধ নিতে হবে

তুলসী পৌঁছোনোর সাথে সাথে নন্দিথা বেগে বেরিয়ে গেল অষুধের কথা বলার সুযোগ পেল না তুলসীদু জনেই ওয়ার্কিং মাদার,শুধু সামাজিক শ্রেণী বৈষম্য

রোজিএক পতিতা:
অষ্টাদশী রোজি সেজেগুজে ছাতা হাতে রাস্তায় দাঁড়ায় টিপ টিপ বৃষ্টিতে রাস্তায় লোকজন কম এক দু জন শাঁসালো খদ্দের পেলে ভালো হয়বাড়িতে টাকা পাঠাতে হবে অসুস্থ বাবা আর চাষবাস করতে পারে না বিহার নেপাল বর্ডারে তার গ্রামতার মতো বহু কিশোরীকেমুম্বাই নিয়ে আসা হয় সবাই দরিদ্র পরিবারের রোজি তখন স্বপ্না ছিল,পনেরো বছর বয়সীমুম্বাই আসার পর কিছুদিন ট্রেনিং দেয়া হয়কি করে খদ্দেরদের আকর্ষিত করবে,ছলা কলা ইত্যাদিফ্রক পরা নিষ্পাপ কিশোরী থেকে অভিজ্ঞ পতিতায় পরিণত হওয়া

ভাঁড়ের চা  চুমুক দিতে দিতে সস্তা ছিটের সালোয়ারটা টেনে রোগা শরীরটাকে আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করে

দিলাবর  রফিকপেশাদার হত্যাকারী ঃ
রাত এগারটা বাজে,মুম্বাই বানভাসি হয়ে গেছে দিলাবর আর রফিক কাবাব দিয়ে দেশী পান করছিল কাজটা সেরে এসেছে সব কাজের জন্য  রকম দিন আর্দশএখন কিছুদিন আন্ডারগ্রাউণ্ডে থাকতে হবে বাকি টাকাটা পেলে,দূরেই চলে যাবেতারা পেশাদার হত্যাকারী,দিলাবর অভিজ্ঞ,রফিক নূতন দিলাবর জানে কোন্ ওয়েদার,কোন্ সময় উপযুক্তরিসার্চ করে নেয় কিছুদিন শিকার  আশেপাশের অঞ্চলকেআজ বারবার সেই একজোড়া বিস্ফারিত চোখ,কোটর থেকে বেরিয়ে আসছে,তাকে ভীষণ ডিসটার্বড করে তুলেছেমহিলাটির স্বামী সুপারি দিয়েছিল,হত্যার জন্যএকা ছিল বাড়িতে,স্বামী ট্যুরে বেশী বেগ পেতে হয় নি,গলা টিপে ধরতেই শেষহত্যা সে কতই করেছে ,কিন্তু আজ মনটা ভাল লাগছে না। নিজের মা- কথা মনে পড়ছে

মৌসুমী ভট্টাচার্য্য, ওমান

১৭ই ডিসেম্বর ২০১৮ইং

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.