আরশি কথা

আরশি কথা

No results found
    Breaking News

    হ্যাক' ...একটি ছোট গল্প

    আরশি কথা
    সগীর লেখালিখির জগতটাতে অন্য সবার তুলনায় নতুনই। বছর দুয়েক হলো লিখছে। এবারের বইমেলায় তার বই এসেছে। “আজ হোক গল্পের সাগর”। পুরোনো দিনে মানুষ লেখার প্রচারণা কোন চুলো দিয়ে করতো কে জানে! এখন সবকিছু কত সহজ। ফেসবুকেই হাজারখানেক পাঠক হয়েছে তার। নিয়মিত লেখালিখিও চলে বিভিন্ন গ্রুপে। তবে, সগীর নামটা নাকি লেখকের সাথে যায় না। তাই ওটা বদলে তালব্য সুবর্ন নামে লেখে। সগীরের মতোই লেখালিখির জগতটাতে শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে মিজান। উনিও অনলাইনে লেখেন তবে তালব্য সুবর্নের সিনিয়র। লেখালিখিটা বছর পাঁচেক ধরে চালাচ্ছেন। অনেক সময়ই মিজান আর তালব্য সুবর্নের লেখা নিয়ে তুলনা, তর্ক জমে ফেসবুকে। দু লেখক এতে খুশিই। “আলোচনায় থাকার “ তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন গোপনে। ও দু:খিত। মিজানেরও লেখক হিসেবে নাম আছে একটা। তবে সে তালব্যের মতো পুরোটা বদলায়নি। নাম রেখেছে মাঝি মিজান। একবার তাকে জিজ্ঞেস করেছিল এক অনলাইন পোর্টালের রিপোর্টার, “ভাই, এতকিছু থাকতে মাঝি কেন?” মিজান খুব ভেবে বিজ্ঞের মতো উত্তর দিয়েছিল, “আমরা শেকড় ভুলে যাচ্ছি” এ উত্তর শুনে রিপোর্টার কি বুঝেছিল সে ই জানে। তবে পরেরদিন সাহিত্য আলাপের শিরোনাম ছিল: আমরা শেকড় ভুলে যাচ্ছি: মাঝি মিজান এবার মূল আলাপে ফিরি। পেছনে পেছনে যতই দা আর কুমড়ো মনে লুকিয়ে থাকুক না কেন, সামনে এলেই তা বদলে যায় তুমুল বন্ধুত্বে। এক ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে তালব্য খবর পেয়েছে আজ মেলায় যাচ্ছে মাঝি। তাহলে আজ আর বসে থাকা যায় না। হোক না মাঝি তার চেয়ে খারাপ লেখক, কিন্তু পাঠকদের তো আর ঠিক-ঠিকানা নেই! দেখা গেল তার উপস্থিতির অভাবে মাঝির বই পড়াই শুরু করেছে। আলমারি থেকে বহু খুঁজে একটা পাঞ্জাবি বের করলো তালব্য। পকেটে একটা কলমও নিলো সে। লেখালিখিতে আজকাল কলম লাগে না বললেই চলে। কম্পিউটারে লেখা, ইমেইলে পান্ডুলিপি আবার কম্পিউটারেই প্রুফ। কলমটা লাগে বইমেলা এলে। পাঠকদের স্বাক্ষরসহ শুভবার্তা লিখে দিতে। বইমেলায় ঢুকেই মনে একটা মোচড় দিলো। আগে থেকেই ভক্তকূল নিয়ে বসে আছে মাঝি। তালব্য তড়িঘড়ি করে ফোন দিল দু চারটা। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে তার ভক্তকূলও হাজির। এরপর হাত উঁচু করে ডাক দিল মাঝিকে। আবহটা কেমন জানি হলের রাজনৈতিক শোডাউনের মতো মনে হলো। সে যাই হোক, আসলে বিষয়টা সাহিত্য সম্মেলন।কিংবা সাহিত্যিক সম্মেলন। ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার সুযোগ নেই। হাত মেলালো মাঝি আর তালব্য।দুজনের মুখেই হাসি। এই দেখেন কি ভুলো মন আমার। মাঝির বইয়ের নামটাই বলি নি। বইয়ের নামটা দারুন। “ পোড়া জীবনের কাব্য” দুই লেখকই পরস্পর শুভেচ্ছা বার্তা লিখে বই বিনিময় করলো আন্তরিকভাবে। সেলফির জোয়ার বয়ে গেল। দু একজন হয়ত ভেসে-টেসেও গেছে সে জোয়ারে। সে খবর রাখার সময় কোথায়! মাঝি আর তালব্য দুজনেই দুজনকে কথা দিয়ে গেল, একে অপরের বই সম্পর্কে অনেস্ট রিভিউ লিখবে। বাসায় ফিরতেই ছোট ভাই সিমনের ফোন, “ভাই, খবর তো খারাপ। মাঝি নাকি আপনার বই নিয়া যাতা লিখবে। আমরা কি বইসা থাকমু ভাই?” তালব্য ফুঁসে উঠে বলে, “ ওরে আইজ ধুইয়াই দিমু, দাঁড়া” ওদিকে মাঝির নারী এক ভক্ত মেসেঞ্জারে একগাদা ব্যঙ্গের ইমো দিয়ে লিখলো, “ভাইয়া, ওই ক্লাসলেস তালব্য নাকি আপনাকে অ্যাটাক করবে রিভিউ দিয়ে। ডু সামথিং” মাঝি উত্তরে একটা রাগের ইমো দিয়ে লিখলো, “আই উইল ডু এনিথিং এন্ড এভরিথিং। ইউ জাস্ট সি।“ দু পক্ষেই চলছে কড়া রিভিউ লেখা।তবে পাঠকের নজর কাড়তে রিভিউ লেখা হলো একদম ছোট। ইন এ নাটশেল টাইপ। তালব্য লিখলো, পুড়োটা পড়েছি “পোড়া জীবনের কাব্য”। কবির আরও পরিণত হয়ে কবিতা লেখা উচিত ছিলো। শব্দচয়ন শিশুতোষ। ওদিকে মিজান লিখলো, পড়ছিলাম “আজ হোক গল্পের সাগর”। আজকাল হুট করে শুরু আর হুট করে শেষ করলেই সবাই মনে করে ভালো গল্প লিখে ফেললাম। বেশ অপরিপক্ক লেখার হাত। গল্পগুলো পূর্ণতা পায় নি। সৃষ্টিকর্তার কি খেলা! ঠিক একই সময়ে ফেসবুকে পোস্ট হল দুটো রিভিউ। কে আগে কে পরে তা নির্বাচনের জন্য থার্ড আম্পায়ার লাগবে নির্ঘাত। দুজনেই রিভিউ দেখে ঝলসে গেল গ্রিলের মতো। এরপর ফোনটা হাতে নিতে দেরি হলো না। দুজনেই দুজনকে ট্রাই করে বিজি পাচ্ছে। শেষমেষ মাঝির কলটা ঢুকলো। ফোন ধরেই বললো, -বন্ধু তালব্য, খুব তাড়াতাড়ি তোমার রিভিউটা ডিলিট করো। ইজ্জত বাঁচাও। -মানে কি? -মানে হলো, আমাকে নিয়ে যা কিছু লেখো তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু, আমার “পোড়া জীবনের কাব্য” বইটা কবিতার না। ওটা উপন্যাস। -আরে মাঝি আমিও তো একই কারণে তোমাকে ফোন দিয়েছি। তোমার রিভিউটাও ডিলিট করো। পাঠকেরা হাসবে তো। -কেন? - “আজ হোক গল্পের সাগর” তো গল্পগ্রন্থ না। কবিতার বই। ও। আরেকটা কথা বন্ধু। তোমার বইয়ের রিভিউটা না আমি লিখি নি। আমার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে। তুমি কিছু মনে করো না। মুহূর্তে যেন প্রাণ ফিরে মাঝি। খুব তড়িঘড়ি করে বললো, -কি মিল! কি মিল! দেখো তো বন্ধু! আমার অ্যাকাউন্টও তো হ্যাক হয়েছে। ফোনটা কেটেই দুজন ফেসবুকে পোস্টের ডিলিট অপশন হাতড়ে বেড়ায়।

    মনদীপ ঘরাই, বাংলাদেশ

    ১০ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯ইং
    3/related/default