ক'দিন ধরে খুব ইচ্ছে করছে একটি হাত ঘড়ি কিনব। দেখতে দেখতে অনেক গুলো বছর পার হয়ে গেল ঘড়ি পরা হয় না। কি এক অদৃশ্য ভালোবাসা বুকে দানা বেঁধে আছে সেই কাঙ্খিত না দেখা ঘড়িটি পাবার বাসনা । স্বপ্ন লালিত বুকে তার প্রতিচ্ছবি লেপ্টে আছে আমার প্রতিটি মুহূর্তে ।
মানিক প্রচন্ড ভারাক্রান্ত মনে নিরিবিলি বসে আছে। তার স্মৃতির দর্পণে বারবার উঁকি দিচ্ছে মায়ের সেই লালিত স্বপ্নের ইচ্ছে পোষণের কথা। ভাবতে ভাবতে কখন যে জল এসে গেছে দুচোখে টেরই পায়নি।
পাশে বসে মৃত্তিকা বাবার হাতের মোবাইল ফোন নিয়ে খেলা করছে।কিছু বুঝে উঠার আগেই দু চোখ দুটো মুছে নিল মানিক।
আজ সারাটা দিন মায়ের কথা বার বার মনে হচ্ছে। দেখতে দেখতে দেড় বছর পার মানিকের মা ওপারে স্রষ্টার পরম আহবানে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে। মা নুরজাহান বেগম সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে ইহকালের মায়া ত্যাগ করে, না ফেরার দেশে চলে যান। আর বাবা আবদুল মান্নান শেখ মায়ের মৃত্যুর ঠিক নয় মাস পর সে ও স্ত্রীর ডাকে পাড়ি জমান শেষ গন্তব্যে উপরওয়ালার কাছে।
কিছু স্মৃতি, কিছু কথা বারবার ভাবনায় ঘুরপাক খাচ্ছে মানিকের। খাটে কিছুটা হেলান দিয়ে একমাত্র মেয়ে মৃত্তিকার দুষ্টুমি দেখছে । মায়ের প্রতিচ্ছবি মেয়ের মাঝে খুঁজে ফেরেন প্রায়ই । সেদিন রনিকা বলছিল মৃত্তিকার চেহারা নাকি অনেকটাই মানিকের মায়ের মত। চোখ, চাহনি আর কপালের দিকটা দেখতে হুবহু মানিকের মায়ের মতোই । স্মৃতির রোমন্থনে হারিয়ে গিয়েছিল মানিক। হঠাৎ অর্ধাঙ্গিনীর ডাকে কল্পনার অবসান।
" কি হলো ?:বাপ মেয়ের দুষ্টুমি শেষ হলো ।
যাও এবার গোসল করে এসো একসাথে খাব"।
তোয়ালে কাঁদে জড়িয়ে মানিকছড়ি তো বাথরুমে ঢুকে পড়লো ।
বাবা মা মারা যাবার পর এই প্রথম মানিকের বড় দুই বোন বেড়াতে এসেছে তার বাসায় । অনেকদিন পর বোনদ্বয় কে পেয়ে একি আনন্দ ।
উপলক্ষ্য বড় বোনের মেয়ের বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে। ছেলে ঢাকা থাকে, তাই পারিবারিক ভাবে দেখাদেখি হবে । আর সেই সুবাদে একমাত্র ছোট ভাই মানিকের বাসায় আসা ।আজ কালের ছেলে মেয়েরা নিজের পছন্দের গুরুত্বটাই বেশি দেন।
ভার্সিটিতে পড়াশোনার সুবাদে ছেলের সাথে পরিচয়। তারপর কিছুদিন চেনা-জানা,একসাথে ঘুরাঘুরি,সেলফি যুগে যা হয় আর কি। মানিক সবই জানত, ভাগ্নী মামাকে জানিয়েছে।
তারপর আর কি যথারীতি দুই পরিবারের মিলনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ভ্রমণ।
রনিকা টেবিলে খাবার দিয়েছে । মানিক গোসল সেরে বোনদের নিয়ে খেতে বসল । অনেক রকম কথা হচ্ছিল ছোটবেলা মানিক কি কি দূষ্টমি করত আরো কত কি। তিন ভাই বোনের দুষ্টামি দেখে স্ত্রী রনিকা তাদের কথা শুনে না হেসে আর থাকতে পারল না । সবার খিল খিল হাসিতে পুরো ঘরটা আনন্দের বন্যা বয়ে যেতে লাগলো।
সকাল হতে অফিসে যাওয়ার তাড়া। যান্ত্রিক যুগে রাস্তাঘাট যানজট বাধাগ্রস্ত হবে না এ কথা ভাবাই যায় না । তারপর ঢাকা শহর, এক ঘন্টার দূরত্বে রাস্তার তিন ঘণ্টায় পৌঁছতে হবে এই প্রত্যাশায় ঢাকাবাসী বুকেও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেই পথ চলে।
হাউজ বিল্ডিং দাঁড়িয়ে আছে মানিক ভালুকা যাবে। রোজ গাড়ি এসে নিয়ে যায় আজও অপেক্ষা করছে গাড়ির জন্য।
হঠাৎ ড্রাইভার ফোন করলে বলল জাবালে নূর এর ড্রাইভার নাকি দুজন কলেজ ছাত্রকে গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছে । আর তারই রেশ ধরে সবাই ন্যায় বিচারের দাবিতে রাস্তায় আন্দোলন করছে। রাস্তা ঘাটে যানবাহনের সংখ্যা কমে গেল আর তাতেই অপেক্ষার পালা ।
হঠাৎ মেজ ভাইয়ের ফোন। মানিক ছাড়াও আরো তিন ভাই কর্মস্থলের সুবাদে ঢাকায় বসবাস করেন এবং সবাই আজ রাতে মানিকের বাসায় আসবেন । সাত ভাই আর দুই বোনের মধ্যে মানিক সবার ছোট। আদর আর ভালবাসা এক রকম বড় হওয়া ।
ছোটবেলা কেটেছে আড়পাড়া গ্রামে । তবে খুব বেশি কেটেছে মধুখালী আর কিছুটা সময় নিজ জেলা শহর ফরিদপুর বড় ভাইয়ের বাসায় বিশেষ কিছু কাজের সুবাদে।
উচ্চ বিদ্যালয় এর গণ্ডি পেরিয়ে ফরিদপুর থেকে ঢাকা আসেন ২০০২ সালে । তারপর অনার্স মাস্টার্স ঢাকা কলেজ থেকে সম্পুর্ণ করেন। অতঃপর যথারীতি চাকরির দুর্লভ চেষ্টা এবং এক সময় হয়ে ও যায় ।
ঠিক তার দুবছর পর রনিকা কে নিয়ে বিবাহিত জীবনে পা দেন। বিয়ের দু'বছরের মাথায় রনিকার কোল জুড়ে আসে মৃত্তিকা । বাবা মোঃ মনোয়ার হোসেন মানিক নিজের নামের সাথে মৃত্তিকা মানিক নাম রাখেন মেয়ের।
অনেকদিন পর তিন ভাই ও দুই বোনের মিলে একসাথে অনেক আড্ডা, অনেক মজা হল। ভাগ্নির বিয়ের কথাবার্তা ঠিকঠাক,বিয়ের তারিখ আগামী আগমনী ঈদের তৃতীয় দিন। কথাবার্তা আর আড্ডাবাজি শেষ করে সবাই যখন ঘুমাতে গেল ঠিক তখন রাত বারোটা বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট । মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে মানিকের আর কিছু ভালো লাগছেনা। রনিকা কিছু বুঝার আগে ছাদের এক কোণে গিয়ে বসল । দূর আকাশের নির্মল চাঁদের আলো ঠিক তার মুখের উপর পড়লো । হালকা ঠান্ডা আবহাওয়া শরীর প্রশান্ত মনে হচ্ছে তবুও মনের কোণে বারবার সেই মায়ের কথা মনে হচ্ছে। আজ মা বেঁচে থাকলে হয়তো-
খানিকটা চুপ হয়ে রইল। এর মাঝে হঠাৎ রনিকা এসে হাজির ।
" এত রাতে ছাদে ঘুমাবে না?
স্ত্রীর হাত ধরে পাশে বসালো।
- হ্যাঁ ঘুমাবো।
জানো রনিকা আজ মাকে কেন যেন বার বার মনে পড়ছে । অদৃশ্য এক ভালোবাসায় আমি মাকে খুঁজে ফিরি একটা দুর্লভ উপহার পাবো বলে । জানি কোন দিনই সেই ইচ্ছে পূরণ হবার নয়, তবুও খুঁজে ফিরি আমার স্বপ্নে,ধ্যানমগ্নে যদি মা আসে।
হঠাৎ চোখে পানি মুছতে দেখে রনিকা জিজ্ঞেস করলো-
- তুমি কাদছো কেন?
মৃত্যু সবার ভাগ্য শুধু আগে আর পরে । মৃত্যুর স্বাদ চিরন্তন সত্য প্রতিটি সৃষ্টির জন্যই আর এটা আল কোরআনের বাণী । রণিকা কথাগুলো বলতে বলতে মানিকের কাঁধে হাত রাখল।
সে কথা আমি জানি । কিন্তু আমার হৃদয়ের কান্না অন্য জায়গায় ।
- রনীকা তুমি শুনবে সেই গল্প ?
রণিকা মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জ্ঞাপন করলো। তাহলে শোনো-
আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি ১৯৯৭ সালের কথা। পরীক্ষার আগে ভালোবাসার মানুষগুলোর কাছ থেকে উপহার পাওয়ার অনুভূতি সত্যিই অন্যরকম মনে হতো। অন্য বন্ধুরা ঘড়ি পরতো আমারও ইচ্ছে করতো।
কিন্তু বলতে সাহস করতাম না। কিন্তু যখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে ওঠলাম তখন আমার জীবনের সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষ আমার মা আমি মাকে আম্মু বলেই ডাকতাম। বাবাকে ভয় পেতাম ভীষণ । আমরা সব ভাই বোন পড়াশোনা করতাম শুধু বড় এক ভাই আর বাবা সংসারের দায়িত্বে ছিলেন । সাহস করে একদিন আম্মুকে আমার ইচ্ছের কথা বলি । শোনার পর আম্মু বলছিল-
- ঠিক আছে বাবা ভালো করে পড়াশোনা কর তোকে একটা ভালো ঘড়ি কিনে দেব । আমি কান পেতে বাবা আর মার মাঝে কথা গুলো শুনছিলাম । তাদের দু'জনের কথার মাঝে কিছু কথা শোনার পর ওই সময় আমার আর আম্মুর কাছ থেকে সেই ঘড়িটি নেওয়া হয়নি। তারপর আমি যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি তখন ও আম্মু আমাকে সেই কাঙ্খিত স্বপ্নীল ঘড়িটি কিনে দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিল, তখনও আমি নেইনি। ২০০২ সালে যখন আমি এসএসসি শেষ করে আম্মুর কাছে হাজির হই, তখন মা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল - -বাজান পরীক্ষা ভালো অইছে তো ? তোরে আমি একটা ঘড়ি কিনে দিমু। মায়ের মুখের মৃদু হাসির মাঝে অভাবের স্পষ্ট ছাপ দেখেছি সেদিন । তাই সেদিনও আমি ঘড়িটি নেয়নি। রনিকা নিরব হয়ে মানিকের কথাগুলো শুনছিল । মানিক খানিকটা নিরব হয়ে গেল। হঠাৎ রনিকা জিজ্ঞেস করল - - তারপর! তারপর আর কি ২০০৬ সালে যেদিন ঢাকা কলেজের প্রথম বর্ষের ফলাফল হাতে নিয়ে সোজা বাড়ির উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ি। বাড়ির সামনের মাঝ রাস্তায় এগিয়ে আসা আম্মুর পায়ের নিচে মাথা গুঁজে কদম বুচি করে দোয়া চেয়েছিলাম । সেদিনও আম্মুর শেষ বারের মতো আমাকে ঘড়ি কিনে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য ! ঐ দিনও মায়ের ইচ্ছে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম । কারণ তার কিছুদিন পর আমার এক বোন আর ২ ভাই এর পরীক্ষার ফরম ফিলাপ ছিল, যে কারণে সেদিনও ছোটবেলার স্বপ্নে লালিত আম্মুর দেওয়া ঘড়ি টা নেওয়া হয়নি। আজ মা নেই। কিন্তু যতোই তোমার কাছ থেকে আমি দূরে সরে যেতে চাই ততই মিশে যাই নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে। ততই আমি হয়ে যাই তোমার ছায়ার রতন । কোনোদিকে যাওয়ার আর একটুও জায়গা থাকে না। তুমি জড়িয়ে রাখো তোমার ঘড়ির কাটায় । তোমাকে ছাড়তে গিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে আরো জড়িয়েছি । ভুলতে গিয়ে আরো ভালোবেসেছি সেই স্বপ্নকে যা তুমি দিতে চেয়েছিলে সেই কাঙ্খিত হাত ঘড়ি!!! কিছুটা থেমে স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে- জানো রনিকা আজ ১৩টি বছর আম্মুর দেয়া না দেখে সেই ঘড়িটার কথা খুব মনে পড়ছে । আচ্ছা বলতে পারো ? - না দেখা ঘড়িটার রং কেমন হতে পারে? - না দেখা ঘড়িটার ফিরতে কেমন হতে পারে না ? - না দেখা ঘড়িটার কাঁটা গুলো কেমন হতে পারে? আমার কল্পনা কিছুতেই আনতে পারছি না। আজ আমার মানিব্যাগে যে কটা টাকা ছিল তাতে অনেকগুলো ঘড়ি কেনা যেত । দোকানের সামনে গিয়ে ভাবলাম - আমার তো একটা ঘড়ি দরকার, আম্মুর দেওয়া সেই পঞ্চম শ্রেণীতে থাকা না দেখা বর্ণহীন ঘড়িটা----! - যে ঘড়িটা আমি আর কখনো কোনদিন কিনতে পারব না। - যে ঘড়িটা আর কখনো ফিরে পাবো না। - যে ঘড়িটা কোনদিন আমার আর দেখা হবে না। - আমাকে আর আম্মু কোনদিনও স্বপ্ন দেখাবে না যে ঘড়ি কিনে দেবে বলে । সেদিনের দারিদ্রতার শিকলে বন্দী হয়ে থাকা লালিত স্বপ্ন যা আমাকে স্মৃতির দুয়ারে নিয়ে যায় বারবার । তবুও আমার ধ্যানে আমার হাতে লেপটে আছে আম্মুর দেওয়া থেমে থাকা, না দেখা, অস্পষ্ট বর্ণহীন,ভালোবাসার কাঙ্ক্ষিত ঘড়িটা!!!
- ঠিক আছে বাবা ভালো করে পড়াশোনা কর তোকে একটা ভালো ঘড়ি কিনে দেব । আমি কান পেতে বাবা আর মার মাঝে কথা গুলো শুনছিলাম । তাদের দু'জনের কথার মাঝে কিছু কথা শোনার পর ওই সময় আমার আর আম্মুর কাছ থেকে সেই ঘড়িটি নেওয়া হয়নি। তারপর আমি যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি তখন ও আম্মু আমাকে সেই কাঙ্খিত স্বপ্নীল ঘড়িটি কিনে দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিল, তখনও আমি নেইনি। ২০০২ সালে যখন আমি এসএসসি শেষ করে আম্মুর কাছে হাজির হই, তখন মা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল - -বাজান পরীক্ষা ভালো অইছে তো ? তোরে আমি একটা ঘড়ি কিনে দিমু। মায়ের মুখের মৃদু হাসির মাঝে অভাবের স্পষ্ট ছাপ দেখেছি সেদিন । তাই সেদিনও আমি ঘড়িটি নেয়নি। রনিকা নিরব হয়ে মানিকের কথাগুলো শুনছিল । মানিক খানিকটা নিরব হয়ে গেল। হঠাৎ রনিকা জিজ্ঞেস করল - - তারপর! তারপর আর কি ২০০৬ সালে যেদিন ঢাকা কলেজের প্রথম বর্ষের ফলাফল হাতে নিয়ে সোজা বাড়ির উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ি। বাড়ির সামনের মাঝ রাস্তায় এগিয়ে আসা আম্মুর পায়ের নিচে মাথা গুঁজে কদম বুচি করে দোয়া চেয়েছিলাম । সেদিনও আম্মুর শেষ বারের মতো আমাকে ঘড়ি কিনে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য ! ঐ দিনও মায়ের ইচ্ছে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম । কারণ তার কিছুদিন পর আমার এক বোন আর ২ ভাই এর পরীক্ষার ফরম ফিলাপ ছিল, যে কারণে সেদিনও ছোটবেলার স্বপ্নে লালিত আম্মুর দেওয়া ঘড়ি টা নেওয়া হয়নি। আজ মা নেই। কিন্তু যতোই তোমার কাছ থেকে আমি দূরে সরে যেতে চাই ততই মিশে যাই নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে। ততই আমি হয়ে যাই তোমার ছায়ার রতন । কোনোদিকে যাওয়ার আর একটুও জায়গা থাকে না। তুমি জড়িয়ে রাখো তোমার ঘড়ির কাটায় । তোমাকে ছাড়তে গিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে আরো জড়িয়েছি । ভুলতে গিয়ে আরো ভালোবেসেছি সেই স্বপ্নকে যা তুমি দিতে চেয়েছিলে সেই কাঙ্খিত হাত ঘড়ি!!! কিছুটা থেমে স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে- জানো রনিকা আজ ১৩টি বছর আম্মুর দেয়া না দেখে সেই ঘড়িটার কথা খুব মনে পড়ছে । আচ্ছা বলতে পারো ? - না দেখা ঘড়িটার রং কেমন হতে পারে? - না দেখা ঘড়িটার ফিরতে কেমন হতে পারে না ? - না দেখা ঘড়িটার কাঁটা গুলো কেমন হতে পারে? আমার কল্পনা কিছুতেই আনতে পারছি না। আজ আমার মানিব্যাগে যে কটা টাকা ছিল তাতে অনেকগুলো ঘড়ি কেনা যেত । দোকানের সামনে গিয়ে ভাবলাম - আমার তো একটা ঘড়ি দরকার, আম্মুর দেওয়া সেই পঞ্চম শ্রেণীতে থাকা না দেখা বর্ণহীন ঘড়িটা----! - যে ঘড়িটা আমি আর কখনো কোনদিন কিনতে পারব না। - যে ঘড়িটা আর কখনো ফিরে পাবো না। - যে ঘড়িটা কোনদিন আমার আর দেখা হবে না। - আমাকে আর আম্মু কোনদিনও স্বপ্ন দেখাবে না যে ঘড়ি কিনে দেবে বলে । সেদিনের দারিদ্রতার শিকলে বন্দী হয়ে থাকা লালিত স্বপ্ন যা আমাকে স্মৃতির দুয়ারে নিয়ে যায় বারবার । তবুও আমার ধ্যানে আমার হাতে লেপটে আছে আম্মুর দেওয়া থেমে থাকা, না দেখা, অস্পষ্ট বর্ণহীন,ভালোবাসার কাঙ্ক্ষিত ঘড়িটা!!!
- খোরশেদ আলম বিপ্লব, বাংলাদেশ
১৬ই জুন ২০১৯