ধর্মভীরু শব্দটাই আমার কাছে খটকা জনক, পুরোটাই অবিশ্বাসী অনাস্থার গন্ধে ভরা । যে সত্যিই ধার্মিক সে ভীরু হয় কি করে! আসলে ভূয়ো সুরক্ষাবোধই আমাদের বিশ্বাসকে প্রতিহত করে। এই সুরক্ষাবোধকে ত্যাগ করলেই বিশ্বাস সমৃদ্ধ হয় । সংস্কৃত ধাতু 'অস্' এর অর্থ হল 'যা আছে' আর যারা, 'যা আছে' তাকে বিশ্বাস করেন তারাই আস্তিক। সেই অর্থে 'যা আছে', তাকে যারা বিশ্বাস করেন না তারাই নিজেকে নাস্তিক বলেন, মেনে নিলাম তেত্রিশ কোটি দেবতার কোন অস্তিত্ব নেই, চোখের সামনে দেখতেও পাই না সরাসরি কিন্তু পৃথিবী সৃষ্টির রহস্য থেকে শুরু করে যখন এই জীব বৈচিত্রের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি প্রতিটি ছোট ঘাসফুলও একে অপর থেকে আলাদা পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা সত্তার তখন উত্তর খুঁজতে গিয়ে শেষমেষ সৃষ্টি কর্তার পায়ে পড়ি। আর যখনই 'সৃষ্টি কর্তা' শব্দটি মাথায় চলে আসে তখন 'ঈশ্বর' শব্দের ব্যাখ্যা মনে পড়ে যায়, 'ঈশ্' আর 'বর' এই দুটি শব্দ মিলে 'ঈশ্বর'। 'ঈশ্' এর অর্থ হল স্রষ্টা, দক্ষ, মালিক বা শাসক আর 'বর' এর অর্থ হল সুন্দর, চমৎকার বা সেরা, তাই যুগপদ ভাবে অর্থ আসে যে বা যিনি সুন্দরের স্রষ্টা।
নাস্তিকতা এক ধরনের "আমি সব জানি" সূচক প্রবণতা। এই প্রবণতা একেবারেই অবৈজ্ঞানিক। একজন বৈজ্ঞানিকের পক্ষে কোনদিনই অবিশ্বাসী হবার উপায় নেই কারন এই অবিশ্বাস তার সমস্ত অন্বেষণের পথকে রুদ্ধ করে দেবে এবং অস্তিত্বের অনাবিস্কৃত ক্ষেত্রে তার অনুসন্ধানের গতিও প্রতিহত হবে। প্রেম বা ভালোবাসা যদি প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে থেকে থাকে তো বলব নাস্তিকতা কারো কারোর উপরের একটা সূক্ষ্ম আবরণ মাত্র।
একবার কোথাও পড়েছিলাম, স্টিফেন হকিং লেখার এক পর্যায়ে বলেছিলেন গবেষণার এক পর্যায়ে গিয়ে যখন তিনি আর কোন কিছুই আবিষ্কার করতে অক্ষম হন তখন তিনি মনে করেন ''অবশ্যই ঈশ্বর আছেন।''
ব্যাপারটা অনেকটা এমনঃ
কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তার জন্ম কি করে হয়েছে সে হয় তো বলবে তার বাবার বীর্য থেকে শুক্রানো মায়ের ডিম্বানো গ্রহন করার পর তার সৃষ্টি হয়েছে।
-কিন্তু সেই বীর্য ও ডিম্বাণু কে সৃষ্টি করেছেন?
- তাদের শরীর থেকে সৃষ্টি হয়ে গেছে।
-তাদের শরীর কোথা থেকে সৃষ্টি হয়েছে?
-তাদের বাবা মায়ের শরীর থেকে
ঠিক আছে, ধরে নিলাম সে তার জন্ম সূত্রে পেয়েছে।
-তাদের জন্ম কোথা থেকে হয়েছে?
-তাদের বাবা মা থেকে
-তাদের বাবা মা কোথা থেকে এসেছে?
-তাদের বাবা মা থেকে....
-........................
এভাবে প্রশ্ন করতে থাকলে তারা হয় তো জবাব দেবে তাদের জন্ম হয়েছিল কোন বানর থেকে?
সেই বানর কোথা থেকে সৃষ্টি হয়েছিল?
আরেক জোড়া বানর থেকে।
তাদের জন্ম কোথা থেকে হয়েছে?
আরেক জোড়া বানর থেকে
..............................
এভাবে প্রশ্ন করতে থাকলে এক পর্যায়ে এসে বিজ্ঞান চুপ
বিজ্ঞানীও চুপ। নাস্তিকেরা আরো বেশী চুপ।
ঠিক এখানে এসেই হকিংয়ের মনে হয় হ্যাঁ ঈশ্বর বলে কেউ আছেন।
এই প্রসঙ্গ এখানেই শেষ করছি। পরিশেষে বলতে চাই ধর্ম যখন উপাসকের উপাসনার স্বাধীনতা ও পদ্ধতিকে নিয়ন্ত্রণ করে তখন তা একটা সমন্বয়বাদী সমাজ গঠনের পক্ষে অন্তরায় হয়ে উঠে। ঠিক একই ভাবে অ-ধর্মপরায়ন সমাজও বিশৃঙ্খলা এবং দুর্নীতির স্রষ্টা।
আমি ধর্ম বিশ্বাস করি, বলতে লজ্জা পাই না বরং তৃপ্তি বোধ হয়। আমার ধর্ম আমাকে অন্ধ কুসংস্কারে আবদ্ধ করে রাখে না, বিজ্ঞানের সুফল কুফল কে বিচারের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে না, অন্যের ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে বাধা দেয় না, 'আমি সব জানি আর পাশের লোকটি মূর্খ' এই ধরনের চিন্তা থেকে মুক্ত রাখে, নিজেকে সাম্যবাদী (ভূয়ো) হিসেবে আখ্যায়িত করার লক্ষ্যে গোপন আস্তিকতার আড়ালে নাস্তিক বলতে শেখায় না সর্বোপরি একাত্মবোধহীন উপাসনা ও পূজায় উদ্বুদ্ধ করে না। জীব মাত্রেই সত্য, সত্য মাত্রই সুন্দর তাই সুন্দরের স্রষ্টার প্রতি প্রবল আস্থা।
মুনমুন দেব,শিক্ষিকা
কমলপুর, ত্রিপুরা
ছবিঋণঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট
১৯শে জুলাই ২০১৯