Type Here to Get Search Results !

ভারত থেকে আরও বিদ্যুৎ আমদানি করবে বাংলাদেশ

আবু আলী, ঢাকা॥
ভারত থেকে আরও বেশি পরিমানে বিদ্যুৎ আমদানির চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে প্রতিবেশী এ দেশটি থেকে এক হাজার এক’শ চল্লিশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানাযায় নতুন করে আরও এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। তবে অদূর ভবিষতে আরও বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানাযায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি ও নির্দেশনা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বিদ্যুৎ বিভাগে। সেখানে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিলো ভারত থেকে আরও এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির।  বিদ্যুৎ বিভাগ সুত্রে জানাযায়, তবে শুধু এক হাজার মেগাওয়াটই নয় অদূর ভবিষতে আরও বেশি পরিমানে বিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। 
বৈঠক সুত্রে জানাযায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করতে ইতোমধ্যে ভারতীয় একটি কোম্পানি প্রস্তাব দিয়েছে। ভারতে ‘পাওয়ার ট্রেডিং করপোরেশণ(পিটিসি) ইন্ডিয়া’ বিদ্যুৎ বিভাগকে এ প্রস্তাবনা দেয়। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের ‘সাগরদিঘি বিদ্যুৎ কেন্দ্র’ হতে আরও প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আমদানির লক্ষ্যে ‘মধুমতি পাওয়ার লিমিটেড’ নামক একটি কোম্পানি প্রস্তাব দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগে। এছাড়া ‘হিরন্ময় এনার্জি লিমিটেড ইন্ডিয়া’ নামে আরেকটি ভারতীয় কোম্পানি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির প্রস্তাব দিয়েছে। দুই দেশের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট স্টেয়ারিং কমিটির ১৫ তম বৈঠকে হিরন্ময় এনার্জির প্রস্তাবনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ সে প্রস্তাবের সম্ভাব্যতা নিয়ে বিশ্লেষন করছে। যদি হিরন্ময়ের প্রস্তাব বাস্তবসম্মত হয় তবে বাংলাদেশ ভারত সরকারের অনুমোতির জন্য প্রস্তাব প্রেরন করবে।  
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ভারত থেকে ইতোমধ্যে এগার’শ ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে। পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর গ্রিড থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার আন্তঃবিদ্যুৎ সংযোগ গ্রিডের মাধ্যমে এক হাজার চল্লিশ এবং ত্রিপুরা থেকে কুমিল্লা দিয়ে এক’শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দিল্লী থেকে বিভিন্ন সময়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন।
পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা হয়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয় ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর। ওই সঞ্চালন লাইন দিয়ে প্রথমে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। পরবর্তীতে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। এছাড়া  এছাড়া ত্রিপুরা থেকে কুমিল্লা হয়ে আসছে আরও ১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
ভারত থেকে আরও বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ভারতী সীমান্ত এলাকা কুমিল্লা, খুলনা এবং ভেড়ামারা দিয়ে গ্রীড লাইন স্থাপন করা হয়েছে। কোথাও কোথাও নতুন করে আন্তঃদেশীয় গ্রীড লাইন স্থাপন করা হবে। ভারতের সঙ্গে একাধিক বিদ্যুৎ আমদানির সমঝোতা চুক্তি ও চূড়ান্ত চুক্তি করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সুত্রে জানাযায়, শিগগিরই ভারত থেকে অন্তত ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। পর্যায়ক্রমে বাকি বিদ্যুৎ আসবে। পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়ার একটি কয়লা চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। 
সুত্রে জানাযায়, ২০১৭ সালের এপ্রিলে ভারতের পক্ষ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিক্রির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিলো। ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পাওয়ার ট্রেডিং কর্পোরেশন (পিটিসি) এই প্রস্তাব দিয়েছেল। সেই প্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া পাওয়ার করপোরেশণ, পাওয়ার ট্রেডিং করপোরেশ (পিটিসি), এবং পিডিবি’র মধ্যে ত্রি-পক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে বিদ্যুৎ বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে পিটিসি ছাড়া সরাসরি ইন্ডিয়া পাওয়ার কর্পোরেশনের সঙ্গে এমওইউ সইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 
বিদ্যুৎ বিভাগ সুত্রে জানাযায়, হলদিয়ার বিদ্যুৎ খুলনা দিয়ে বাংলাদেশে আনা হবে। এ লক্ষ্যে হলদিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে খুলনার গোয়ালখালি পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করতে হবে। এই লাইনের দৈর্ঘ্য হবে ১৭৫ কিলোমিটার। হলদিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ১৫০ মেগাওয়াট করে তিনটি ইউনিট রয়েছে। একটি ইউনিট ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। বাকি দুটো ইউনিট নির্মানধীন। তিনটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ৪৫০ মেগাওয়াট। সেখান থেকে ৪০০ মেগাওয়াট বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করবে।
 পিডিবি সুত্রে জানাযায়, বাংলাদেশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে যে দরে বিদ্যুৎ কিনছে হলদিয়া থেকে আমদানিকৃত বিদ্যুতের দাম সেরকম বা কাছাকাছি হবে। তবে এ ক্ষেত্রে কয়লার দাম এবং সঞ্চালন লাইনের চার্জ ও সঞ্চালন লস বিবেচনায় নেওয়া হবে।  প্রাথমিক প্রস্তাব অনুসারে প্রতি কিলোওয়াটের সঞ্চালন দাম  দশমিক ০৮৪ ডলার হতে পারে। বিদ্যুৎ কেনার চুক্তির মেয়াদ হতে পারে ২৫ বছর। 
বর্তমানে ত্রিপুরা থেকে ১৬০ মেগাওয়া বিদ্যুৎ কিনছে বাংলাদেশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ছে ৬ টাকা ৪৫ পয়সা। 
এছাড়া ভারতের আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রি করবে। রিলায়েন্স গ্রুপ বাংলাদেশে বিদ্যুৎখাতে বিনিয়োগ করছে। দুটো কোম্পানির সঙ্গেই সরকার এমওইউ সই করেছে।

২৫শে আগস্ট ২০১৯

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.