আবু আলী, ঢাকা:
চামড়ার দাম কমে যাওয়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজিকে দায়ী করেছেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এবারের ঈদুল আজহায় কোরবানি হওয়া পশুর চামড়ার দাম অস্বাভাবিক কমে গেছে। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। চামড়া ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, এবার চামড়ার দাম স্মরণকালের মধ্যে সর্বনিম্ন। দাম না পেয়ে অনেকেই চামড়া ফেলে দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘চামড়া নিয়ে যখনই ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করি, তখনই তার বিরুদ্ধাচরণ করা হচ্ছে।’ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ঈদের আগে ট্যানারি মালিক ও চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলো, তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। চামড়ার দাম একেবারেই কমে গেছে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণেই সরকার কাঁচা চামড়া রপ্তানি করা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চামড়ার মূল্য নিয়ে কারসাজি বন্ধে কঠোর অবস্থান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রবিবার ১৮ আগস্ট জরুরী বৈঠক ডেকেছে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, কোনোভাবেই চামড়াশিল্পকে ধ্বংস করতে দেওয়া যাবে না। সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর না হওয়ায় ঢাকাসহ সারাদেশে লাখ লাখ পিস লবণবিহীন চামড়া নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। কোরবানির ছয় ঘণ্টার মধ্যে পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা এবার কোন চামড়া কেনেনি মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। ফলে ওই সময়ের পরই বেশিরভাগ চামড়ায় পচন শুরু হয়। ভয়াবহ দুর্গন্ধ সহ্য করতে না পেরে চট্টগ্রামের মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ পিস চামড়া মহাসড়কে ফেলে যায়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে চামড়া পুঁতে ফেলা হয়েছে। বেসরকারী তথ্যগুলো বলছে, কয়েক হাজার কোটি টাকার কাঁচা চামড়া নষ্ট হয়েছে ট্যানারি মালিক, পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়ত মালিকদের গাফিলতির কারণে।
বাণিজ্য সচিব মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, চামড়া শিল্পের উদ্যোক্তাদের গাফিলতির কারণেই এত বড় ক্ষতি হয়ে গেল চামড়া জাতীয় সম্পদ, এই শিল্প রক্ষার দায়িত্ব সকলের। কিন্তু এবার কোরবানির সময় চামড়া নিয়ে যা হয়েছে তা কোনভাবেই কাম্য নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কেস টু কেস ভিত্তিতে এবার কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমোদন দেবে। এক্ষেত্রে শুধু আবেদন করলেই সরকার রফতানির অনুমোদন দিতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, গভীরভাবে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।
জানা গেছে, সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর হলে প্রতিটি গরুর চামড়ার দাম হবে প্রায় ৮১০-১৭৫০ টাকা। বাংলাদেশ হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের মতে, বড় সাইজের একটি গরুতে প্রায় ৩৫ বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। ওই হিসেবে প্রতি বর্গফুট চামড়া ৫০ টাকা হলে একটি গরুর চামড়ার দাম হয় ১৭৫০ টাকা। ঢাকায় এবার প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৪৫-৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া মাঝারি সাইজের একটি গরু থেকে ২৬ থেকে ২৮ বর্গফুট এবং ছোট সাইজের একটি গরু থেকে ১৮ বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। ওই হিসাবে প্রতিটি ছোট আকারের গরু থেকেও ৮১০ টাকার চামড়া পাওয়ার কথা। কিন্তু বড় বড় গরুর চামড়ার মূল্য ১০০- থেকে ২০০ টাকাও হাকা হয়েছে। ফলে কোনও কোনও কোরবানি দাতা প্রতিবাতে চামড়া মাটিতে পুতে ফেলেছে।
১৭ই আগস্ট ২০১৯