Type Here to Get Search Results !

গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশ সম্ভাবনা এবং বাংলাদেশ" ......বাংলাদেশ থেকে মোহাম্মদ জহিরুল হক ভূঁইয়া

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে এবং আরও নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি সব দিক থেকে গার্মেন্টস শিল্পের জন্য উপযুক্ত স্থান করে নিয়েছে এবং আরও ভালো করার সমূহ সম্ভাবনা আছে। সম্প্রতি বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে আমেরিকা ও চায়নায়। বাংলাদেশ তার লোকবলের দক্ষতা, লোকজনের কাজের প্রতি মনোনিবেশ, উদ্যোক্তাদের (গার্মেন্টস মালিকদের) আন্তরিক কৌশল এবং উদ্যোক্তাদের সাপোর্ট দেয়ার জন্য ব্যাংক এবং অন্যান্য ইনফাস্ট্রাকচার যদি ঠিকমতো দেয়া যায়, তাহলে এ দেশ অনেক এগিয়ে যাবে। আমেরিকা বাংলাদেশের জন্য একটা বিশাল বাজার। বাংলাদেশের মোট রপ্তানির একটা ভালো জায়গা বাংলাদেশে আছে যা বাড়ানোর একটা সুন্দর সুযোগ তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যুদ্ধের জন্য। চায়না ও আমেরিকা একটা বিশাল বাজার দখল করে আছে। কিন্তু আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চীনের সঙ্গে বাণিজ্য পলিসি একটা সুযোগ বাংলাদেশের বাজারের প্রসার ঘটানোর। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে কটন ট্রাউজার ক্যাটাগরিতে ২০১৯ এর ফাস্ট কোর্য়াটারে (জানুয়ারি থেকে এপ্রিল) ১৭.০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চায়না থেকে বেশি শিপমেন্ট করেছে (তথ্য: গ্লোবাল অ্যাপ্যারেল ফোরাম ডট কম)। বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের সেজন্য স্পেশাল কিছু পণ্য বানানোর মনোনিবেশ এবং তার গুণগত মান বজায় রাখার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। বাংলাদেশে আমরা রেগুলার পণ্যগুলো বেশি করার আগ্রহ প্রকাশ করি এবং উদ্যোক্তারা রেগুলার পণ্যের অর্ডার নিতে বেশি আগ্রহ বোধ করে। চায়না তাদের বাজারের অনেকাংশজুড়ে কিছু স্পেশাল এবং ফ্যাশন আইটেম করে যা বাংলাদেশ এখনও ঐ অর্ডারগুলো নিতে পারছে না। তবে হ্যাঁ, কিছু কিছু ফ্যাক্টরি এবং ফ্যাক্টরির মালিকরা এখন ঐ অর্ডারগুলো করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করেছেন এবং করছেন। তাদের অবশ্য সাধুবাদ জানাতে হবে এবং মালিকদের এ ব্যাপারে নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে। ফ্যাশন আইটেম গুলোতে অর্ডারের পরিমাণ কম থাকায় উদ্যোক্তারা আগ্রহ প্রকাশ করছে না বিধায় মূল্যের দিক দিয়ে সেইভাবে একটু পুষিয়ে নিতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে গার্মেন্টের তৈরি পোশাক মূল্য নিয়ে একটা বিশাল সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অনেক সময় গার্মেন্টস মালিকরা তার সঠিক দামটা পাচ্ছেন না। কাপড় এবং এক্সেসরিজ বা অন্যান্য আইটেমের মূল্য ধরার পর দেখা যায় ন্যায্য মজুরি পাওয়া যাচ্ছে না। ক্রেতা প্রতিটা দাম স্থির করে দেয়, যা উদ্যোক্তাদের জন্য সমস্যা হয়ে যায় অর্ডার নিতে। সেই জন্য উদ্যোক্তাদের ক্রেতাদেরকে বুঝাতে হবে যে এর ন্যায্য দাম এবং ক্রেতাদেরকে কাপড় ও এক্সেসরিজের গুণগত মান বজায় রাখার জন্য যে ন্যায্য দামটা গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝাতেহবে। আমাদের গার্মেন্টস মালিকদের সবাই ন্যায্য দামের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দেখাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকতে হবে। উদ্যোক্তাদের সৃষ্টিশীল হতে হবে। নতুন নতুন কাপড় ও এক্সেসরিজ সহ নতুন ডিজাইন তৈরি করে ক্রেতাদেরকে প্রতি সিজনে পাঠাতে হবে এবং ক্রেতাদের কাছে গিয়ে প্রেজেন্ট করতে হবে, যাতে ক্রেতারা তাদের আইটেমগুলো নতুন কিছু যোগ করতে পারে। আমরা ক্রেতা নির্ভর হয়ে পড়ি এবং ক্রেতারা যে আইটেমগুলো দেয়, শুধু সেগুলো নিয়ে আমরা অর্ডার করতে বেশি আগ্রাহবোধ করি। এটা আমাদেরকে পিছিয়ে দেয় দু’দিক থেকে। একটা হলো দামের দিক থেকে আর একটি হলো আমাদেরকে সৃষ্টিশীল নতুন কিছু করা থেকে। যখনই একটা নতুন ডিজাইন ক্রেতা তার হাতে পায় তখনই সে ও উদ্যোক্তা বা গার্মেন্টস মালিক সম্পর্কে একটা ভালো মনোভাব পোষণ করে। আর সেই ক্রেতা নতুন আরো কয়েকটা ডিজাইন যোগ করে অর্ডার বাড়িয়ে দিতে পারে। আমাদের গার্মেন্টস বাজার আমাদেরকেই তৈরি করতে হবে এবং ক্রেতাদের রুচি অনুযায়ী আমাদেরকে সেই ভাবে ডিজাইন এবং পোশাক সাজাতে হবে যাতে ক্রেতারা আকৃষ্ট হয় এবং নতুন অর্ডারের পরিমাণ বাড়াতে পারে। আমেরিকাতে সাধারণত দুটি সিজন বড়, একটা হলো স্প্রিংসিজন এবং আরেকটি হলো ফলসিজন। অনেক সময় হলিডে সিজনে অর্ডারের পরিমাণ তত বেশি থাকে না। সাধারণত স্প্রিংসিজনে হালকা পাতলা এবং ফ্যাশনবেল ড্রেসগুলোর অর্ডার বেশি থাকে এবং ফলসিজনে জ্যাকেট সুয়েটার আইটেমগুলোর অর্ডার বেশি থাকে। রেগুলার শার্ট প্যান্টের অর্ডার সারা বছর জুড়ে চলতে থাকে। ক্রেতাদের সাথে চাহিদা অনুযায়ী সাপোর্ট দিয়ে যেতে পারলে সিজন অনুযায়ী নতুন ডিজাইন ক্রেতা নিজেই পাঠিয়ে দেয় ডেভলাপ করার জন্য। আমাদের সৃষ্টিশীল আইডিয়া যোগ করে কাপড় এবং এক্সেসরিজ সেই অনুযায়ী যোগান দিয়ে সেম্পল ডেভলাপ করে পাঠাতে হবে। কোনো কোনো সময় ৪ পিস প্রতি স্টাইলে কোনো সময় ২ পিস যা ক্রেতা অনুযায়ী নির্ভর করে ক্রেতাদের কাছে নমুনা সেম্পল পাঠাতে হবে যা থেকে বাল্কঅর্ডার ১০,০০০ পিস থেকে ৫ লক্ষ বা ১ মিলিয়ন পিস পর্যন্ত হতে পারে যা নির্ভর করে ক্রেতার ওপর এবং স্টাইল অনুযায়ী এবং ফেব্রিক্স ডিজাইনের ওপর। উদ্যোক্তাদের ব্যাংক সার্পোটের এবং ইনফাস্টারচার সাপোর্ট ঠিক মতো থাকতে হবে। নতুন গার্মেন্টস উদ্যোক্তাদের জন্য সব ধরনের ব্যাংক সাপোর্ট এবং লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হলে উদ্যোক্তা তৈরির একটা সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশ আসলে উদ্যোক্তা জাতি এবং নতুন কিছু করার অনুপ্রেরণা আমাদের দেশের মানুষদের কাছে। অনেক ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার পর ব্যবসা শুরু করতে চায়। কিন্তু সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে এ খাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, তাছাড়া নতুন প্রক্রিয়া এবং লাইসেন্স ইস্যু, পুজি যোগানের ইস্যু নিয়ে হোচট খায় এবং সামনে এগোতে পারে না। অনেকে আবার ২ থেকে ৫ বছর বা তারও বেশি সময় চাকরি করার পর উদ্যোগ নেয় এই খাতে সরাসরি অন্তরভুক্ত হওয়ার জন্য। সেই ক্ষেত্রে তাদের লাইনঘাটগুলো সহজে জানা থাকে এবং সামনে এগোতে সহজ হয়। নতুন উদ্যোক্তাদের দিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটু বিশেষ নজর দিলে আমাদের দেশে অনেক নতুন শিল্পপতি তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে সরকার এ ব্যাপারে বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে যা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তবে বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগ যদি সহজতর হয় এবং এলাকার রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক থাকে, তাহলে উদ্যোক্তারা সহজে তার পছন্দ অনুযায়ী এলাকায় তার উদ্যোগকে বাস্তব রুপ দিতে সক্ষম হবে। যা আমাদের দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। একজন উদ্যোক্তার সৃষ্টি করলে অনেকগুলো লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় যা দেশের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।অনেক মানুষের টাকা থাকতে পারে কিন্তু উদ্যোগী নয়, আবার অনেকআগ্রহী উদ্যোক্তা আছে কিন্তু টাকার অভাবে সামনে এগোতে পারছে না। এই দুটোর সমন্বয় যদি সঠিকভাবে করা যায় তাহলে আমাদের দেশে উদ্যোক্তার পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। এক্সপোর্টরলিটেডে গার্মেন্টস উদ্যোক্তার সঙ্গে আরো অনেক ব্যবসা জড়িত।যেমন ফ্রেব্রিক্স, এক্সেসরিজ, ট্রার্ন্সপোটশেন ব্যাংক এবং বীমা, ইত্যাদি। বাংলাদেশের পোশাকের বেশ সুনাম আছে বিদেশি বাজারের। যা আমাদের জন্য খুবই ইতিবাচক। বাংলাদেশ যদি বিশ্ব বাজারের প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারে। তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের ভবিষ্যৎ অনেকে বেশি সমৃদ্ধশীল ও উজ্জ্বল হবে।


মোহাম্মদ জহিরুল হক ভূঁইয়া
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
ডিজাইন
গ্যালারি(প্রা:)লিমিডেট
বাংলাদেশ

২১শে সেপ্টেম্বর ২০১৯

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.