“মানুষ হতে পারিনি”
সেদিন, মিনিবাসের পিছনের সিটে বসে আছি আমি
হঠাৎ সামনের সিটে এক কিশোরী জানালা খুলে মুখ ভর্তি হলুদ বমি,
টানা বাতাসে কিছু ছিটে ছাটা আমার মুখেও!
কি এক টকটক গন্ধে আমারও যেন বেড়িয়ে আসার উপক্রম।
আমিতো হেচকি দৌড়ে একেবারে সামনের সিটে চলে আসি,
হেলান দিয়ে নেশার মতো ঘুমে কি এক ভাবনা এলো মনে
আমি বুঝি মানুষ হতে পারিনি!
আমিওতো পারতাম কিশোরীর কপালে হাত রেখে
ওর বমির যন্ত্রণাকে সহজ করে দিতে,
মানিব্যাগের ভাঁজ থেকে টিস্যু হাতে মুখ মুছে দিতে,
আমি আজও সেবা করতে শিখিনি, মানুষও হতে পারিনি।
এই সেদিন রাস্তার টোঙ দোকান থেকে পারুটি কিনেছি
পেছনের দু’পা ঘেঁষে এক ল্যাংড়া কুকুর আমার সামনে দাঁড়িয়ে,
আমিতো ভেঙচি দিয়ে অর্ধ ইট ছুঁড়েছি জোরে
কুকুরটা পা ঘেঁষে ঘেঁষে কি যেন বলে পালিয়েছে ডরে।
পারুটি খেয়ে আমি ঘুরতেই দেখি
বিদ্যুতের খুঁটির আড়ালে, কুকুরটি তখনও আছে তাকিয়ে।
তখনি হঠাৎ বুঝেছি, আমি মানুষ হতে পারিনি,
যে মমতা আনতে পারেনি, সে মানুষ হতে পারেনি।
তারপর একদিন রাজধানীর ওভারব্রিজ থেকে নামতে গিয়েছি
মায়ের কোল থেকে শুকনো শিশু হাত বাড়িয়েছে আমার দিকে
নাকে-মুখে কি সব নোংরা ময়লা অ্যালোভেরার আঠার মতন
সদ্য কাঁটাপরা টিকটিকির লেজের মতো নাচানাচি করে
আমি কোনমতে শিশুর স্পর্শ থেকে বেঁচে ফিরেছি।
ওভারব্রিজের নীচে গাড়ীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে হঠাৎ ভেবেছি
আমি মানুষ হতে পারিনি।
আমিওতো পারতাম মায়ের আচল দিয়ে
শিশুর নোংরা নাক মুছে দিতে, মুখে চুমু দিতে
আমি আজও ভালোবাসতে শিখিনি, মানুষও হতে পারিনি।
মনোয়ার হোসাইন মানিক, বাংলাদেশ
ছবিঋণঃ ইন্টারনেটের সৌজন্যে
২৯শে সেপ্টেম্বর ২০১৯
ছবিঋণঃ ইন্টারনেটের সৌজন্যে
২৯শে সেপ্টেম্বর ২০১৯