Type Here to Get Search Results !

ভাসান এবং তারপর......আমেরিকা থেকে জবা চৌধুরীর কলাম

নাহ্, এই অপেক্ষার রঙ কখনো ফিকে হয় না, আর এই অপেক্ষার কোনো শেষও হয়না।  বয়সভেদে বাঙালির জীবনজুড়ে থাকে এই খুশির ঝলক। দুর্গাপূজো ! স্বর্গের মা দুর্গা মাত্র চারদিনের জন্য মর্ত্যে আসেন বাপের বাড়ি। বহু শতাব্দী ধরে চলে আসা এই প্রথা সত্যি করেই আজও আমাদের সমাজেরই আয়না। প্রতিবছর মাদুর্গার এই ক্ষনিকের আসা, আর চলে যাওয়া --- বারবার মনে করিয়ে দেয় আমাদের সমাজের 'বিয়ে'র প্রথাকে। সময়ের সাথে আমাদের মানসিকতার নানা পরিবর্তন হলেও, প্রথা-বিহীন কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সবক্ষেত্রেই মেয়েকে নিজের বাবা-মা'কে ছেড়ে চলে যেতেই হয়।
 এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হয় অধিকাংশ মেয়েরা। নতুন ঠিকানায় নতুনভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা -- নিজের গুণে, নিজের পরিচয়ে। সফল হবার স্বপ্ন আমাদের সকলের থাকলেও, সকলেই সফল হতে পারি না নানা কারণে। মায়ের যে স্নেহের আঁচল ধরে আমরা বড় হই, চলতে চলতে হঠাৎ-ই একদিন সেই আঁচল কোথায় যেন হারিয়ে যায়। তারপর সেই পরম্পরাকে মনে রেখে নিজের আঁচলে নিজেকে শক্ত করে জড়িয়ে  শুরু হয় আমাদের পথ চলা। 
 
গ্লোবালাইজেশনের যুগে সুদূর আজ আমাদের খুব কাছের। বলতে গেলে হাতের মুঠোয়। মিডিয়ার কল্যাণে ভালো-মন্দের খবরাখবরের আজ অবাধ বিচরণ -- তা সে পৃথিবীর যে প্রান্তেরই হোক। আমরা শিক্ষিত হচ্ছি প্রতিদিনের চেষ্টায়। পুঁথিগত বিদ্যায় আমাদের মাথা উঁচু থেকেও উঁচুতে পৌঁছায়। তবুও দেশ, শহর, পরিবারভেদে নারীকে দেখার, নারীকে বোঝার, নারীকে সম্মান করার পরিবর্তে নানা অসহিষ্ণুতা আর অপ্রীতিকর ঘটনার নজির আজ পৃথিবীময়।
 
পৌরাণিক কাহিনী আর ধর্মীয় সংস্কার আমাদেরকে বিনম্র হতে শেখাবে। ঘরের মা, বোন, মেয়েকে সম্মান দিতে শেখাবে --- তবেই না সত্যি করে আমরা মানুষ নামের যোগ্য হবো। মেয়েদের আজ সচেতন হবার সময় এসেছে আর এই সচেতনতার কথা ছড়িয়ে দিতে আটলান্টায় এবারের পুজোয় ইন্দ্রানী করের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয় নৃত্যনাট্য "আমি সেই মেয়ে।" মেয়েদের মনের কথা, সুখ-দুঃখের কথা, ভালোলাগা না-লাগার কথা, মাতৃত্বের অবহেলার কথা ---অভিনয়ে আর নাচের মাধ্যমে  ফুটিয়ে তোলা হয়েছে অত্যন্ত সুন্দরভাবে
এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি আনন্দিত। আমার বিশ্বাস, আজ সঠিক সময় এসেছে নারীদের একে অন্যকে সঠিক পথ দেখানোর, একে অন্যকে সচেতন করার। মা দুর্গারই মতো নিজের, সন্তানের আর সমাজের রক্ষার দায়িত্ব নারীকেই পালন করতে হবে। তাই মন্ত্রে দেবী মায়ের ভাসান আর বিসর্জনের ঢাকের করুণ বাজনা আমাদেরকে যেন দুর্বল না করে এই হোক আমাদের সংকল্প। "যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তসৈ,  নমস্তসৈ,  নমস্তসৈ নমো নমঃ।"

জবা চৌধুরী, আটলান্টা

১৬ই অক্টোবর ২০১৯

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.