আবু আলী, ঢাকা ॥
কয়েক মাস ধরেই ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন বিল ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জি নিয়ে যে বিতর্ক চলছিল পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছিলেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও কূটনীতিকেরা। পরিস্থিতি নিয়ে তাদের উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছিল।
চূড়ান্ত নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) থেকে বাদ পড়েছেন আসামের ১৯ লাখ মানুষ। দেখা যাচ্ছে ভারতের ও ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জন্য গুরুত্বপূর্ণ উত্তর পূবাঞ্চলের রাজ্যটিতে কিছু ক্ষমতাসীন দলের নেতারা প্রায়ই এনআরসি থেকে বাদ পড়া ব্যক্তিদের চলে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলছেন। এই ইস্যুতে ইতোমধ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছে উত্তর-পূর্ব ভারতে।
ঠিক সেই মুহুর্তে পূর্ব নির্ধারিত ভারত সফর বাতিল করেছেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এটি ছিল তাঁর পূর্বনির্ধারিত ভারত সফর। তিন দিনের সফরে ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর নয়াদিল্লি যাওয়ার কথা ছিল।
দেশটির বিদেশ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আব্দুল মোমেনের ভারত সফরের বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে শেষ মুহূর্তে এসে কেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটি বাতিল হয়েছে, তা নিয়ে তাঁরা কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো আভাস দিয়েছে, ভারতের নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।
এ আইন যে দুই নিকট প্রতিবেশীর বিশেষ সম্পর্কে কিছুটা অস্বস্তি তৈরি করেছে, গত বুধবার তার আভাস দেন বিদেশমন্ত্রী। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারের সঙ্গে নিজের দপ্তরে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ভারত ঐতিহাসিকভাবে একটি সহনশীল দেশ, যারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে। সেখান থেকে সরে এলে ভারতের ঐতিহাসিক অবস্থান দুর্বল হবে।
ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাসের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কী, তা জানতে চাইলে বিদেশমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘ভারত ঐতিহাসিকভাবে একটা সহনশীল দেশ, যারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে। সেখান থেকে সরে এলে ভারতের ঐতিহাসিক অবস্থান দুর্বল হবে বলে আমি মনে করি। আমি মনে করি যে এ নিয়ে যতগুলো কথা উঠেছে, এর অনেকগুলো সত্যি নয়। আমাদের দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি অত্যন্ত বেশি। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আমাদের দেশে অন্য ধর্মের লোক কেউ নিপীড়িত নয়। উন্নয়নের মহাসড়কে আমরা যাত্রা শুরু করেছি। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা সবাইকে একই দৃষ্টিতে দেখি। বাংলাদেশে আমরা কে কোন ধর্মের, সেটা নিয়ে বিচার করি না। বিচার করি সে বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা সব ধর্মের লোককে অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে দেখি। যারাই তথ্য দিচ্ছেন যে বাংলাদেশে অনেকে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, কথাটা সত্যি নয়। যাঁরা তথ্য নিয়েছেন, ওনাদের যাঁরা বুঝিয়েছেন, তাঁরা সত্যি কথা বলেননি।’
১২ই ডিসেম্বর ২০১৯