প্রভাষ চৌধুরী, ঢাকা ব্যুরো অফিস:
রাত পোহালেই ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন ঢাকা দুই সিটির মেয়র ও কাউন্সিলর। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া হয়েছে ইভিএমসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম। রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ইভিএমসহ নির্বাচনের নানা উপকরণ বুঝে নিয়েছেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনে সাংবাদিকদের সিইসি বলেন, ভোটের দিন কোনো সহিংসতার আশঙ্কা নেই।
শেষ মুহূর্তে নানা ব্যস্ততায় কেটেছে রিটানিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের। শুক্রবার সকাল থেকে মোট ১৬ টি ভেন্যু থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রের জন্য প্রিজাইডিং অফিসারা বুঝে নিয়েছেন ইভিএম ও নির্বাচনী অন্যান্য সরঞ্জামাদি। ইভিএমের কন্ট্রোল ইউনিট ও ব্যালট ইউনিটসহ মোট ৫২ ধরনের নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়েছে।
খিলগাঁও মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে সরঞ্জাম বিতরণ কার্যক্রম পরিদর্শনে আসেন দক্ষিণ সিটির রিটানিং কর্মকর্তা। এসময় তিনি ৭২১ টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে বলেন, এই কেন্দ্রগুলো বিশেষ নজরদারিতে থাকবে।
আব্দুল বাতেন বলেন, কোনো পোলিং এজেন্ট যিনি ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকবেন তার প্রার্থীর পক্ষে যে এজেন্ট থাকবে তারা কোনো ধরনের মোবাইল ফোন কেন্দ্রে আনবেন না। এটা আইনের বিধান।
উত্তর সিটির রিটানিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শেষ মুহূর্তের নির্বাচনী প্রস্তুতি দেখতে এসে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশাবাদ জানান।
তিনি বলেন, আমরা শতভাগ প্রস্তুত। সকাল থেকেই কেন্দ্রে মালামাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। উত্তরে একটি ঘটনা ছাড়া কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। উত্তরের কেন্দ্রগুলোতে ১৫ হাজার ৭০০টি ইভিএম মেশিন পাঠানো হয়েছে। এখানে বুথের সংখ্যা ৭ হাজার ৮৫০টি। প্রতিটি বুথে ২টি করে ইভিএম থাকবে।
উত্তরের ১ হাজার ৩১৮ কেন্দ্রের মধ্যে ৮৭৬টি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র বলি না, আমরা বলি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। উত্তরে মোট কেন্দ্র হলো ১ হাজার ৩১৮টি। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ৮৭৬টি। সাধারণ কেন্দ্র ৪৪২টি।
‘শূন্য গণনা’র প্রমাণ দেখিয়ে প্রত্যেক কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হবে বলে জানান উত্তর সিটির রিটানিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম। নিয়ম অনুসারে ব্যালট বাক্স খালি দেখিয়ে ভোট শুরু করা হয়, কিন্তু ইভিএম সিস্টেমে ব্যালট বাক্স নেই, তাই খালি বাক্স দেখানোরও সুযোগ নেই। এজন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভোট শুরুর আধা ঘণ্টা আগে ইভিএম-এর ক্ষেত্রে ‘শূন্য ভোট’ গণনার কাগজ প্রিন্ট করা হবে, বলেন উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম।
এদিকে ভোট গ্রহণের জন্য ২৮ হাজার ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে জানিয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি অবৈধভাবে অন্য কারো ভোট দিতে চায়, তবে সে ব্যক্তির ফিঙ্গারপ্রিন্ট বাতিল ও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, প্রতিটি মেশিন সেন্ট্রালি কাস্টমাইজড করা। এবং এসব মেশিন ১০/১৫ দিন আগেই রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। সুতরাং মেশিন এবং এর কাস্টমাইজেশন নিয়ে আমরা ১০০ ভাগ নিশ্চিত। এ মেশিনে কোনোভাবে কোনো অনৈতিক কাজ করা সম্ভব না।
অন্যদিকে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিদর্শন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যাবার আহ্বান জানান তিনি। ।
নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদা বলেন, এ দেশে নির্বাচন কমিশনের প্রতি সব রাজনৈতিক দলের আস্থা ছিল আমি তো দেখি নাই। যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের বক্তব্য একরকম হবে। আবার যারা বিরোধী দলে আস্থা ইসির ওপর তাদের আসবে না এটিই দেশের পলিটিক্যাল কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনে সচেষ্ট। আমরা পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন করিনি, করব না। তথাপি কমিশনের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা-অনাস্থা তাদের মানসিকতার ওপর নির্ভর করে।
ইভিএমে ভালো ভোট হবে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রিসাইডিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ইভিএম বিষয়ে যথেষ্ট প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারা যে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করবেন। ভোটাররা তাদের ইচ্ছামতো ইভিএমে ভোট দিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এই আহ্বান জানাই আমি।
এদিকে সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের সবশেষ প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিইসি। এসময় ভোটের দিন কোনো সহিংসতার আশঙ্কা নেই জানিয়ে তিনি নগরবাসীকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি শেষ। আশা করি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে।
এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সকল ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ হবে। উত্তর সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন।। দক্ষিণে মোট ভোটার সংখ্যা ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
৩১শে জানুয়ারি ২০২০
৩১শে জানুয়ারি ২০২০