আজ থেকে প্রায় ছয় বছর আগের কথা। গবেষণার কাজে ত্রিপুরা যেতে হবে। জীবনে প্রথমবার বাংলাভাষী এই রাজ্যে যাওয়ার আকর্ষণ থাকলেও, ছিল আশঙ্কাও। কাউকেই চিনি না, জানি না। মনের মধ্যে ছিল নানা প্রশ্নের দোলাচল। সেখানকার মানুষজন কেমন ? যাচ্ছি তো এতদূর। কাজের অগ্রগতি আদৌ হবে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। ত্রিপুরা নিয়ে তখনও আমার জ্ঞানও যথেষ্ট সীমিত। খানিকটা ইন্টারনেট নির্ভর। তবে প্রবাদপ্রতিম সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ' প্রথম আলো ' পড়ে ত্রিপুরা যাওয়ার এক আত্মীয় টান বহুকাল আগেই অনুভব করেছিলাম। ভাবিয়েছিল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিসের আকর্ষণে বারংবার ছুটে গেছেন এই রাজভূমে ? আমার গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক সুস্নাত দাশের লেখা একটি চিঠি সম্বল করে পাড়ি দেই ত্রিপুরার উদ্দেশে। ওনার এক পরিচিত লেখকের উদ্দেশ্যে সেই চিঠি। সঙ্গে তাঁর ফোন নম্বরও।
নির্দিষ্ট দিনে আগরতলা এয়ারপোর্টে নেমে ফোন করি সেই নম্বরে। ফোনের ওপ্রান্ত থেকে ভেসে আসে এক স্নেহমাখা কণ্ঠ - 'তুমি চলে এসো কর্নেল চৌমুহনীতে। আমি তোমারই জন্যে অপেক্ষা করছি।' এমন আন্তরিক কণ্ঠ শুনে মনের মধ্যে জমে থাকা সমস্ত মেঘ মুহূর্তে কেটে গেল। পৌঁছে দেখি সত্যিই দাঁড়িয়ে আছেন সারল্য মাখা স্নিগ্ধ চেহারার নিপাট এক ভদ্র মানুষ। মুহূর্তেই ভালো লেগে গেল। ভরসাও পেলাম। মনে হল যেন ওনার সাথে আমার কতদিনের আত্মীক সম্পর্ক। স্যারের চিঠিটি দিলাম। বললেন, সুস্নাত জানিয়েছে যে তুমি আজ আসবে। উনি আর কেউ নন, আমার পরম শ্রদ্ধেয় আত্মজন ও প্রিয় লেখক ড. দেবব্রত দেব রায়। এরপর প্রতিটা দিন ওনার সাহচর্যে কেটেছে। পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ত্রিপুরার বিশিষ্ট ও কৃতিজনদের সাথে। উত্তর পূর্ব ভারতের প্রতিথযশা অধ্যাপক মহাদেব চক্রবর্তীর বাড়িতে দীর্ঘ সময় কাটানো; উজ্জয়ন্ত প্রাসাদের আর্কাইভ ও বীর চন্দ্র লাইব্রেরিতে কাজ করার সুযোগ; উমাকান্ত একাডেমী, তুলসী দেবী গার্লস হাই স্কুল সহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে নথিপত্র নিয়ে কাজ করার যে সুযোগ পেয়েছি সবই দেবব্রতদার জন্যেই সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন আগরতলার বৌদ্ধিক মানুষজনের সাথে। নিয়ে গিয়েছেন হেলেনাদির বাড়িতে। তিনি ত্রিপুরার অত্যন্ত পরিচিত ও বনেদি পরিবারের সদস্য। কর্ণেল মহিম ঠাকুরের ওপর এক বিশেষ সংখ্যায় লেখা দিতে বলেন হেলেনাদি। ফিরে এসে ওনার কথা রেখেছিলাম। ওনার বাড়িতে বসেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিয়েছি। আলোচনা করেছি ত্রিপুরার সংস্কৃতি, ইতিহাস নিয়ে। তিনি নিয়ে গেছেন তাঁদের আদি বাড়িতে। যে বাড়ি কবিগুরুর পদধূলিতে ধন্য হয়েছে।
সপ্তাহকাল ধরে আগরতলায় থাকার সেই স্মৃতি আজও অমলিন। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে ' মধুরেন সমাপয়েৎ '। আর তা না হলে বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়না। চলে আসার আগের দিন দেবব্রতদার বাড়িতে নৈশভোজের আমন্ত্রণ। বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী স্বর্ণিমা বৌদির হাতে পঞ্চব্যঞ্জনের জাদু আজও ভুলতে পারিনি। ফেরার দিনে বিমান যখন অনন্ত আকাশের অভিমুখে যাত্রা শুরু করে তখন চোখ বন্ধ করে অনুভব করি ত্রিপুরার প্রতি বিশ্বকবির অমোঘ টানের প্রকৃত কারণ।
ড. রাজর্ষি বিশ্বাস,গবেষক
কুচবিহার
৩০শে জানুয়ারি ২০২০
নির্দিষ্ট দিনে আগরতলা এয়ারপোর্টে নেমে ফোন করি সেই নম্বরে। ফোনের ওপ্রান্ত থেকে ভেসে আসে এক স্নেহমাখা কণ্ঠ - 'তুমি চলে এসো কর্নেল চৌমুহনীতে। আমি তোমারই জন্যে অপেক্ষা করছি।' এমন আন্তরিক কণ্ঠ শুনে মনের মধ্যে জমে থাকা সমস্ত মেঘ মুহূর্তে কেটে গেল। পৌঁছে দেখি সত্যিই দাঁড়িয়ে আছেন সারল্য মাখা স্নিগ্ধ চেহারার নিপাট এক ভদ্র মানুষ। মুহূর্তেই ভালো লেগে গেল। ভরসাও পেলাম। মনে হল যেন ওনার সাথে আমার কতদিনের আত্মীক সম্পর্ক। স্যারের চিঠিটি দিলাম। বললেন, সুস্নাত জানিয়েছে যে তুমি আজ আসবে। উনি আর কেউ নন, আমার পরম শ্রদ্ধেয় আত্মজন ও প্রিয় লেখক ড. দেবব্রত দেব রায়। এরপর প্রতিটা দিন ওনার সাহচর্যে কেটেছে। পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ত্রিপুরার বিশিষ্ট ও কৃতিজনদের সাথে। উত্তর পূর্ব ভারতের প্রতিথযশা অধ্যাপক মহাদেব চক্রবর্তীর বাড়িতে দীর্ঘ সময় কাটানো; উজ্জয়ন্ত প্রাসাদের আর্কাইভ ও বীর চন্দ্র লাইব্রেরিতে কাজ করার সুযোগ; উমাকান্ত একাডেমী, তুলসী দেবী গার্লস হাই স্কুল সহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে নথিপত্র নিয়ে কাজ করার যে সুযোগ পেয়েছি সবই দেবব্রতদার জন্যেই সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন আগরতলার বৌদ্ধিক মানুষজনের সাথে। নিয়ে গিয়েছেন হেলেনাদির বাড়িতে। তিনি ত্রিপুরার অত্যন্ত পরিচিত ও বনেদি পরিবারের সদস্য। কর্ণেল মহিম ঠাকুরের ওপর এক বিশেষ সংখ্যায় লেখা দিতে বলেন হেলেনাদি। ফিরে এসে ওনার কথা রেখেছিলাম। ওনার বাড়িতে বসেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিয়েছি। আলোচনা করেছি ত্রিপুরার সংস্কৃতি, ইতিহাস নিয়ে। তিনি নিয়ে গেছেন তাঁদের আদি বাড়িতে। যে বাড়ি কবিগুরুর পদধূলিতে ধন্য হয়েছে।
সপ্তাহকাল ধরে আগরতলায় থাকার সেই স্মৃতি আজও অমলিন। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে ' মধুরেন সমাপয়েৎ '। আর তা না হলে বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়না। চলে আসার আগের দিন দেবব্রতদার বাড়িতে নৈশভোজের আমন্ত্রণ। বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী স্বর্ণিমা বৌদির হাতে পঞ্চব্যঞ্জনের জাদু আজও ভুলতে পারিনি। ফেরার দিনে বিমান যখন অনন্ত আকাশের অভিমুখে যাত্রা শুরু করে তখন চোখ বন্ধ করে অনুভব করি ত্রিপুরার প্রতি বিশ্বকবির অমোঘ টানের প্রকৃত কারণ।
ড. রাজর্ষি বিশ্বাস,গবেষক
কুচবিহার
৩০শে জানুয়ারি ২০২০