আবু আলী, ঢাকা ॥
ভাষার জন্য জীবন দেওয়ার নজির বিরল। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে জীবন দিয়েছিল রফিক, জব্বার, সালাম, বরকতসহ অনেকেই। পরবর্তী সময়ে তাদের আত্মহুতিতে রাষ্ট্রভাষা বাংলা হয়েছে। ভাষাশহীদদের স্মরণে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বাংলা একাডেমি চত্ত্বরে চলে অমর একুশে বইমেলা। যদিও এবার কিছুটা ব্যত্যয় হচ্ছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের কারণে একদিন পিছিয়ে ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। একদিন বিলম্বে শুরু হলেও মেলার পরিসেবা বাড়ানো হবে না সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
৩০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০’ উপলক্ষে বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে বাংলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, বিকাশের চিফ মার্কেটিং অফিসার মীর নওবত আলী, ক্রসওয়াক কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচারক এম এ মারুফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
হাবীবুল্লাহ সিরাজী আরও বলেন, ‘আমাদের একটি অংশের এটা ট্র্যাডিশন হয়ে গেছে যে, মেলার শেষের দিকে এসে দাবি করি সময় বাড়ানোর জন্য। কিন্তু এ বছর মেলা শুরু হওয়ার আগ থেকেই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতর থেকে স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে যে, ৩ মার্চ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদযাপনের প্রস্ততি শুরু হবে। সুতরাং বই মেলা শেষ হওয়ার দুইদিনের মধ্যে যেন কোনো স্থাপনা না থাকে। তাই বই মেলার সময় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আমরা চেষ্টা করব সবার সম্বলিত প্রচেষ্টায় ফেব্রুয়ারির মধ্যে বইমেলা শেষ করতে।
মেলায় থাকছে কঠোর নিরাপত্তার বলয়। ‘গতবছর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন এক হাজার পুলিশ সদস্য। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দেড় হাজারে। একই সঙ্গে আনসার সদস্যের সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়া র্যাবের বিশেষ টিম কাজ করবে।
তিনি মেলায় আগতদের শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজ চলায় এ রাস্তায় গাড়ি পার্কিং না করতে আহ্বান জানান। অস্থায়ী দোকান, হকার উচ্ছেদ, ধূলাবালি নিয়ন্ত্রণ ও বৃষ্টির হলে অস্থায়ী শেল্টার ও করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আগামী ২ ফেব্রুয়ারি রোববার বিকেল ৩টায় গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মেলা পরিদর্শন করবেন তিনি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। আর সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
এবার মেলা প্রাঙ্গণকে সাজানো হয়েছে চারটি অংশে−শিকড়, সংগ্রাম, মুক্তি এবং অর্জন।
মেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ জানান, এবারের মেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২৬টি প্রতিষ্ঠানের ১৭৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩৪টি প্রতিষ্ঠানের ৬৯৪টি ইউনিট থাকবে। মোট ৫৬০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৭৩টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ৩৩টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৩৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ১৫২টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দের পাশাপাশি ৬টি উন্মুক্ত স্টলসহ ১৫৮টি লিটলম্যাগকে স্টল দেওয়া হয়েছে। আর শিশু চত্বরকে সাজানো হয়েছে নতুন করে।
এবারের মেলার নতুন যেসব বিষয় থাকছে তা হলো ডিজিটাল পদ্ধতিতে মেলার আবেদনপত্র বিতরণ বা গ্রহণ এবং অনলাইনে ভাড়ার অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা, মেলায় তিনটি তথ্যকেন্দ্র থাকবে। বরাবরের মতো নামাজের জায়গা, উন্নত টয়লেটের ব্যবস্থা, ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার, হুইল চেয়ার ও ফুডকোর্ট ব্যবস্থাও থাকছে।
এবারের মেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ও পুনঃমুদ্রিত ১০৪টি বই। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণ খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।
৩০শে জানুয়ারি ২০২০