আবু আলী, ঢাকা ।।
শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থতা হলেও সেলফ কোয়ারেন্টিনে পারিবারিক পরিবেশে মানসিকভাবে স্বস্তিবোধ করছেন কোয়ারেইটাইনে থাকা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার চিকিৎসার পুরো কার্যক্রম তদারকি করছেন লন্ডনে থেকে পুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিনী ডা. জোবাইদা রহমান।
গতকাল ২৭ মার্চ শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসার সর্বশেষ অবস্থা জানাতে গিয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, কোয়ারেইনটাইনে ম্যাডামের চিকিৎসা চলছে। উনি শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ হলেও পারিবারিক পরিবেশে এখন স্বস্তি বোধ করছেন। উনার মানসিক বলটা বেড়ে গেছে। আগে যে বিপর্যস্ত চেহারা ছিলো সেটাও অনেকটা কমে আসছে।
তিনি জানান, লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিনী বিশিষ্ট কার্ডোলিজিস্ট ডা. জোবাইদা রহমান ম্যাডামের পুরো চিকিৎসার কার্যক্রম সার্বক্ষনিক তদারকি করছেন।
গত বুধবার বিকালে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে গুলশানের ভাড়াবাসা ফিরোজা’য় আসেন খালেদা জিয়া। বাসায় আসার পর ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে দেখে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেন।
৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া রিউমাটিজ আর্থারাইটিস, ডায়াবেটিকস, চোখ ও দাঁতের নানা রোগে আক্রান্ত।
‘ফিরোজা‘য় দোতলায় খালেদা জিয়া ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেনটাইনে আছেন। তার সাথে নার্সসহ সেবা প্রদানকারী কয়েকজন সদস্যও সেলফ কোয়ারেইটাইনে রয়েছেন দোতলায়।
অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ম্যাডাম সেলফ কোয়ারেনটাইনে আছেন। এই সময়ে সোশ্যাল ডিসটেন্স অর্থাৎ একজন থেকে অপরজনকে যে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলার নিয়ম তা যথাযথ মেনেই ম্যাডামের সেবা প্রদানকারীরাও সেবা দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ম্যাডাম প্রিয়জনদের সাথে মোবাইলে কথা-বার্তা বলতে পারছেন, ডাক্তারদের সাথে কথা বলছেন যেটা সমস্যা যেটা জানাচ্ছেন। সম্পূর্ণ পারিবারিক পরিবেশে তিনি সময় কাটাচ্ছেন। কখনো শুয়ে, কখনো বসে, কখনো বই-পত্র পড়ে।
চিকিৎসার বিষয়ে অধ্যাপক জাহিদ জানান, বিএসএমএমইউর মেডিকেল বোর্ডের দেয়া ঔষধপত্রের কিছুটা সংশোধন, পরিবর্তন এনেছেন ম্যাডামের ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম।
তিনি আরো জানান, ম্যাডাম হাত-পায়ে প্রচন্ড ব্যথা রয়েছে। রিউমাটিজ আর্থারাইটিজের কারণে হাত-পায়ের জয়েন্টে গুটলী হয়েছে। এগুলো উনাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে, প্রচন্ড ব্যথা। এই ব্যথা উপশমের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ঔষধে কিছুটা পরিবর্তন ও সংযোগ এনেছেন।
তিনি বলেন, কারাগারের নির্জনতা ও কিছু সমস্যার কারণে ম্যাডাম মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। উনি অনেকটা শুকিয়ে গেছেন, দুর্বলতাও রয়েছে তার। ওজনও তার ৯/১০ কেজি কমে গেছে। আমরা আশাবাদী কোয়ারেন্টিনে চিকিৎসায় তিনি অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠবেন। একটা সিষ্টেমের মধ্যে চলে আসলে উনার ডায়াবেটিকসের মাত্রাও ক্রমশঃ কমে আসবে বলে আমরা ধারণা করছি।
বিএসএমএমইউ‘র মেডিকেল বোর্ডের ব্যবস্থাপত্র ও পরীক্ষার কাগজপত্রসমূহের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক জাহিদ।
ফিরোজায় এখন মেডিকেল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিমের সদস্য ও নিকট আত্বীয় স্বজনরা ছাড়ার কারো প্রবেশাধিকার নেই। নিরাপত্তার কর্মীরা সব সময়ে গেইট বন্ধ রেখে পাহারা দিচ্ছেন।
২৮শে মার্চ ২০২০
২৮শে মার্চ ২০২০