প্রভাষ চৌধুরী, ঢাকা ব্যুরো এডিটর:
গোটা ভারতে লকডাউনের জেরে আটকে থাকার পর অবশেষে ত্রিপুরা থেকে দেশের মাটিতে পৌঁছেছেন ইয়াকুব দম্পতি।
বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) দুপুরে আখাউড়া-আগরতলা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট সীমান্ত পথে এ দম্পতি দেশে ফেরেন।
এরা হলেন- কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর ঠাকুর পাড়ার গ্রামের ইয়াকুব আলী (৫২) এবং তার স্ত্রী শিরিনা বেগম (৪৮)। দেশের মাটিতে পৌঁছে গত দুই দিনের চরম দুশ্চিন্তার কথা তুলে ধরেন তারা। সেই সঙ্গে কৃতজ্ঞতা জানান বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশন ও ত্রিপুরা রাজ্যের গণমাধ্যম কর্মীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৫ ফেব্রুয়ারি স্বামীর লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসা নিতে ভারতের চেন্নাইয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের এ দম্পতি। গত রোববার (২২ মার্চ) সন্ধ্যায় বিমানযোগে চেন্নাই থেকে কলকাতা হয়ে তারা ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা পৌঁছান। আগরতলায় এসে তারা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারত সরকারের ঘোষিত লকডাউনে আটকা পড়েন। পরে তারা আগরতলা শহরে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছিলেন। এ বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন গণমাধ্যমে হইচই পড়ে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনের বারান্দায় গত দুই দিনের সঙ্কটময় স্মৃতির বর্ণনা দিয়ে শিরিনা বেগম জানান, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে সরকারের লকডাউন থাকায় অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে আগরতলায় এসে বিপাকে পড়ি। আগরতলা থেকে বাংলাদেশে আসার কোনো সুযোগ ছিল না। লকডাউনের কারণে আগরতলা শহরে কোনো আবাসিক হোটেল কিংবা গেস্ট হাউজ কোনোটাই খোলা ছিল না। পুরো শহর ছিল জনমানব শূন্য। সেখানে কোথাও থাকার ব্যবস্থা না পেয়ে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে বসে থাকি।
আবেগাপ্লুত শিরিন বলেন, পরে সেখানকার গণমাধ্যম কর্মীরা আমাদের অসহায়ত্বের খবরটি গুরুত্বের সাথে পত্রিকায় তুলে ধরেন। এরপর রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন ও ত্রিপুরার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন আমাদের খুঁজে বের করে। পরে আগরতলা হজক্যাম্পে আমাদেরকে থাকার সুযোগ করে দেন তারা।
পরে সেখান থেকে আজ সকালে ত্রিপুরা পুলিশের একটি গাড়িতে করে বাংলাদেশে আসার জন্যে আগরতলা ইমিগ্রেশনে আসেন এই দম্পতি। সেখানে (আগরতলা ইমিগ্রেশনে) প্রবেশকালে তাদেরকে আটকে দেয় কর্তব্যরত বিএসএফ। পরে আবারো গণমাধ্যমকর্মী এবং বাংলাদেশের সহকারী হাই-কমিশনকে ফোন করে বিষয়টি জানান। পরে তারা ত্রিপুরা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলে দেশের মাটিতে ফেরার ব্যবস্থা করেন এই দম্পতির।
ত্রিপুরার মাটিতে দুই রাতের সেই দুঃসহ স্মৃতি কোনোদিন ভুলতে পারবেন না বলে জানান গৃহবধূ শিরিন।
আখাউড়ার মাটিতে পা দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে শিরিন বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যে লকডাউন থাকা সত্ত্বেও নিজ দেশে ফিরে আসার সুযোগ করে দেওয়ায় ত্রিপুরা রাজ্য সরকার ও বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের কাছে তারা কৃতজ্ঞ।
শিরিনার অসুস্থ স্বামী বলেন, এমন দুর্ভোগ বর্ণনা করার মতো নয়। তবে ধন্যবাদ সে দেশের গণমাধ্যমকর্মীদের। আর কিছু বলতে চাই না।
ভারতের ত্রিপুরার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনার কিরীটি চাকমা বলেন, আগরতলা সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পেয়ে ওইদিন রাতেই বাংলাদেশ দম্পতিকে মেডিক্যাল চেকআপের পর তাদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। পরবর্তীতে রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় অসুস্থ এ দম্পতিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে আখাউড়া-আগরতলা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট সীমান্ত পথে দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
আখাউড়া ইমিগ্রেশনের ইনচার্জ আবদুল হামিদ বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারত জুড়ে লকডাউন চলছে। ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট সীমান্ত পথে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সতর্কতায় কূটনৈতিক, অফিসিয়াল, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ভিসাধারী ছাড়া অন্য কোনো ভিসার যাত্রী আখাউড়া-আগরতলা চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন সীমান্ত পথে পারাপার বন্ধ রয়েছে।
তবে ভারতে লকডাউনের মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত শিরিন দম্পতি সহ অন্তত ১৫ জন বাংলাদেশি যাত্রী দেশে ফিরে আসেন। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে একটি এ্যাম্বুলেন্সে করে তাদেরকে কুমিল্লা মুরাদনগরে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।
২৮শে মার্চ ২০২০
২৮শে মার্চ ২০২০