আবু আলী, ঢাকা ॥
বাংলাদেশের পাহাড়ী জেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভার গাজীনগর এলাকায় ব্যক্তিমালিকানাধীন বাগানের গাছ কাটা নিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ৩ মার্চ মঙ্গলবার দুপুরের এ ঘটনায় একজন বিজিবি সদস্যসহ অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন।
সংঘর্ষের ঘটনায় বিজিবি সদস্যসহ ছয়জন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম সালাউদ্দিন।
এ ঘটনার খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খন্দকার রেজাউল কমিরকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন। পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাজীনগর এলকায় নিজের বাগান থেকে ৩ মার্চ সকালে বেশকিছু গাছ কাটেন বাগানের মালিক সাহাব মিয়ার ওরফে প্রকাশ মুছা। গাড়িতে করে নেওয়ার সময় গাজীনগর এলাকায় তাদের থামিয়ে দেয় বিজিবি সদস্যরা। এ সময় গাছগুলো অবৈধ দাবি করে বিজিবি সদস্যরা সেগুলো জব্দ করে তাদের হেফাজতে নিতে চান।
ওই ঘটনার একপর্যায়ে এলাকবাসীর সঙ্গে বিজিবি সদস্যরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষে গোলাগুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন বিজিবি সদস্য মোহাম্মদ শাওন (৩০), বাগান মালিক সাহাব মিয়া ওরফে প্রকাশ মুছা (৫৫), তার ছেলে আহম্মদ আলী (৩০)। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান স্থানীয় মো. আলী আকবর (৩০)। আর স্বামী ও সন্তানের মৃত্যুর খবর শুনে সাহাব মিয়ার স্ত্রী রঞ্জু বেগম হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।
এ ছাড়া গুরুতর আহত অবস্থায় মো. মফিজ মিয়া ও মো. হানিফ নামের দুই গ্রামবাসীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে মফিজ মিয়া (৫০) পথিমধ্যে মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেন মাটিরাঙ্গার পৌর মেয়র সামছুল হক।
একজন বিজিবি সদস্যসহ ছয়জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে মাটিরাঙ্গা পৌর মেয়র জানান, গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে অনাকাক্সিক্ষত ও হৃদয় বিদারক এ ঘটনা ঘটে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস ও পুলিশ সুপার মো. আবদুল আজিজসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে এলাকাবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম সালাউদ্দিন বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি। নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি আধুনিক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।’
গুইমারা সেনা রিজিয়ন কমান্ডার মো. শাহরিয়ার জামান বলেন, ‘এ রকম ঘটনা ঘটবে তা কখনো চিন্তা করিনি। এ ঘটনার পেছনে যারা যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে বিচার করা হবে। কেউ পালিয়ে যেতে পারবে না।
জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, এ ঘটনায় তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি দ্রুত প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পরই দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৩রা মার্চ ২০২০