মানুষের জন্যই মানুষ। সংকটে, বিপদে মানুষই ছুটে এসে সাহায্য করবে এই প্রত্যাশা মানুষ করতেই পারে। পুরো বিশ্ব জুড়ে চলছে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। বিশ্ব আজ থমকে গেছে। সবাই নিজের জীবন নিয়ে শংকিত। ঠিক সেই সময় মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে আবির্ভূত হন শাপলা দেবী ত্রিপুরা নামের এক মহিয়সি নারী।
তিনি বাংলাদেশের দুর্গম পাহাড়ের বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি এ পর্যন্ত খাগড়াছড়ি সদর, মাটিরাঙ্গা, রামগড়, মহালছড়ি, পানছড়ি ও দীঘিনালা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি জনপদগুলোর পাঁচ শতাধিক পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন। শুধু তাই নয়, ত্রাণ বিতরণের সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সেসব এলাকার মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, শাপলা দেবী ত্রিপুরা শুধু যে এই করোনা সংকটের কালেই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা নয়। যেকোনো দুর্যোগেই তিনি তাঁদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। তারা জানিয়েছেন শাপলা দেবী ত্রিপুরাই এক বাংলাদেশ। শাপলা দেবী ত্রিপুরা এবং তাঁর সহযোগী-শুভানুধ্যায়ীদের মিলিত তৎপরতায় সংকটাপন্ন মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের এই প্রয়াসকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে বিশিষ্টজনেরা। সামাজিক সংহতি ও সহমর্মিতার বোধের জাগরণ এ রকম সংকটের মুহূর্তগুলোতেই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জানা গেছে, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের গুণীজন সম্মাননা প্রাপ্ত শ্রীমতি শাপলা দেবী ত্রিপুরার সেবামূলক কাজের হাতেখড়ি তাঁর প্রিয় প্রতিষ্ঠান খাগড়াপুর মহিলা কল্যান সমিতির মধ্য দিয়ে। ২৭ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১২ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। মূলত নারীর অধিকার নিয়েই বেশি তুলেছেন বজ্র কন্ঠস্বর। নারীর প্রতি কোন প্রকার সহিংসতা দেখলেই সেখানে প্রতিরোধের দূর্গ গড়ে তুলেছিলেন তিনি। যেন সকল অসহায় নারীদের প্রধান আশ্রয়। এরপর সমাজের নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়া এই মানুষটি ধীরে ধীরে জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কোথাও সদস্যপদ আবার কোথাওবা গুরুদায়িত্ব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। কখনও বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যান সংসদের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক আবার কখনওবা জেলা সদর হাসপাতালের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, এমন অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত তিনি। মনের দিক থেকে অনেক বড় মাপের একজন মানুষ। তিনি অনেক বড় ধনাঢ্য ব্যক্তিও নন। তিনি শুধুই একজন সমাজসেবক। তাইতো দেশের এই ক্রান্তিলগ্নেও থেমে নেই তাঁর সামাজিক কার্যক্রম। অক্লান্ত পরিশ্রম করে শুভাকাঙ্খীদের সহযোগিতায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন ত্রাণ সামগ্রী এবং করোনা ভাইরাস সম্পর্কে পাহাড়বাসীকে করে তুলেছেন সচেতন। এ যেন সত্যিই ভালবাসার নৌকা পাহাড় বেয়ে যায়। কোন দুর্গম গিরি পারেনি থামাতে। কখনও পানছড়ির প্রান্তিক এলাকা লোগাং আবার কখনওবা মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইনদং এলাকায় পৌঁছে গেছে ত্রাণের প্যাকেটগুলো। এভাবে বাড়ির প্রাঙ্গন থেকে শুরু করা ত্রাণ বিতরণ শেষ হয়েছে এক দুর্গম পাহাড়ের চুড়ায় গিয়ে। শ্রীমতি শাপলা দেবী ত্রিপুরার এই ত্রাণ পাহাড়ের দুর্গম এলাকার মানুষের চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল সত্য, কিন্তু এটিও সত্য যে সকলের জন্য এই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমটি যথেষ্ট অনুপ্রেরণার। শাপলা দেবী ত্রিপুরা বলেন, বর্তমান মহামারীর সময়ে থমকে আছে দেশের সমস্ত অর্থনীতির চাকা। এমন করুন বাস্তবতায় দিনমজুরেরও সুযোগ নেই কোথাও। তাই দুর্গম পাহাড়ের আয়-রোজগার বিহীন ‘দিনে আনে দিনে খায়’ মানুষগুলো কোথায় গিয়েইবা পাবে পর্যাপ্ত খাবার? তখন স্বাভাবিকভাবে করোনার চিন্তার চেয়ে দু’মুঠো আহারের চিন্তাটা প্রাধান্য পায় অনেক বেশি। কেননা করোনার আক্রান্তে মারা যাবার আগে যদি খাবারের অভাবে মারা যায়, তবে এর চেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা আর কি হতে পারে? জীবনের করুন বাস্তবতার এমন মুখোমুখিতে যদি কেউ এসে বলে- “আপনার ত্রাণের প্যাকেটটি নিন”। সত্যিই তখন মনে হবে যেন স্বর্গ থেকে কেউ এসে আহার দিয়ে গেল। হোক না সেটা এক অথবা দুই বেলার। মানুষ মানুষের জন্য। তিনি বলেন, সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
আবু আলী, ঢাকা
সিনিয়র জার্নালিস্ট
২৬শে এপ্রিল ২০২০