আজ ১৭ মে ত্রিপুরার সর্বশেষ মহারাজা,আধুনিক ত্রিপুরার স্বপ্ন দ্রষ্টা,প্রগতিশীল ,লোকপ্রিয় ব্যক্তিত্ব মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুরের প্রয়ান দিবস।রাজ্য শাসন নৈপুণ্যে, প্রজাবাৎসল্যে, সংগীত,নাটক,কাব্য কুশলতায়, শিক্ষানুরাগে, বিদ্যাপত্তনে,আধুনিক স্হাপত্য শিল্পজ্ঞানে সিদ্ধ হস্ত মহারাজার নানা অবদানে ক্রমপর্যায়ে গড়ে উঠেছে আধুনিক ত্রিপুরার ভিত্তি-বেদিকা। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে মহারাজা বীরেন্দ্র কিশোর মাণিক্য বাহাদুর লোকান্তরিত হলে যুবরাজ বীর বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার সিংহাসনে উপবেশন করার কথা।কিন্তু যুবরাজ নাবালক ছিলেন বলে তখনই রাজা হতে পারেননি।।তখন তাঁর বয়স মাত্র ষোল বছর।এ কারণে একটি শাসন পরিষদ শাসন কার্য পরিচালনা করে।উনিশশ সাতাশ সনে বাংলার গভর্ণর তাঁকে আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজা হিসেবে ঘোষণা করেন।
সাহিত্যসেবী রূপেও তিনি পূর্বভারতে খ্যাতি লাভ করেন।কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনে তাঁকে উদ্বোধক হিসে আমন্ত্রণ জানানো হয়।উনিশশ একত্রিশ সনে কলকাতা টাউনহল অঙ্গনে অনুষ্ঠিত"রবীন্দ্র শিল্প প্রদর্শনী ও মেলা"র উদ্বোধন করেন মহারাজ বীরবিক্রমকিশোর মাণিক্য বাহাদুর।কলকাতায়"ত্রিপুরা হিত সাধনী সভা ভবন"এর ভিত্তি প্রস্তর তিনিই প্রোথিত করেন।তিনি ভারতীয় রাজন্য বর্গের সংগঠন "চেম্বার অব প্রিন্সেস"এর গুরুত্ব পূর্ণ সদস্য ছিলেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কৈশোর কালেই তাঁর "ভগ্ন হৃদয়" কাব্যপাঠে মুগ্ধ মহারাজা বীরচন্দ্র মাণিক্য সবার আগে রাজকীয় মর্যাদায় কবি স্বীকৃতি দেন।বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর বিশ্বকবির অশীতিতম জন্মজয়ন্তীর পুণ্য লগ্নে দিলেন "ভারত ভাস্কর"উপাধি।বিশেষ ভাবে আহূত রাজ দরবারে কবিগুরুকে এই সম্মান দেওয়া হয়।রাজ প্রতিনিধি মানপত্র,রাজার উপহার শান্তিনিকেতনে কবিসার্বভৌম রবীন্দ্রনাথের হাতে তুলে দেন।পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর সে মানপত্র পাঠ করে শোনালে অসুস্হ কবিগুরু আবেগদীপ্ত কন্ঠে ত্রিপুরার চারজন রাজার সাথে সুখে-দুখে ষাট বছরের নিবিঢ়সম্পর্কের কথা উচ্চারণ করে কায় মনোবাক্য মহারাজ বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য বাদুরকে আশীর্বাদ করেন।কবির জীবদ্দশায় এটাই ছিল কবির শেষ জন্মজয়ন্তী।
মহারাজ বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুরের আমলেই নিমিত হয় আগরতলা বিমান বন্দর,যা আজ মহারাজা বীরবিক্রমের নামাঙ্কিত।ভারতের স্বাধীনতালাভ ,দেশ ভাগের বলি হয়ে ত্রিপুরার বুকে আছড়ে পরলো উদ্বাস্তু স্রোত।তিনি সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়ে আশ্রয়দিলেন।তাঁ রাজনৈতিক দূরদর্শিতা লক্ষ্য করা গেছে ত্রিপুরার ভারতভূক্তির সিদ্ধান্তে।উনিশশ সাতচল্লিশ সনের সতের মে অসুস্হ অবস্হায় তাঁর জীবনাবসান ঘটে। তখন যুবরাজ কিরীট বিক্রম কিশোর নাবালক। মহারাণি কাঞ্চন প্রভা দেবীকে সভাপতি করে গঠিত হয় কাউন্সিল অব রিজেন্সি।মহারাজার ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে মহারাণি উনিশশ উণপঞ্চাশ সনের পনের অক্টোবর ত্রিপুরাকে ভারত ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।অবশেষে ত্রিপুরা ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিনত হয়।
ডঃ আশিস কুমার বৈদ্য
প্রাবন্ধিক ও গ্রন্থকার
ত্রিপুরা
ছবিঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট
১৭ই মে ২০২০