বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস নিয়ে মনে হচ্ছে, অনেকটা চোর পুলিশ খেলা চলছে দেশে। কারণ, এই বলা হচ্ছে এটা এমন কোন রোগ নয়, অনেকটা শর্দি কাঁশির মত, এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী। আবার অন্যদিকে লকডাউন দিয়ে পুরো দেশবাসীকে ঘরে ঢুকানোর চেষ্টা। ক্ষমতাশীন দলের সংশ্লিষ্টরা বলছেন করোনার চেয়ে আমরা অনেক শক্তিশালী। এমন সব উদ্ভোট কথায় করোনা মোটেও ভয় পেয়ে দেশ থেকে পালায়নি। উল্টো যেনো আরো বেশী করে আঁকড়ে ধরতে চাইছে দেশের মানুষদের।
যারা এই ভাইরাসকে অন্য যে কোন রোগের মত হাল্কা ভাবে মনে করেছেন তারা ইতিমধ্যেই অনেকটা বুঝতে পেরেছেন যে এটাকে পৃথিবীর শক্তিধর দেশগুলোতে মহামারী বা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাথে তুলনা করা হচ্ছে। এতদিন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্তা ব্যক্তিগণ এমন সব বক্তব্য দিয়ে দেশবাসীর কাছে সরকারকে হাসির পাত্রে পরিণত করেছেন তাতে সত্যিই অবাক হয়েছি। চোর পুলিশ খেলার কথা বলছি এজন্য যে, সকালে বলা হয়েছে এক ধরনের কথা আবার বিকালে বলা হয়েছে ভিন্ন সুরে আরেক কথা। আবার দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট এক মন্ত্রণালয়ের সাথে আরেক মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যের কোনও মিল নেই।
দেশের স্বাস্থ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থমন্ত্রী এবং স্বাস্থ অধিদপ্তর এগুলো একই সুতোয় গাঁথা। তারপরেও করোনা ভাইরাস সংক্রমনের শুরু থেকে দেখছি তাদের কারো সাথে কারো আলোচনার বিষয় মিল নেই। দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই করোনা ভাইরাস নিয়ে নিত্য যে ধরনের তথ্য উপাত্ত বা বক্তব্য দিয়ে তামাশা করছিলেন তাতে মনেই হতে পারে তিনি মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ রাখছেন না বা মন্ত্রণালয় তাঁকে সহযোগিতা করছেন না। ফলে সাধারণ মানুষ তাকে এই দুর্যোগপূর্ণ মূহুর্তে তাঁকে অযোগ্য মনে করে পদত্যাগ পর্যন্ত করার কথা বলে আসছিল। প্রধানমন্ত্রী নিজেই যেখানে দেশের এই ক্লান্তি লগ্নে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে আহবান করছেন, সেখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে যে, সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসাদের অসহযোগিতা করা হচ্ছে। শুনতে কষ্ট হলেও সত্য যে, বঙ্গবন্ধুর সময়কালে সরকারের দেয়া জমিতে প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে মানুষের সেবা দানের লক্ষে এগিয়ে এসেছে। এই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র অল্প খরচে যে কিট তৈরী করেছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে। অথচ এই কিট নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ঘুরে সরকারীভাবে নেবার আবেদন করার পর যে ধরনের আচরণের কথা মিডিয়াতে দেখেছি বা শুনেছি, তা অন্তত এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে অনাকাঙ্ঘিত মনে হয়েছে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা একজন মুক্তিযোদ্ধা, দেশ প্রেমিক কী না এর প্রমাণ দেবার প্রয়োজন এ সময় অন্তত নয়। তিনি হতে পারেন ভিন্ন মতের আদর্শে রাজনীতি করছেন। হতে পারে তাঁর ব্যবসায়ীক কর্ম পরিকল্পনায় কোন ধরনের সমস্যা রয়েছে কিন্তু এখন তো এসব দেখার দরকার ছিল না। এখন মূল কাজ হবে দেশের মানুষের জীবন বাঁচানো। যা ডাঃ জাফরুল্লাহ প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সারা দিয়েই এগিয়ে এসেছিলেন। দুঃখ জনক হলেও সত্য যে, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে তাঁর নিরাশ হবার কথা পাবলিকলি গণ মিডিয়ার সামনে বলতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁর কথা যদি সত্য হয়, তাহলে বলবো, এমনটা অন্তত সংশ্লিষ্টদের করা ঠিক হয় নি।
প্রকাশ্যে তিনি এবং তার সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ যেখানে চ্যালেঞ্জ করে কথা বলেছেন সেখানে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতিপক্ষ হয়ে কেবল রক্ষণাত্মক কথাই বলতে শোনা গেছে।
পদ্ধতিগত সমস্যার কথা বলা হলেও, দেশের মানুষ যদি বাঁচাতে হয় তাহলে এত গড়িমসি কেন? এসময় পদ্ধতিগত কারণ দেখার আগে মানুষের জীবন বাঁচানো যে ফরজ তাই আরো আন্তরিক হওয়া দরকার ছিল।
সামাজিক সাইট গুলোয় ডাঃ জাফরুল্লাকে নিয়ে অনেকেই অনেক কথা লিখেছেন, শুরুতে তার আবিষ্কার গ্রহণ না করার পিছনে তার রাজনৈতিক মতাদর্শ বা ভিন্ন পরিচয়ের কথা বলা হয়েছে।আমার মতে, দলের চেয়ে দেশ বড়, দেশের চেয়ে মানুষ। তাই যদি হয়, তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেভাবে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান করেছেন তাতে কি কেবল সরকারী দলের সদস্য বা নেতা কর্মীদের কথাই বলা হয়েছে?
তা যদি নাই হয়, তাহলে এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মহামারী থেকে পরিত্রাণ লাভ করা জরুরী মনে করলে কারো কোন ব্যক্তি পরিচয় না খুঁজে বরং মানুষের জন্য কাজ করার মানষিকতা যাঁদের রয়েছে তাদের সবাইকে নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর হাতকে আরো শক্তিশালী করা খুবই জরুরী।
আমার বিশ্বাস আজ বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে দেশের এই দুর্যোগপূর্ণ মূহুর্তে এমনটি হতো না। এই বিশ্বাসটি আমার তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ে মনে হয়েছে। অবশেষে যেহেতু গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তৈরী কিট সরকার নিতে সম্মত হয়েছেন তাহলে এত নাটকের কি দরকার ছিল? কি ছিল কাল ক্ষেপণের?
এই মূহুর্তে বিরোধী দলের নেতা কর্মী কেউ সরকারকে বিপদে ফেলবে না, যত না সরকারের সংশ্লিষ্টরা ফেলছে। এ সময় সবাইকে নিয়ে কাজ করলে দেশের মানুষ অতীত ভুলে গিয়ে সরকারের সকল কাজে সহযোগিতাই করবে বলে আমার ধারণা।
বিগত দিন গুলোয় ডাঃ জাফরুল্লাহকে নিয়ে দেশের মিডিয়ায় যে ধরনের প্রচার-অপপ্রচার হয়েছে তাতে মনেই হয়েছে নতুর রাজনীতিকরনে করোনা ভাইরাস যেন এখন সরকারের সংশ্লিষ্টদের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
এথেকে দ্রুত বেড়িয়ে আসতে না পারলে দেশবাসীর যেমন ক্ষতি হবে, দেশের ক্ষতি হবে তেমন, অনেক। সকলের শুভ বুদ্ধি জাগ্রত হোক সেই প্রত্যাশা করছি।
পি.আর. প্ল্যাসিড
জাপান প্রবাসী লেখক-সাংবাদিক
৫ই মে ২০২০
পি.আর. প্ল্যাসিড
জাপান প্রবাসী লেখক-সাংবাদিক
৫ই মে ২০২০