সন্ধ্যায় জোনাকি পোকা দেখা হয়না সেই কতোদিন উঠোনে ময়লা কাঠের বাক্সভর্তি সাপ, কতোদিন শোনা হয়না কোঁকড়োনো চুলের লম্বা গোফওয়ালা সাপুড়ের বীণ। এখানে কিছুই দেখা হয়না, দেখা যায় না, আকাশের অর্ধেকটা ঢেকে রাখে উঁচু দালান বেতের ঝোপের মতো ঘন এ কংক্রিটের জংগলের কোথাও নরম নেই। নেই হলুদ প্রজাপতি, হলুদ ঝিঙে ফুল, নেই সবুজ, নদী, জল, রমণীর লম্বা চুল। কোনকিছুই না থাকা এ শহর থেকে ছুটি নিবো অচিরেই, এ শহরে আমার আর কিছুই ভালোবাসার নেই। কুমড়ো ফুলে হলুদ প্রজাপতির পরাগায়ন দেখিনা কতোকাল সাদা কাশফুল, সাদা বক, সাদা লাউফুল, কোনকিছুই দেখা হয়না এখানে, প্রিয় পূর্ণিমা কখন কবে যায় বুঝিনা, সে নরম আলোয় নিজেকে কতোকাল দেখিনা। কাচের বাক্সভর্তি চুড়িওয়ালা দেখিনা, তেলমাখা চুলে লাল ফিতেয় বেণী করা কিশোরী দেখিনা, দেখিনা উঠোন, কাদা-পানি, বন, হাওয়াই মিষ্টি, ফেরিওয়ালা জন, কোনকিছুই দেখা হয়না, দেখা যায়না এখানে এ শহর থেকে পালিয়ে যাবো খুব সহজেই, নিমিষেই, এ শহরে আমার আর কিছুই ভালোবাসার নেই। এখানে কালো কাকেরাও যেনো ফর্সা হয়ে গেছে ইটের দেয়াল ঘেঁষে পরে থাকা মানুষ বাসের তিব্র শব্দে যেনো ঘুমের স্বপ্ন আরও আটেঁ। দু'হাত ভরে নর্দমার নোংরা পানি খাওয়া মানুষ, পথের দুর্গন্ধ ময়লার ভাগারে হাত ঢুকিয়ে খাবার টেনে খাওয়া মানুষ, সিমেন্টের পোলের ভিতরে সংসার পাতা মানুষ, অভাবে একশো টাকায় যৌবন দেয়া পথে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ, অভিজাত হোটেলে মাল্টার মতো সুন্দরী রমণীর শরীর বেচা মানুষ, অজান্তে মা হওয়া পথের নির্বোধ পাগলীর মতো মানুষ, বিকলাঙ্গ, ক্ষুধার্ত, অসহায়, অন্ধো, উলঙ্গ মানুষ, মাংস পচে যাওয়া শরীর, পথে উল্টে পরে থাকা মানুষ, শুধু মানুষ, মানুষ, মানুষ আর মানুষ, এতো মানুষের ভিরে আমি অমানুষটা আর পারছিনা কিছুতেই শহর জুড়ে এ নির্মমতা ছেড়ে আমি ছুটি নিবো অচিরেই, এ শহরে আমার আর কিছুই ভালোবাসার নেই......।
- মানিক মনোয়ার,বাংলাদেশ
৩রা অক্টোবর ২০২০