Type Here to Get Search Results !

৫৫ বছর পর ফের চালু হচ্ছে চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেলযোগাযোগ ॥ উদ্বোধন করবেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী

আবু আলী, ঢাকা,আরশিকথা ।।

দীর্ঘ ৫৫ বছর পর ফের ভারত-বাংলাদেশের (হলদিয়াবাড়ী-চিলাহাটি) রেল যোগাযোগ চালু হচ্ছে। আগামী ১৭ ডিসেম্বর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রেল যোগাযোগ উদ্বোধন করবেন। এ নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে আনন্দের সীমা নেই। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী থেকে ৪৪ কিমি. এবং ডোমার উপজেলা থেকে ১৮ কিমি. উত্তরে সীমান্ত স্টেশন চিলাহাটি। চিলাহাটি থেকে ভারতের হলদিবাড়ী দূরত্ব প্রায় ১১ কিমি.। ব্রিটিশ আমলে ১৮৬২ সালে দর্শনা থেকে জগতি পর্যন্ত ৫৩.১১ কিমি. ব্রডগ্রেজ রেললাইন নির্মাণের মধ্যে দিয়ে এ অঞ্চলের রেলের যাত্রা হয়। ১৮৭৪ থেকে ১৮৭৯ সালের মধ্যে সাঁড়া (পাকশির কাছে) থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত মিটারগেজ এবং দামুকদিয়া থেকে পোড়াদহ পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইন নির্মিত হয়। ১৯০৯ সালে পোড়াদহ থেকে ভেড়ামারা পর্যন্ত দ্বৈত লাইনে রূপান্তর করা হয়। ১৯১৫ সালে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ চালুর মধ্যে দিয়ে দর্শনা-চিলাহাটি রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৪ সালে শান্তাহার থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত এবং ১৯২৬ সালে পার্বতীপুর থেকে চিলাহাটি মিটারগেজ রেললাইন ব্রডগেজে রূপান্তর করা হয়। এই সময় শিয়ালদহ ও শিলিগুড়ির মধ্যে শান্তাহার পার্বতীর চিলাহাটি হয়ে দার্জিলিং ও নর্থবেঙ্গল এক্সপ্রেস নামে দ্রুতগতির ট্রেন চালু করা হয়। রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই রুটটি তখন ব্যাকবোন হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু পরে লিংকটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুই দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী রেলওয়ের সেবা থেকে বঞ্চিত হয় এবং ব্যবসাবাণিজ্যে পিছিয়ে পড়ে। সরকার আন্তঃআঞ্চলিক যোগাযোগের মাধ্যেমে ব্যবসাবাণিজ্যে ও পর্যটন খাতের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাছে। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে আটটি ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টের মধ্যে চারটিতে রেলের সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। চিলাহাটি এ রেলপথে মংলা পোর্ট হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশ নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আমদানি ও রফতানি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগাযোগের অবকাঠামোর উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যবসাবাণিজ্য জোরদার করা হবে এবং ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে নতুন যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করবে বলে জানা গেছে। ১৯৬৫ সালের আগে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ট্রেন চলাচল চালু ছিল। চিলাহাটিতে ইমিগ্রেশন কাস্টম সমাপ্ত করে চিলাহাটি থেকে হলদিবাড়ীর মধ্যে একটি পার্সপোট ট্রেন যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া-আসা করত। ১৯৬৫ সালে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও পাসপোটধারী যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য উভয় দেশে কাস্টম ও ইমিগ্রেশন চালু ছিল, যা ২০০৪ সালে ভারত বন্ধ করে দেয়। চিলাহাটি রুটে পার্সপোটধারী যাত্রীদের যাতায়াত শুরু হয় ১৯৫৩ সাল থেকে। এর অনেক পরে বুড়িমারি, হিলি, বিরল ও বাংলাবান্ধা চালু হয়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ চিলাহাটি হলদিবাড়ী রুট ১৪ বছর ধরে অজ্ঞাত কারণে বন্ধ হয়ে আছে, যা আগামী বছরের ২৬ মার্চ আবার চালু হতে পারে। ২০১৫ সালে নয়া দিল্লিতে অনুষ্ঠীত ওহফরধ-ইধহমষধফবংয ওহঃবৎ-এড়াবৎহসবহঃধষ জধরষধিু গববঃরহম (ওএজগ) চিলাহাটি-হলদিবাড়ীর মধ্যে রেললাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ প্রকল্পে প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এই প্রকল্পে কাজ করছে। এই প্রকল্পের মূল কাজ রেলপথ নির্মাণ ৬.৭২৪ কিমি., নতুন রেলপথ নির্মাণ (লুপলাইন) ২.৩৬ কিমি. মাইনার ব্রিজ, সাতটি লেবেল ক্রসিং গেট, দুইটি কালার লাইট সিগন্যালিংসহ টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম প্রবর্তন, একটি স্টেশন নির্মাণ। আনুষঙ্গিক অন্যান্য কার্যক্রমও প্রায় ৮০ শতাংশ সমাপ্তির পথে। চিলাহাটি-হলদিবাড়ীর মধ্যে রেলযোগাযোগ অত্র এলাকার তথা নীলফামারীর মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। এই রেলপথ যোগাযোগ এই এলাকার মানুষের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নতি বয়ে আনবে, হাজারো শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে, ব্যবসাবাণিজ্যে প্রসার লাভ করবে। উন্নতি হবে চিলাহাটি এলাকার, উন্নতি হবে সর্বস্তরের জনসাধারণের। তাই চিলাহাটিবাসীরা অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন আগামী ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত রেলযোগাযোগ দিনটির।
 

আরশিকথা বাংলাদেশ সংবাদ

১৫ই ডিসেম্বর ২০২০

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.