Type Here to Get Search Results !

অবাক পৃথিবীর আশ্চর্য গল্প ঃ শমিতা চক্রবর্তী, মাস্কাট, ওমান

বিশ্বে শান্তি বিরাজ করুক এই কথা সব ধর্মে বলা আছে। প্রত্যেক যুগে আবির্ভাব হয়েছে মহামানবের , এবং তাঁরা তাঁদের কাজ সম্পূর্ণ করেছেন এবং পরবর্তী প্রজন্মের হাতে দিয়ে গিয়েছেন দায়িত্ব, মানুষের মধ্যে তাঁদের বানী ছড়িয়ে দেবার জন্য ।ধরাধামে স্বামী বিবেকানন্দের দান আমাদের কাছে পরিচিত। বৃহত্তর জীবনে যখন স্বামীজীকে দেখি তখন মনে হয়ে বাঙ্গালী জন্ম আমার সার্থক।

 

 এ কথা কেন বলছি? তা শুনলে আপনিও অবাক হবেন।বিদেশের মাটিতে যখন আপনি স্বামী বিবেকানন্দের স্টাচু দেখবেন, তখন তো শিহরণ লাগবেই।পূর্ব কানাডার নভাস্কচিয়ার রাজধানী হালিফাক্সের কর্ক রোডে আচমকা ট্যাক্সি থামিয়ে নেমে পড়লাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না কি দেখছি। সামনে রাস্তার ধারে স্বামীজীর মূর্তি।  দেখে প্রণাম জানালাম। গর্বে মন ভরে গেল।খুব অবাক হয়েছিলাম। তাই কিছুটা উৎসাহের সাথে মূর্তি স্থাপনের উদ্দেশ্য ও কারণ খোঁজার বিষয়ে তৎপর হয়ে উঠলাম। হাতে সময় স্বল্প হলে মনে হল আমার মত বহু বাঙ্গালী আছেন যারা এই কথা জানেন না। ভারতীয় হয়ে আমাদের জানা উচিত বলে বিবেচনা করে এই লেখা লিখতে শুরু করলাম। 

 

এই হালিফাক্স শহরের ভারতীয় হিন্দুদের মন্দির কর্ক রোডে অবস্থিত। অপূর্ব মন্দির।এখানে মন্দিরটি বাড়ির মধ্যে অবস্থিত। কি পরিষ্কার, স্বচ্ছ ও সুন্দর। নোটিশ বোর্ড এ সমস্থ নিয়মাবলী লেখা। বিভিন্ন প্রকারের ক্লাস হয়ে এই মন্দির প্রাঙ্গণে যেমন – ভারতীয় গান, নাচ ও জলসা। ভারতীয় সংস্কৃতিকে বিদেশে প্রচার ও প্রসার করার দায়িত্ব এই গোষ্ঠী গ্রহণ করেছেন। ভারতীয় নানা অনুষ্ঠান, বিবাহের আয়োজন এবং নানা পূজা-অর্চনার মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতিকে এগিয়ে রেখেছে এই হিন্দু বেদান্ত আশ্রম মন্দির। অর্থ দান, বিভিন্ন ভাবে দুঃস্থদের সাহায্য ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত থাকে এই বেদান্ত আশ্রম সোসাইটি মন্দির।শুধু এই নয়, ভারতীয় ছাত্র ছাত্রীদের রবিবার দুপুরে ভোগ গ্রহণ এবং সঙ্গে করে এক বাক্স ভোগ নিয়ে যাবার ব্যবস্থাও আছে।  

এই মন্দিরের সামনে রাস্তার পাশে স্বামীজীর মূর্তি। এই মূর্তি তৈরী হয় আমাদের পশ্চিমবঙের কলকাতা শহরের নরেন্দ্রপুরে রামকৃষ্ণ মিশনে। সন্মানীয় বিশ্বময়ানন্দ মাহারাজজী এই মূর্তি তৈরী করেন।

 

২০০৬ সালে ১৭ই সেপ্টেম্বর হালিফাক্সে ফাইবার গ্লাসের তৈরী স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি স্থাপন করার জন্য ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক প্রবীর বসুর কথা মনে রাখার মত। তাঁর উদ্যোগেই এই বিশাল কর্মকাণ্ড শুরু হয়ে। উত্তর আমেরিকাতে স্বামীজীর একটিমাত্র মূর্তি যা সম্পূর্ণভাবে সবার সম্মুখে রয়েছে, খোলা রাস্তার পাশে। চিকাগোতেও স্বামীর মূর্তি আছে, তবে মন্দিরের ভিতরে ও প্রাঙ্গণে। 

  

১১ই সেপ্টেম্বর ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে চিকাগো শহরে সারা বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে স্বামীজীর ধর্ম নিয়ে ভাষণে তিনি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে মতামত দেন।বিশ্বের সবচেয়ে পুরানো হিন্দুধর্মের মাহাত্ম্য পশ্চিমে প্রচার করেন। ভারতীয় আচার অনুষ্ঠানের মাহাত্ম্য ধীরে ধীরে পশ্চিমে ছড়াতে থাকে। তাঁর ১০০ বছর পর সারা বিশ্ব ৯/১১র ভয়ানক বিভিষিতা পরিলক্ষিত করে।ধর্মান্ধ মানুষ সেই  ১১ই সেপ্টেম্বর কে অবলম্বন করে। ২০০১ সালের  দুঃখজনক ঘটনা কে স্মরণে  রেখে কানাডার হালিফাক্সের হিন্দু গোষ্ঠী ঠিক করেন তাঁরা শান্তির বানী ছড়িয়ে দেবেন। বেদান্ত আশ্রমের সামনের বাগানে  স্বামীজী এই মূর্তি উন্মমোচন হল শান্তির উপাসক হিসাবে ।পৃথিবীর বহু মানুষ স্বামীজীর  বানী শোনেননি এবং জানেনই না।তাই বিদেশের মানুষের কাছে স্বামীজীকে চেনানোর এই অমূল্য সুযোগ বেদান্ত আশ্রম গ্রহণ করে আনন্দিতই হলেন। ভারতের মমতাময়ী জগন্মাতার যেন নবজন্ম লাভ হল। বিদেশী মানুষের খুব কাছের ও মনের মানুষ হয়ে গেলেন স্বামীজী এবং তাঁর তাঁর বানী। দেখতে দেখতে পোনের বছর কেটে গেল। ঝড়, বাদল, তূষারপাতের সাথে সাথে ঋতূর পরিবর্তনকে সাক্ষী রেখে ধীরেধীরে ফাইবার গ্লাসের মূর্তির খয় দৃষ্ট হল।


 

২০১৬ সালে মে মাসে প্রথম মূর্তি পরিবর্তন করে আবার নতুন মূর্তি স্থাপন করা হয়ে।এই মূর্তি উন্মোচন করেন ভারতবর্ষের অন্দ্রপ্রদেশ রাজ্যের গুনটুর শহরের  সারদা মঠ-মিশনের প্রেসিডেন্ট ভবানীপ্রানা প্রভাজিকা মহাশয়া। ভারতীয় হাই কমিশনার মহাশয়, কানাডিয়ান পার্লামেন্টের স্পিকার ও হালিফাক্সের মেয়রের মত বিশিষ্ঠ ব্যক্তিত্বদের সমাবেশে এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।  

হালিফাক্সে স্বনামধন্য প্রফেসর প্রবীর বসুর পরিবারের আমন্ত্রণে তাঁদের বাড়ী যাবার সুযোগ ঘটে। তাঁর মত অমায়িক ব্যবহার ও স্নেহ খুব অল্প মানুষের কাছে পেয়েছি। তাঁর সাথে কথা ও গল্পের পর নিজেকে ধন্য মনে করেছি। তাঁর এই কর্মকাণ্ডের কথা সমগ্র বাংলার তথা ভারতবর্ষের মানুষের জানা উচিত বলে মনে করি।তাঁর বাড়ীতে রয়েছে ঠাকুর রামকৃষ্ণের ও সারদা মায়ের একচালার মন্দির, যা দেখে মোহিত হয়ে যেতে হয়ে।কানাডায় এত দূরে এসে এত সুখ পাব তা ভাবিনি। তাঁরা ভারতীয় বহু ছাত্রদের সাহায্য করেছেন, বহুভাবে। তাঁর মহৎ উদ্দেশ্য – বিশ্বে শান্তি আসুক এবং নতুন প্রজন্ম শান্তির বাহক হক। বিদেশে শান্তির বানী বাহক ঠাকুর রামকৃষ্ণের একান্ত উপাসকের সান্নিধ্য অপূর্ব ও ঐশ্বরিক। 


 









শমিতা চক্রবর্তী 

মাস্কাট, ওমান 

১২ই জানুয়ারি ২০২১ 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.